বাঁ দিক থেকে তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, সাকেত গোখলে, সুখেন্দুশেখর রায়, দোলা সেন, সাজদা আহমেদ। — নিজস্ব চিত্র।
‘আর্থিক সংবেদনশীল’ অঞ্চলে নজরদারির জন্য জেলা গোয়েন্দা কমিটি (ডিস্ট্রিক্ট ইন্টালিজেন্স কমিটি) গড়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। পশ্চিমবঙ্গের জন্য এই প্রথম বার। আশঙ্কা, লোকসভা ভোটের আগে বেশ কিছু অঞ্চলে ভিন্রাজ্য থেকে টাকা আসতে পারে। বেআইনি ভাবে টাকার লেনদেনও হতে পারে। এ সব বিষয়ে নজরদারির জন্য গঠিত কমিটিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল তৃণমূলের সংসদীয় দল। সোমবার সেই মর্মে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে স্মারকলিপিও জমা দিল তারা। স্মারকলিপিতে আধার বাতিল, চোপড়াকাণ্ডের উল্লেখও রয়েছে।
সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় তৃণমূলের সংসদীয় দল। ওই দলে ছিলেন সুখেন্দুশেখর রায়, প্রতিমা মণ্ডল, দোলা সেন, সাজদা আহমেদ এবং সাকেত গোখলে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের উদ্দেশে লেখা স্মারকলিপিতে জেলা গোয়েন্দা কমিটির প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে গঠিত জেলা গোয়েন্দা কমিটিতে কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়েরই তদন্তকারী সংস্থার সদস্যেরা থাকেন। পুলিশ, আয়কর দফতর, শুল্ক, জিএসটি, ইডি আধিকারিকেরা থাকেন ওই কমিটিতে। এ বার সেই কমিটিতে ইডির ভূমিকা নিয়েই স্মারকলিপিতে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল। তাঁদের জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব পাশ করিয়ে ইডি এবং সিবিআই প্রধানের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দু’বছর থেকে তিন বছর করা হয়েছে সেই মেয়াদ। ২০২২ সালে টাকা তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ)-তে তল্লাশি চালানো এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকারও দেওয়া হয়েছে ইডিকে। কোনও সরকারি অভিযোগ ছাড়াই তা করতে পারবে ইডি। স্মারকলিপিতে অভিযোগ জানানো হয়েছে, এর পরেই বেছে বেছে বিরোধী দলনেতাদের নিশানা করেছে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তে ইডির সাফল্য নিয়েও তোলা হয়েছে প্রশ্ন।
স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়েছে, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৫,৯০৬টি মামলা দায়ের করেছে ইডি। তার মধ্যে ১,১৪২টি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৫টি মামলার। অর্থাৎ ০.৪২ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি করেছে ইডি। তার মধ্যে ২৪টি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তৃণমূলের সংসদীয় দলের প্রশ্ন, এর পরও কেন ইডি রাখা হচ্ছে জেলা গোয়েন্দা কমিটিতে। তৃণমূলের একটি সূত্র জানিয়েছে, দলীয় নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা, ওই দলে ইডি থাকলে সুবিধা পেতে পারে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে ‘অবাধে’ চলতে পারে ‘টাকা নয়ছয়’। সে কারণেই স্মারকলিপিতে ইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূলের।
পাশাপাশি, স্মারকলিপিতে রাজ্যের কিছু বাসিন্দার আধার বাতিলের প্রসঙ্গও তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, ‘প্রযুক্তিগত সমস্যা’। রাজ্য যদিও তা মানেনি। রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিককে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ জানানোর মঞ্চ হিসেবে একটি পোর্টাল তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিবকে দ্রুত আধারের অভিযোগ জানানো সংক্রান্ত পোর্টাল চালু করে তার বিজ্ঞপ্তিও জারি করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ বার সেই নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করল তৃণমূলের সাংসদীয় দল।
স্মারকলিপিতে উঠে এসেছে চোপড়ার শিশুমৃত্যুর প্রসঙ্গ। সেখানে ধস নেমে মৃত্যু হয় চার শিশুর। বিএসএফ সেখানে নালা সম্প্রসারণের কাজ করছিল। সেখানেই ধস নেমে মৃত্যু হয়েছে শিশুগুলির। এই নিয়েও জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তৃণমূল। স্মারকলিপিতে আঙুল তুলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিএসএফের দিকে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১০০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রসঙ্গও তৃণমূল তুলেছে স্মারকলিপিতে। জানিয়েছে, সে সময় বাহিনীর রুট মার্চের সময় আতঙ্কিত হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল শীতলকুচিতে চার জনের মৃত্যুর প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। এ বিষয়ে সিআইএসএফের দিকে আঙুল তুলেছেন নেতৃত্ব। স্মারকলিপিতে লিখেছেন, ‘প্ররোচনা’ ছাড়াই গুলি চালানো হয়েছিল। তাঁদের আর্জি, আসন্ন লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী যাতে আইন মেনে কাজ করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করুক জাতীয় নির্বাচন কমিশন।