ঘাটালে তৃণমূল কার্যালয়ে বৈঠকে দেব। — নিজস্ব চিত্র।
এর আগে তাঁকে দেখা যেত খোলা গাড়ি থেকে। হুড়োহুড়ি করা মানুষের দিকে বাড়িতে দিতেন হাত। এখন দেব (দীপক অধিকারী) নিজেই নেমে আসছেন মাটিতে।
মূলত রোড শো ও পথসভা এবং তার সঙ্গে জুড়ে থাকা গাড়ি থেকে হাত বাড়িয়ে দেওয়া তারকা প্রার্থী এ বারে জোর দিচ্ছেন কর্মী বৈঠক ও ছোট ছোট সভায়। ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারের এই কৌশল বদল চোখে পড়ার মতো।
কেন এই কৌশল বদল?
তৃণমূলের অন্দরের খবর, কারণ একাধিক। দলের একটি অংশের মতে, দেব বুঝতে পেরেছেন, তৃতীয় বার প্রার্থী হওয়ার পরে শুধু রুপোলি পর্দার গ্ল্যামার দিয়েই ভোট বৈতরণী উতরে যাওয়া কঠিন। সুতরাং কর্মী বৈঠক, ছোট ছোট সভার মাধ্যমে তৃণমূল স্তরে সংগঠনের হাল বুঝে নিতে চাইছেন নেতা দেব। স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন। ঘাটালে প্রচারের ফাঁকে দেবকে বলতে শোনা গিয়েছে, “কর্মীরাই দলের সম্পদ। জেতানোর জন্য কর্মীরা সারা বছর বুথে লড়াই করছেন। পরিশ্রম করছেন। আমারও দায়িত্ব রয়েছে। কর্মীদের সঙ্গে বসে তাঁদের কথা শোনা মজাই আলাদা।”
দলের একটি অংশের বক্তব্য, ঘটনাচক্রে, কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক ও ছোট ছোট সভার উপরে জোর দিচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
তৃণমূলের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজনীতির অঙ্ক এত দিনে বুঝতে শিখেছেন দেব। ফলে বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘাটাল-সহ বেশ কিছু ব্লকে দলের অন্দরে যে টানাপড়েন চলছে, সেটা প্রথম প্রচারে আঁচ করতে তাঁর সমস্যা হয়নি। ঘাটালে দলের দুই গোষ্ঠী পুরো আড়াআড়ি বিভক্ত, দেব সেটাও জানেন। তা ছাড়া ঘাটালে প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলুইয়ের সঙ্গে তাঁর অম্লমধুর সম্পর্কও চর্চায় থাকে। তবে কোন্দল থাকলেও আগের দু’বারে দেবকে নিয়ে সরাসরি সংঘাত কোথাও ছিল না। এ বার অন্য ছবি। ঘটনাচক্রে প্রচারে গিয়ে এ বার দেবকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘তৃণমূলকে হারাতে পারে একমাত্র তৃণমূলই।’’
তৃণমূলের অন্য মহলের ব্যাখ্যা, কোথাও কোনও দ্বন্দ্ব নেই। দেব এমনিতেই সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখে চলেন। আগেও ভোট প্রচারে এসে সরাসরি কর্মী বৈঠক না করলেও যোগাযোগ রাখতেন। এ বারেও তা করছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন। তাতে কর্মীরাও উজ্জীবিত হচ্ছেন। দেব প্রতিবেদককে বলেছেন, “জিতি-হারি, সেটা বিষয় নয়। কিন্তু কত কর্মী গ্রামে নিজের মতো করে দলের হয়ে লড়াই করছে। কর্মী বৈঠকে অনেক তথ্যও আসছে। দলকে জানাচ্ছি। ভাল সাড়া পড়েছে।” ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট বলেন, ‘‘এত দিন পরে তৃণমূলের তারকাপ্রার্থীকে কেন কর্মী-বৈঠক করতে হচ্ছে? এ কিসের ইঙ্গিত।’’