একাই প্রচারে বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। — নিজস্ব চিত্র।
সিএএ ফর্ম পূরণ করলেই নাগরিকত্ব হারাবেন মানুষ। একাই গাড়ি নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষকে বলছেন তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। মিথ্যা প্রচার চালানোর অভিযোগে বিধায়ককে গ্রেফতার করা উচিত প্রতিক্রিয়া হুগলির বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। লকেটের দাবি, সিএএ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার নয়, দেওয়ার আইন।
গত লোকসভা ভোটে বলাগড় বিধানসভায় লকেট যা লিড পেয়েছিলেন, তা হুগলি জয়ে সহায়ক হয়েছিল বিজেপির। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে যদিও হাওয়া তৃণমূলের পালে ফেরে। তার পর হুগলি নদী দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গিয়েছে। দেশ জুড়ে জারি হয়েছে সিএএ। যে আইন নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী ছিল বিজেপি। পদ্মশিবিরের ধারণা ছিল, সিএএ দিয়ে বাংলার ভোটে বাজিমাত করা যাবে। কিন্তু আইন জারি হওয়ার পর সিএএ-এর খুঁটিনাটি নিয়ে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে মতুয়াদের মনে। যদিও একেবারে শুরু থেকেই সিএএ বিরোধিতায় অনড় অবস্থান নিয়েছিল তৃণমূল। পথে নেমেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারের ভোটেও মমতার প্রতিটি রাজনৈতিক বক্তৃতার একটি অংশ জুড়ে থাকছে সিএএ প্রসঙ্গ। নেত্রীর মুখের সেই কথা নিয়েই এ বার গ্রামবাংলায় নিবিড় প্রচারে নেমে পড়লেন বলাগড়ের মনোরঞ্জন।
বিধায়কের দাবি, ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষদের মধ্যে তিনিও আছেন। তাঁর পরিবারও উদ্বাস্তু ছিল। তাই তিনি যতটা ভাল ভাবে সিএএর বিষয়টি মানুষকে বোঝাতে পারবেন, ততটা আর কেউ পারবেন না। দল তাই তাঁকেই দায়িত্ব দিয়েছে। তিনিই গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিজেপির পাতা ফাঁদে পা না দেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন। পাশাপাশি, প্রচার করছেন হুগলির তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনেও।
বিধায়ক বলেন, ‘‘আমরা দেশে ভোট দিয়ে সরকার তৈরি করছি। আমাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড সব আছে। তা হলে কেন সিএএ পোর্টালে ফর্ম পূরণ করতে হবে? ওখানে সই করা মানেই কিন্তু আমি বে-নাগরিক হয়ে গেলাম। তাই মানুষকে বোঝাচ্ছি, ওই ফর্মে কেউ সই করবেন না। সিএএ ফর্ম ফিলাপ করবেন না। করলেই অসমের মতো ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে।’’
পাল্টা মনোরঞ্জনকে আক্রমণের রাস্তায় গিয়েছে বিজেপি। লকেট বলেন, ‘‘উনি যে ধরনের কথাবার্তা বলছেন, তাতে ওকে এখনই গ্রেফতার করা উচিত। মানুষের কাছে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন। কমিশন ওকে এখনই গ্রেফতার করুক। মানুষকে মিথ্যা বলে হিংসা ছড়াচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওকে দিয়ে এ সব করাচ্ছেন। এর তীব্র বিরোধিতা করছি। সিএএ যাঁদের বোঝার, মতুয়া, নমশুদ্রেরা কিন্তু বুঝে গিয়েছেন। এনআরসি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য হয়নি।’’
সম্প্রতি মনোরঞ্জনকে নিয়ে হুগলি তৃণমূলে ব্যাপক জলঘোলা হয়েছিল। দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন তিনি। প্রকাশ্যেও চলে এসেছিল সেই কোন্দল। তারই প্রেক্ষিতে দল মনোরঞ্জনকে একটি প্রচারগাড়ি দিয়েছে। সেই গাড়ি নিয়ে একাই এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন ব্যাপারী। মানুষকে বোঝাচ্ছেন, কেন সিএএ ফর্ম পূরণ করবেন না।