প্রথম দু’ফার ভোটের হার বৃদ্ধি নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিল তৃণমূল। ছবি: পিটিআই।
প্রথম দু’ফার ভোটের হার বৃদ্ধি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার সেই বিষয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিল তৃণমূল। দলের তরফে রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এই চিঠিটি পাঠিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। মঙ্গলবার দেশের ৯৩টি আসনে তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ চলছে। ঠিক সেই সময় এই চিঠিটি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে তৃণমূলের তরফে। যদিও নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে সোমবার। ৩২ পাতায় তথ্যসম্বলিত এই চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা ভোটগ্রহণ নিয়ে প্রথম রিপোর্ট এবং পরে প্রকাশিত দ্বিতীয় রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। সঙ্গে তিনটি দাবি জানানো হয়েছে কমিশনের কাছে। প্রথম দাবিতে বলা হয়েছে, লোকসভাভিত্তিক কত ভোটদাতা, তা জানাতে হবে। দ্বিতীয় দাবিতে বলা হয়েছে, কত বৈধ ভোটার ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন তা-ও বিস্তারিত জানাতে হবে। সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ভোটারপিছু কত ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে।
লোকসভা নির্বাচনের প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় সারা দেশে কত শতাংশ ভোট পড়েছে, গত মঙ্গলবার সেই হিসাব প্রকাশ করেছিল নির্বাচন কমিশন। প্রথম দফার ভোট হয়ে যাওয়ার প্রায় ১১ দিন পর এই চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছিল। দেশে প্রথম দফার নির্বাচন হয় ১৯ এপ্রিল। সে দিন বাংলার তিন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। কমিশন সূত্রে ২০ তারিখ জানা গিয়েছিল, প্রথম দফায় দেশে ভোট পড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এর পর দ্বিতীয় দফার ভোট হয় ২৬ এপ্রিল। সে দিনও বাংলার তিনটি কেন্দ্রে ভোট হয়। কমিশন সূত্রে পর দিন জানানো হয়, দেশে গড়ে ভোট পড়েছে ৬০.৯৬ শতাংশ। কিন্তু গত মঙ্গলবার কমিশনের তরফে নতুন বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, প্রথম দফায় দেশে ৬৬.১৪ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দফায় ৬৬.৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ, আগে যা জানা গিয়েছিল, তার চেয়ে প্রায় ছয় শতাংশ বেড়ে গিয়েছে কমিশনের হিসাব। এই ভোট বৃদ্ধি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বাংলার শাসকদল।
গত বুধবার মুর্শিদাবাদের সভা থেকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমি সব বিরোধী দলকে বলব, এ দিকে নজর দিন। নিজের নিজের রাজ্যে ইভিএমের হিসাব রাখুন। বিজেপি যেখানে কম ভোট পাচ্ছে, সেখানে ওরা রাতের অন্ধকারে তালা ভেঙে গণনাকেন্দ্রে ঢুকছে। ইভিএম বদলে দিচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘১৯ লক্ষ ইভিএম এখনও মিসিং। আমরা তার খোঁজ করেছি অনেক বার। ভুয়ো ইভিএম অন্য জায়গা থেকে এনে ওরা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। যেখানে বিজেপির ভোট কম, সেখানে বাড়তি মেশিন ঢোকাচ্ছে।’’ আর তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণের আগে নির্বাচন কমিশনে ভোট শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে নিজেদের অভিযোগ নথিবদ্ধ করিয়ে রাখল তৃণমূল, এমনটাই মনে করছেন জাতীয় রাজনীতির কারবারিরা। উল্লেখ্য, তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রীর অভিযোগ প্রতিধ্বনিত হয়েছে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কণ্ঠেও। ৩ মে কলকাতা প্রেস ক্লাবের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান বাম নেতা বলেছিলেন, ‘‘প্রথম দু’দফার ভোটের হারের যে হিসেব কমিশন প্রথমে প্রকাশ করেছিল, তার পর তা ছ’শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। যদি তা গোনার ভুল হয়, তা হলে এক রকম। আর তা যদি না হয়, যদি দেখা যায় অন্য কায়দায় তা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা হলে ভয়ঙ্কর হবে। ভারতের নির্বাচন পদ্ধতি এবং তা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কমিশনকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।’’ কংগ্রেসের তরফে ভোট শতাংশের বৃদ্ধি নিয়ে সরব হয়েছেন জয়রাম রমেশ।