(বাঁ দিক থেকে) মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
লোকসভা ভোটে তারকা প্রচারকের তালিকা নির্বাচন কমিশনকে পাঠাল তৃণমূল। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ৪০ জনের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। তবে নাম নেই তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহানের। লোকসভা ভোটের প্রার্থিতালিকায় নাম ছিল না। এ বার তারকা প্রচারকের তালিকা থেকেও বাদ পড়লেন দু’জন। মঙ্গলবার তৃণমূলের তরফে ওই তালিকা নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো হয়েছে। যদিও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তারকা প্রচারকের তালিকায় মিমি এবং নুসরত দু’জনেরই নাম ছিল।
আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু লোকসভা নির্বাচন। জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। মহুয়া মৈত্রের নির্বাচনী কেন্দ্র কৃষ্ণনগর থেকে লোকসভার প্রচার শুরু করার কথা মমতার। ৩১ মার্চ নদিয়ার ধুবুলিয়ায় সভা করবেন তিনি। এই আবহে মঙ্গলবার তারকা প্রচারকের নাম ঘোষণা করল রাজ্যের শাসকদল। সেখানে দুই অভিনেত্রী তথা বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ মিমি, নুসরতের নাম নেই। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মিমি নিজেই জানিয়েছিলেন, যাদবপুরের সাংসদ পদ ছাড়তে চান তিনি। রাজনীতিতেও আর থাকতে চান না। কেন চান না, তা-ও বিশদে মমতাকে জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। বিধানসভায় গিয়ে তা নিয়ে দলনেত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। মিমি দাবি করেছিলেন, ‘দিদি’কে তিনি বলেছিলেন, দলনেত্রী বললে দলের হয়ে প্রচার করবেন। কিন্তু তারকা প্রচারকের তালিকা প্রকাশিত হতে দেখা গেল, সেখানে নাম নেই মিমির। তাই তিনি তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নামবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, নুসরতকে নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে অনেক দিন ধরেই অসন্তোষ। অভিযোগ, নিজের কেন্দ্রে যথেষ্ট সময় দেননি বসিরহাটের বিদায়ী সাংসদ। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সন্দেশখালি গত জানুয়ারি থেকে উত্তপ্ত। তখন এক বারও সেখানে যাননি নুসরত। সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে ‘দায়’ সেরেছেন। সন্দেশখালিতে ‘১৭৪’ ধারা জারি রয়েছে বলেই তিনি যাননি বলে জানিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমকে। ১৪৪ ধারাকে ‘১৭৪’ ধারা বলে সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন বসিরহাটের অভিনেত্রী সাংসদ। নির্বাচনে তাঁকে আর প্রার্থী করেনি তৃণমূল। এ বার তারকা প্রচারকের তালিকা থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে নুসরতকে।
লোকসভা ভোটে তৃণমূলের তারকা প্রচারকের তালিকা। — নিজস্ব চিত্র।
তালিকায় নাম রয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী মানস ভুইয়াঁ, অরূপ বিশ্বাস, ব্রাত্য বসু, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজার মতো নেতৃত্বের। আসন্ন ভোটে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের নামও রয়েছে তালিকায়। যেমন, শ্রীরামপুরের প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ঘাটালের দেব, বীরভূমের শতাব্দী রায়, যাদবপুরের সায়নী ঘোষ, হুগলির রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তর কলকাতার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দমদমের সৌগত রায়, বহরমপুরের ইউসুফ পাঠান, মেদিনীপুরের জুন মালিয়া, ব্যারাকপুরের পার্থ ভৌমিক, তমলুকের দেবাংশু ভট্টাচার্য, জয়নগরের প্রতিমা মণ্ডল। প্রাক্তন মুখপাত্র কুণাল ঘোষেরও নাম রয়েছে তালিকায়। নাম রয়েছে মমতা ঠাকুর, শান্তনু সেন, জয়প্রকাশ মজুমদারের। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নবীন এবং প্রবীণের মধ্যে ভারসাম্য রেখেই তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা। প্রবীণ তৃণমূল নেতার পাশাপাশি নবীনদেরও রাখা রয়েছে। তালিকায় নাম রয়েছে বিধায়ক অদিতি মুন্সি, মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী, রাজ চক্রবর্তী, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, অম্বরীশ সরকারের। নাম রয়েছে বিবেক গুপ্ত, সমীর চক্রবর্তী, মোশারফ হুসেন, স্নেহাশিস চক্রবর্তীর। তবে নাম নেই আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হার। তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, বয়সজনিত কারণেই শুধু নিজের কেন্দ্র আসানসোলেই প্রচার করবেন তিনি।