TMC on C V Ananda Bose

ক্ষমতার সীমা ভাঙছেন রাজ্যপাল বোস! নির্বাচন কমিশনে নালিশ ঠুকল বাংলার শাসকদল তৃণমূল

রাজ্যপালের নানা কাজের বর্ণনা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ১২ পাতার একটি চিঠি দিয়েছে তৃণমূল। ওই চিঠিতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছে বাংলার শাসকদল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ ১৭:৩৫
Share:

রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

বাংলার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ ঠুকল বাংলার শাসকদল তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, রাজ্যপাল বোস তাঁর ক্ষমতার সীমা-পরিসীমা মানছেন না। সংবিধানের দেওয়া ক্ষমতার পরোয়া না করেই তিনি লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় একটি নিজস্ব নির্বাচনী ব্যবস্থা চালাচ্ছেন। এমনকি, নির্বাচন কমিশন থাকা সত্ত্বেও বাংলার মানুষের জন্য অভিযোগ জানানোর একটি আলাদা পোর্টাল খুলেছেন তিনি। নাম দিয়েছেন ‘লোগ সভা পোর্টাল’।

Advertisement

শুক্রবার এই মর্মে রাজ্যপালের নানা কাজের বর্ণনা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ১২ পাতার একটি চিঠি দিয়েছে তৃণমূল। ওই চিঠিতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছে তৃণমূল। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, তারা যেন অবিলম্বে রাজ্যপালের চালু করা ওই পোর্টাল বন্ধ করার ব্যবস্থা করে।

গত ১৬ মার্চ লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন। তার পরেই বাংলার মানুষের জন্য একটি পোর্টাল চালু করা হয়েছে রাজভবনের তরফে। যার নাম দেওয়া হয়েছে লোগ সভা পোর্টাল। রাজভবনের তরফে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে সেই পোর্টালের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, ‘‘বাংলার মানুষের সঙ্গে ভোটের সময় সরাসরি যুক্ত থাকার জন্য একটি পোর্টাল চালু করেছেন রাজ্যপাল বোস। এই লোগ সভা পোর্টালের মাধ্যমে যে কোনও অভিযোগ এবং পরামর্শ রাজ্যপালকে জানানো যাবে।’’ তৃণমূলের আপত্তি সেখানেই।

Advertisement

চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে তৃণমূল লিখেছে, নির্বাচনের সময় মানুষের অভিযোগ এবং পরামর্শ শোনার জন্য রয়েছে কমিশন নিজেই। সেখানে অন্য কোনও পোর্টালের দরকার কী? তা ছাড়া সংবিধানে যেখানে স্পষ্ট বলা রয়েছে যে, নির্বাচনে রাজ্যপালের কোনও ভূমিকা নেই। তিনি তখনই কোনও দায়িত্বই পালন করবেন, যখন কমিশনের তরফে তাঁকে পালন করতে বলা হবে। সেখানে বাংলার রাজ্যপাল তাঁর ক্ষমতার আওতার বাইরে গিয়ে কাজ করছেন কেন?

কমিশনকে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনি লিখেছেন, সংবিধানের ৩২৪ (৬) ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাচনের সময় কোনও রাজ্যের রাজ্যপালের কাজ হল কমিশনের প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁদের সাহায্য করা। অর্থাৎ, কমিশন যদি প্রয়োজন মনে করে এবং রাজ্যপালকে এ ব্যাপারে অনুরোধ করে, তবেই তিনি তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করবেন। অথচ বাংলার রাজ্যপাল তা করছেন না। তিনি তাঁর উপর ন্যস্ত ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে এমন কিছু কিছু কাজ করছেন, যা ভোট প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।

চিঠিতে তৃণমূলের তরফে ডেরেক কমিশনকে জানিয়েছেন, রাজ্যপাল হঠাৎ হঠাৎ বাংলার বিভিন্ন সমস্যাসঙ্কুল এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছেন। বাংলায় প্রথম দফার ভোটের আর এক মাসও বাকি নেই। ১৯ এপ্রিল ভোট হবে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে। অথচ রাজ্যপাল কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দিনহাটার গন্ডগোলের খবর পেয়েই পৌঁছে গিয়েছেন সেখানে। এমনকি, শীতলখুচির বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেছেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছেন। যা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এবং ক্ষমতাকে অগ্রাহ্য করার সমান।

কমিশনের কাছে তৃণমূলের আর্জি—

১) কমিশন সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় যা পদক্ষেপ করার করছে। অভিযোগ জানানোর জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু করার কথাও বলেছে কমিশন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের আলাদা পোর্টাল ধন্ধ তৈরি করতে পারে ভোটারদের মধ্যে। তাই কমিশন অবিলম্বে রাজ্যপালকে ওই পোর্টাল বন্ধ করতে বলুক।

২) রাজ্যপালকে বলা হোক তিনি যেন নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন কমিশনের কাজের ক্ষেত্রে এ ভাবে হস্তক্ষেপ না করেন।

৩) এক্স হ্যান্ডলের রাজ্যপাল জানিয়েছেন, তিনি পঞ্চায়েত ভোটের সময় যেমন মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন, এ ভাবেও তেমনই থাকবেন। হিংসা এবং দুর্নীতিমুক্ত ভোট করাতে ভোর ৬টা থেকে পথে পথে ঘুরবেন। তৃণমূলের বক্তব্য এতে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই কমিশন যেন রাজ্যপালকে এই ধরনের পদক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে বলে।

১২ পাতার চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের অধিকার এবং রাজ্যপালের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে লেখার পাশাপাশি তৃণমূল রাজ্যপালের ‘লোগ সভা পোর্টাল’-সহ নানা ঘোষণার স্ক্রিনশটের ছবি পাঠিয়েছে কমিশনকে। এমনকি মানুষের সঙ্গে জুড়তে রাজ্যপালের টোটো সফরের ছবিও পাঠানো হয়েছে কমিশনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement