Abhishek Banerjee

মূল মঞ্চ থেকে র‌্যাম্প বেয়ে তিন প্রান্তে পৌঁছে নতজানু সেনাপতি, রবি-ব্রিগেড দেখল অন্য অভিষেককে

অভিষেক যখন মঞ্চে উঠলেন, তখন বেলা ১২টা ৫০। মূল মঞ্চে উঠেই উত্তর দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন র‌্যাম্প-পথ ধরে। রবিবার ব্রিগেডে অভিষেকের বক্তৃতার লক্ষ্যই ছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ২০:৫৭
Share:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

তিনি নতজানু। মাথা মাটিতে ঠেকানো। মূল মঞ্চ থেকে র‌্যাম্প বেয়ে তিন প্রান্তে পৌঁছে, র‌্যাম্পের জমিতে হাঁটু গেড়ে বসে মাথা ঠেকিয়ে তিন-তিন বার প্রণাম করলেন সামনে উপস্থিত জনতা জনার্দনকে। কেন? তৃণমূলের সেনাপতি জানাবেন, কারণ, এই ব্রিগেড তৃণমূলের নয়। এই ব্রিগেড আসলে গরিব খেটে খাওয়া মানুষের। যাঁদের প্রণাম জানিয়ে রবিবার ব্রিগেডে বক্তৃতা শুরু করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

অভিষেকের জনতাকে প্রণামের ভঙ্গি দেখে ঝপ করে মনে পড়েছে নরেন্দ্র মোদীর কথা। ২০১৪ সালে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে সংসদে ঢোকার সময়ে এ ভাবেই তিনি প্রণাম করেছিলেন সংসদ ভবনের মূল ফটকে। মোদী জানিয়েছিলেন, সংসদ ভবন এক মন্দির! যে মন্দির দরিদ্র চা-বিক্রেতার পুত্রকেও দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসাতে পারে।

অভিষেক যখন মঞ্চে উঠলেন, তখন বেলা ১২টা ৫০। পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। গলায় গাঢ় নীল উত্তরীয়। বাঁ-কব্জিতে স্মার্ট ওয়াচ। ডান কব্জিতে ফিটনেস ব্যান্ড। পায়ে ব্রাউন লোফার্স। মূল মঞ্চে উঠেই উত্তর দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন র‌্যাম্প-পথ ধরে। ডান হাত নাড়ছেন কখনও। কখনও বাঁ-হাত। কখনও আবার মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়ে দিচ্ছেন। মুখে স্লোগান। ‘জনগর্জন’ আর মাইকের আওয়াজে সেই স্লোগান মিশে যাচ্ছে ময়দানে। মাঝ পথে র‌্যাম্প আবার তিন ভাগ। সোজা, ডাইনে ও বাঁয়ে। তিন পথেই তিনি গেলেন প্রান্ত পর্যন্ত। উত্তর-পূর্ব-পশ্চিম— র‌্যাম্পের তিন প্রান্তে পৌঁছে হাঁটু গেড়ে, নীল রঙের কার্পেটে মাথা ছুঁইয়ে, নতজানু হয়ে প্রণাম জানালেন উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের। তার পর আবার ফিরে গেলেন মূল মঞ্চে। গোটা পর্ব সারলেন ঘড়ি ধরে ১০ মিনিটে। র‌্যাম্প ঘুরে অভিষেক যখন মঞ্চে ফিরে বক্তৃতা শুরু করলেন তখন বাজে ঠিক ১টা। এর পর তিনি বলবেন ঝাড়া ২৯ মিনিট।

Advertisement

রবিবার ব্রিগেডে অভিষেকের বক্তৃতার লক্ষ্যই ছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ। সেই আক্রমণের সঙ্গে ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে অভিষেক দাবি করেন শ্বেতপত্র প্রকাশের। ওই দাবি তোলার মধ্যেই জানান, কেন্দ্র কোনও টাকা দেয়নি! যদি তাঁর দাবি ভুল হয়, তা হলে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন!

অভিষেকের বক্তৃতার মাঝপথেই ব্রিগেড-মঞ্চে এসে পৌঁছন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে মমতা বসে থাকা অবস্থাতেই বক্তৃতা চালিয়ে যান অভিষেক। বক্তৃতার একেবারে শেষে এসে সুর চড়িয়ে অভিষেকের সংযোজন, ‘‘লড়াইয়ের ময়দানে লড়ে নেব। খেলা হবে। তৈরি থেকো বিজেপির বন্ধুরা। জনগর্জন কী, আজ শুধু একটা ট্রেলার দেখালাম, সিনেমাটা বাংলার আপামর জনতা দেখাবে।’’

অভিষেকের পরেই মমতা বলতে ওঠেন। তিনিও র‌্যাম্প প্রদক্ষিণ করেন। মমতার বক্তৃতা শেষে আবারও মাইক্রোফোন অভিষেকের হাতে। তিনিই পড়ে শোনালেন আসন্ন লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের ৪২ আসনের প্রার্থিতালিকা। কেবল ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার সময়ে থমকালেন! তাঁর নামটি জোর গলায় ঘোষণা করলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তার পর ফের স্বমহিমায় দেখা গেল অভিষেককে।

২০১৯ সালের পর ২০২৪। পাঁচ বছর পর আবার ব্রিগেডে সমাবেশ তৃণমূলের। কিন্তু রবিবার যে ব্রিগেড উপস্থাপন করলেন দলের সেনাপতি, তাতে স্পষ্ট, তিনিই আধুনিকতা নিয়ে এলেন ময়দানের রাজনীতিতে। জাতীয় রাজনীতিতেও। আক্ষরিক অর্থেই এই ব্রিগেড যে অভিষেকের, দলের অন্দরে অনেকেই তা মানছেন। মঞ্চ ভাবনা থেকে তার উপস্থাপনা, সবের মধ্যেই এক নতুন ব্রিগেডের সূচনা যেন। নতুন রাজনীতিরও। যে ভাবে র‌্যাম্প তৈরি করে ময়দান জুড়ে থাকা কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রবিবার পৌঁছে গিয়েছেন দলের সেনাপতি, সেই নজিরের কথা তৃণমূল কেন, অন্য দলের পোড়খাওয়া রাজনীতিকদেরও অনেকে মনে করতে পারছেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement