মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ বাংলায় রাহুল গান্ধীর য়াত্রা নিয়েও। — ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরে পরেই ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল। গোটা দেশের ইতিহাসে কোনও একক দল হিসাবে কংগ্রেস ৪০০-র বেশি আসনে জয় পেয়েছিল। ৪০৪ জন সাংসদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইন্দিরা-পুত্র রাজীব গান্ধী। তার ঠিক ৩০ বছর পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে একেবারে উল্টো ফল। রাজীব-পুত্র রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে লড়াইয়ে কংগ্রেস জয় পায় মাত্র ৪৪ আসনে। দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হতে পারলেও লোকসভায় প্রধান বিরোধী দলের তকমা হারাতে হয় কংগ্রেসকে। দেশের লোকসভায় অতীতে এমন হয়নি। সেই ভোটেই জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর ১০ বছরের শাসনকালের পর তাঁকে হারাতে এই ২০২৪ সালে বিরোধীদের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে লড়তে চায় কংগ্রেস। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে সেই জোটের সঙ্গী তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন, কংগ্রেস এ বার ৪০টা আসনেও জয় পাবে কি না সন্দেহ!
দেশে যা-ই বোক, রাজ্যে তৃণমূল যে একা লড়বে, তা আগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন মমতা। একটা সময় পর্যন্ত কংগ্রেসকে দু’টি আসন ছাড়ার কথা বললেও এখন তৃণমূল রাজ্যের ৪২টি আসনেই প্রার্থী দিতে চায়। এই পরিস্থিতিতে দেশের বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় তৃণমূল থাকলেও বাংলায় জোটের অস্তিত্ব নেই। কারণ, সিপিএম তথা বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করলেও তারা তৃণমূলের সঙ্গে থাকছে না। এই পরিস্থিতিতে মমতার শুক্রবারের বার্তা ‘ইন্ডিয়া’র পক্ষেও ইঙ্গিতবহ। কারণ, নীতীশ কুমার বিজেপি শিবিরে চলে যাওয়ার পর এ বার জোটের প্রথম দল কংগ্রেস দেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন মমতা। শুক্রবার কলকাতায় তাঁর কেন্দ্র-বিরোধী ধর্নার মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘কংগ্রেস সারা দেশে ৪০টা আসন পাবে কিনা জানি না!’’ পাশাপাশিই, কংগ্রেসকে বিজেপির চ্যালেঞ্জ সামলানোর বার্তাও দেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘আগে নিজের জায়গা দেখাও! পারলে বারাণসীতে গিয়ে বিজেপিকে হারাও। রাজস্থান তোমরা জেতা জায়গা হেরেছ। মধ্যপ্রদেশে গিয়ে বিজেপিকে হারাও।’’
রাজ্যে বিবিধ ‘বাধা’ টপকে শুক্রবারেই রাহুলের ‘ন্যায় যাত্রা’ বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে ঝাড়খণ্ডে ঢুকেছে। সেই দিনেই রাহুলের যাত্রা নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘হঠাৎ করে দেখলাম বাংলায় চলে এল! এক বার বললও না, কোন রাস্তা দিয়ে যাবে। আমরা নাকি ইন্ডিয়ার পার্টনার! এক বার বলার প্রয়োজন মনে করল না। মিথ্যা কথা রটাচ্ছে। গাড়ির কাচ ভাঙল কাটিহারে, বলছে বাংলার ঘটনা। সব ফেক (ভুয়ো) কথা রটাচ্ছে। ফেক (ভুয়ো) ভিডিয়ো ছড়াচ্ছে।’’ তৃণমূল নেত্রী শুক্রবারও বলেছেন, ‘‘আমরা কংগ্রেসকে দুটো আসন ছাড়তে চেয়েছিলাম। ওরা কোনও কথা শোনেনি। তার পর থেকে কোনও আলোচনা হয়নি। আমিও রিজেক্ট করে দিয়েছি। কংগ্রেসকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তোমরা সারা দেশে ৩০০টা আসনে লড়ো। বাকি ২৪৩টা আসনে আঞ্চলিক দলগুলোকে লড়তে দাও। ওরা শুনল না। মাতব্বরি করল! এখন কী হল? ওরা যা করছে করুক, বাংলায় আমরা বিজেপিকে ঠেকাব। বিজেপিকে যে ঠেকাতে পারি, আগেও দেখিয়েছি, আবার দেখাব।’’