(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রীর হাতে উল্টো করে রবীন্দ্রনাথের ছবি তুলে দেওয়ার দৃশ্য। (ডান দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক
বাংলা সফরে এলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম উদ্ধৃত করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত বিধানসভা ভোটে তাঁর রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি নিয়ে কটাক্ষ করেছিল তৃণমূল। এ বার ব্যারাকপুর লোকসভার বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহের সমর্থনে প্রচার করতে এসে আবার রবীন্দ্র-বিতর্কে পড়ল বিজেপি। রবিবার জগদ্দলে বিজেপির সভায় প্রধানমন্ত্রীর হাতে রবীন্দ্রনাথের ছবি তুলে দেন অর্জুন-পুত্র বিজেপি বিধায়ক পবন সিংহ। কিন্তু মোদীর হাতে সেই ছবি ধরানো হয় উল্টো করে। খানিক ক্ষণ পরে ভুল বুঝতে পেরে সোজা করে দেওয়া হয় ছবিটি। মঞ্চে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে দেখা যায়, ছবিটি ঠিক করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে। আর উল্টো করে ছবি দেওয়া নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। তৃণমূল তাদের সমাজমাধ্যমের প্রোফাইল থেকে ওই ভিডিয়ো পোস্ট করে কটাক্ষ করেছে বিজেপিকে। সেই ভিডিয়োর ক্যাপশনে লেখা, ‘‘ব্যারাকপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আজকের সভার ছবি। বিজেপি বিধায়ক পবন সিংহের হাত থেকে উল্টো করে ধরা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।’’ শেষে শ্লেষের সঙ্গে বিজেপির উদ্দেশে কটাক্ষ করে লেখা, ‘‘এরাই নাকি বাংলার হৃদয়ে জায়গা করতে চায়।’’
তৃণমূলের ওই পোস্ট এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে নিশানা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। তিনি লেখেন, ‘‘তাঁর (প্রধানমন্ত্রীর) সফরের আগে এক জন বলেছিলেন, ‘‘উল্টা লটকা কর সিধা কিয়া জায়গা।’’ (উল্টে সোজা করা হবে।) যদিও বিজেপির দাবি, একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল যা পরের মুহূর্তেই শুধরে নেওয়া হয়েছে, সেটা নিয়েও রাজনীতি করছে তৃণমূল।
সমালোচনায় সরব হন ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক। তিনি লেখেন, ‘‘আজ মোদীজির হাতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্টো ছবি তুলে দিলেন ভাটপাড়ার বিজেপি বিধায়ক পবন সিংহ। যারা বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি জানে না, বাংলার ঋষি-মনীষীদের সম্মান দিতে জানে না, তারা কী ভাবে বাংলা দখলের কথা বলে!’’
লোকসভা ভোটের মুখে সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। গত জানুয়ারি মাস থেকে ইডির উপর হামলা, সন্দেশখালির তৎকালীন তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের গ্রেফতারি নিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে ধারাবাহিক ভাবে আক্রমণ করেছে বিজেপি। তার উপর নারী নির্যাতন, জমি কেড়ে নেওয়ার মতো অভিযোগ ঘিরে অস্বস্তি বাড়ছিল ঘাসফুল শিবিরে। কিন্তু লোকসভা ভোটের মধ্যে সেই ‘অস্বস্তির পবন’ ঘুরে গিয়েছে বিজেপির দিকে। সৌজন্যে সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিজেপি মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের স্টিং ভিডিয়ো। শনিবার মোদীর কলকাতায় পৌঁছনোর পরেই সন্দেশখালির আরও একটি ‘স্টিং ভিডিয়ো’ প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও কোনও ভিডিয়োরই সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। সেখানেও দেখা গিয়েছে স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে। এই ভিডিয়ো নিয়ে নতুন করে অস্বস্তিতে বিজেপি। রবিবারও সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে কী হচ্ছে, সারা দেশ দেখছে। তৃণমূলের পুলিশ ওদের বাঁচিয়েছে।’’ মোদীর অভিযোগ, ‘নতুন খেলা’ শুরু করেছে তৃণমূল। তিনি বলেন, ‘‘ওদের গুন্ডা সন্দেশখালির বোনেদের ভয় দেখাচ্ছে। কারণ, অত্যাচারীর নাম শাহজাহান শেখ। ওঁকে ক্লিনচিট দিতে চায় তৃণমূল।’’ অন্য দিকে, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নির্বাচনী সভা থেকে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ টেনে এনে রাজ্যপাল এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, এখনও সন্দেশখালি নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে। রবিবার উলুবেড়িয়ার সভা থেকে তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে চক্রান্ত করল। মা-বোনেরা জানেনও না তাঁদের হাত দিয়ে কী লিখিয়েছে। তাঁদের দিয়ে লিখিয়ে চক্রান্ত করেছে।’’ সন্দেশখালিকাণ্ডে শাহ বলেছিলেন, ‘‘উল্টো করে সোজা করে দেওয়া হবে।’’ মোদীর হাতে রবীন্দ্রনাথের ছবি উল্টো করে ধরানো নিয়ে অভিষেক সেই বক্তব্য টেনে এনে কটাক্ষ শানালেন বিজেপিকে।
এই বিতর্ক প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘শুধু আমাদের দলের নয়, রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক পবন সিংহ মোদীজির হাতে তুলে দেওয়ার সময় খেয়াল করেননি। পরে আমরা ঠিক করে দিয়েছি। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে বিভিন্ন সভায় বাছাই করা শব্দ ব্যবহার করছেন, তা শুধরে দেবে কে?’’ সুকান্তের সংযোজন, ‘‘ভোটাররাই ভরসা।’’