সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
উত্তর কলকাতায় আবারও প্রত্যাশিত ভাবেই জয় পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর এই জয়ের মধ্যেও বহু প্রশ্ন উঠেছে শাসকদলের অন্দরে। কারণ, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের তুলনায় ভোটের ব্যবধান কমেছে সুদীপের। এমনকি, গত লোকসভা ভোটের তুলনায় কলকাতা পুরসভার বেশি সংখ্যক ওয়ার্ডে পিছিয়ে গিয়েছে শাসকদল।
এ বার বিজেপি উত্তর কলকাতায় প্রার্থী করেছিল সদ্য তৃণমূল ছেড়ে পদ্মশিবিরে যোগ দেওয়া তাপস রায়কে। ফলাফলের নিরিখে দেখা গিয়েছে, পরাজিত হলেও ভালই লড়াই করেছেন তাপস। দু’টি বিধানসভায় বিজেপি তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি, উত্তর কলকাতার ২৪টি ওয়ার্ডেও এগিয়েছিলেন তিনি। গত লোকসভা ভোটে সুদীপ হারিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহকে। সে বার তাঁর ব্যবধান ছিল এক লক্ষ ২৭ হাজার ৯৫ ভোট। আর এ বার সেই ব্যবধান কমে হয়েছে ৯২ হাজার ৫৬০ ভোট। জোড়াসাঁকো ও শ্যামপুকুর বিধানসভায় আবার এগিয়েছিলেন বিজেপির তাপস। শ্যামপুকুরের তৃণমূল বিধায়ক শশী পাঁজা আবার রাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী।
ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের বিধানসভা কেন্দ্র কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভার চারটিতে তৃণমূল ও দু’টি ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি। ২ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফলাফল গিয়েছে বিজেপির পক্ষে। শ্যামপুকুর বিধানসভার ১১টি ওয়ার্ডের ওয়ার্ডের মধ্যে ছ’টিতে তৃণমূল ও পাঁচটিতে বিজেপি জয় পেয়েছে। জোড়াসাঁকো বিধানসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছে শাসকদল। আটটি ওয়ার্ডে বিজেপি ও তিনটি ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে। মানিকতলা বিধানসভার আটটি ওয়ার্ডের মধ্যে ছ’টিতে তৃণমূল ও দু’টিতে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে। চৌরঙ্গীর ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি আটটিতে ও তৃণমূল দু’টিতে এগিয়ে। আবার এন্টালি বিধানসভার পাঁচটি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ওয়ার্ডে বিজেপি ও চারটি ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে গিয়েছে। আর বেলেঘাটা বিধানসভার অন্তর্গত সাতটি ওয়ার্ডেই জিতেছে তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তর কলকাতায় ২০টি ওয়ার্ডের ফলাফল ছিল বিজেপির পক্ষে। এ বার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪।
জোড়াসাঁকো বিধানসভাতে আটটি ওয়ার্ডের পরাজয় তৃণমূলকে পিছিয়ে দিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোটে। এ প্রসঙ্গে জানতে তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তকে ফোন করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন সুইচ অফ ছিল। উত্তর কলকাতা তৃণমূল সূত্রে খবর, ভোটগণনার কয়েক দিন আগেই বিধায়ক বিবেক জার্মানি গিয়েছেন। তবে উত্তর কলকাতার তৃণমূল নেতা তথা কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন বলেন, ‘‘কেন জয়ের ব্যবধান কমেছে? কেনই বা পিছিয়ে থাকা ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে? এই সব বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। এই বিষয়টি নিয়ে বুথভিত্তিক পর্যালোচনা করা হবে। সেই পর্যালোচনার পরেই ফলাফল সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা কিছু জানাতে পারব।’’ ঘটনাচক্রে অতীনের বিধানসভা কেন্দ্র কাশীপুর-বেলাগাছিয়ার দু’টি ওয়ার্ডে কেন বিজেপি এগিয়েছে, তা নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে বলেই উত্তর কলকাতা তৃণমূল সূত্রে খবর।