হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
হুগলি লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলগা মন্তব্যে ‘রাশ’ টানতে হুগলিতে তাঁর সঙ্গে সর্ব ক্ষণের প্রতিনিধিদল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব। ভোটের প্রচারে নামার পর থেকেই রচনার নানা মন্তব্য নিয়ে সমাজমাধ্যমে মিমের ঝড় বইছে। লাগাতার এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন তৃণমূল নেতৃত্ব।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হুগলি আসন হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। দু’বারের সাংসদ রত্না দে নাগকে হারিয়ে চমক দিয়ে জয়ী হয়েছিলেন অভিনেত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। এ বারের লোকসভা ভোটে সেই আসন ফিরে পেতে আরও এক অভিনেত্রীর ওপরই বাজি ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১০ মার্চ ব্রিগেড সমাবেশে হুগলি লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে অভিনেত্রী রচনার নাম ঘোষণা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন আলোচনা শুরু হয়েছিল, ছোট পর্দার ‘দিদি নম্বর ওয়ান’কে হুগলিতে প্রার্থী করে ‘মোক্ষম চাল’ দিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু প্রচারের শুরু থেকেই একের পর এক মন্তব্য করে নানা বিতর্ক তৈরি করছেন রচনা। সমাজমাধ্যমে তাঁর বক্তব্য নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা মিম। যা ভোটের প্রচারে তৃণমূলের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভাবনাচিন্তা করে তাই রচনার বক্তব্যে ‘রাশ’ টানতে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব। আগামী ২০ মে হুগলি লোকসভায় নির্বাচন। ওই প্রতিনিধিদল কলকাতা থেকে হুগলি যাবে। হুগলি লোকসভায় ভোটের প্রচার শেষ হচ্ছে ১৮ তারিখ সন্ধ্যায়। সেই সময় পর্যন্ত প্রচারে রচনার সর্ব ক্ষণের সঙ্গী হবে তারা। কোন প্রচারে কী বলতে হবে, কোন কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে, কোন কোন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না ইত্যাদি বিষয় ছাড়াও লোকসভার প্রার্থীকে কী কী ‘সতর্কতা’ নিতে হবে, সেই বিষয়েও রচনাকে পরামর্শ দেবে তারা। এমনকি, তাঁর মন্তব্য নিয়ে সমাজমাধ্যমে কোনও সমালোচনা তৈরি হলে রচনা কী ভাবে তার মোকাবিলা করবেন, তা নিয়েও পরামর্শ দেবে ওই প্রতিনিধিদল।
বিতর্কের সূচনা রচনার প্রচারের প্রথম দিন থেকেই। হুগলি লোকসভা এলাকার বিভিন্ন কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আকাশ কালো হয়ে যেতে দেখছেন তিনি, রচনার এমন মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা এবং আলোচনা শুরু হয়। সেই বক্তব্য নিয়ে মিম তৈরি করা হতে থাকে। তার জবাব দিতে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিয়ো ‘শেয়ার’ করেন রচনা। দূরবর্তী চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বেরোনো দেখিয়ে নিজের মন্তব্যের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। পরে জানা যায়, সেই ধোঁয়া বার হচ্ছিল একটি রাইস মিল থেকে। তা নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়। এর পর হুগলি জেলার দই-মিষ্টির উৎকর্ষ বোঝাতে গিয়ে স্থানীয় গরুদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মন্তব্য করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘কর্মদক্ষতা’ বোঝাতে গিয়েও তাঁর মন্তব্য তৃণমূলের একাংশের কাছে ‘অস্বস্তিকর’ পর্যায়ে পৌঁছয়। ধারাবাহিক এমন ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তার পরেই প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ওই প্রতিনিধিদল রচনার সঙ্গী হবে বলে শাসক শিবির সূত্রের খবর।