—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সন্দেশখালির সিবিআই তদন্ত নিয়ে মামলায় হাই কোর্টের রায়ে এখনই হস্তক্ষেপ করল না সুপ্রিম কোর্ট। আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত এই মামলার শুনানি মুলতুবি রাখল শীর্ষ আদালত। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবার এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
সন্দেশখালির ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য। রাজ্যের পাশাপাশি শীর্ষ আদালতে ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেছেন রাজ্য পুলিশের আইজি, জেলা পুলিশ সুপার। মামলা করেছে স্থানীয় থানাও। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চে রাজ্যের করা সেই মামলারই শুনানি ছিল।
মামলার শুনানি চলাকালীন রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির সওয়াল ছিল, এই মামলা সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং নথি রাজ্যের হাতে এসেছে। ফলে, মামলাটি ২-৩ সপ্তাহের জন্য মুলতুবি রাখার আবেদনও তিনি শীর্ষ আদালতে জানান। এর পর বিচারপতি গাভাই এবং বিচারপতি মেহতার ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ রয়েছে। মহিলাদের উপর নির্যাতন, জমি কেড়ে নেওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে। এর পর জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই মামলার শুনানি মুলতুবি রাখার কথা জানায় সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। তবে শীর্ষ আদালত এ-ও জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে তদন্তপ্রক্রিয়া ব্যাহত করা যাবে না। তা যেমন চলছিল, চলবে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন দেখিয়ে হাই কোর্টে চলা মামলায় কোনও বাধা দেওয়া যাবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্দেশখালি মামলায় সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার! সন্দেশখালিতে জমি দখল এবং নারী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গিয়েছে রাজ্য। শুক্রবার সকালেই সন্দেশখালিতে আবার হানা দিয়েছিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্রে খবর, শাহজাহান শেখের এক ঘনিষ্ঠের আত্মীয়ের বাড়িতে প্রচুর অস্ত্র এবং বোমা মজুত রয়েছে, এমন খবর পাওয়া মাত্রই অভিযান চালানো হয়েছিল। তল্লাশি অভিযানে মিলেওছে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র। ঘটনাচক্রে, একই দিনে সন্দেশখালিকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য।
প্রসঙ্গত, সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে জমি দখল এবং নারী নির্যাতনের বহু অভিযোগ জমা পড়েছিল পুলিশের কাছে। সেই শাহজাহান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথমে সিবিআই হেফাজত এবং তার পরে ইডি হেফাজতে ছিলেন। আপাতত তিনি জেলে। গ্রেফতার হয়েছেন শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবু হাজরা-সহ শাহজাহানের শাগরেদরাও। অন্য দিকে, সন্দেশখালি নিয়ে বেশ কিছু মামলাও চলছে হাই কোর্টে। সম্প্রতি সেই মামলার শুনানিতেই সিবিআইকে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। গত ১০ এপ্রিল কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ সন্দেশখালি নিয়ে একটি ইমেল আইডি চালু করার নির্দেশও দেয়। যেখানে মূলত সন্দেশখালির মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ এবং জমি দখলের ঘটনার অভিযোগ জানানো যাবে এবং নির্যাতিতা মহিলাদের পরিচয় গোপন করা যাবে। আদালতের ওই নির্দেশের পরই ইমেল আইডি তৈরি করে সিবিআই। জেলাশাসকের মাধ্যমে এবং এলাকার সংবাদপত্রে নোটিস দিয়ে ওই ইমেল আইডি প্রচারের ব্যবস্থাও করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সিবিআই সূত্রে খবর, তার পর থেকেই সন্দেশখালি থেকে আসা লিখিত অভিযোগ উপচে পড়ে সিবিআইয়ের মেলবক্সে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব ইমেলে নারী নির্যাতনের অভিযোগও করা হয়েছে। এর বাইরেও নানা বিষয় নিয়ে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন সন্দেশখালির মানুষ। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সন্দেশখালি ঘটনার তদন্তভার সিবিআই নেওয়ার পর বেশ কয়েক বার সেখানে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংস্থার গোয়েন্দারা। সেই সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেই শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল রাজ্য। তবে এখনই সেই মামলা শুনল না শীর্ষ আদালত।