(বাঁ দিকে) কালিদাস চট্টোপাধ্যায়, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং বিভূতিভূষণ বিশ্বাস (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটের রাজনীতি তাঁরা দেখছেন প্রায় সাত দশক ধরে। বহু পালাবদল প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁরা। দোরগোড়ায় আরও একটি লোকসভা ভোট। রাজনৈতিক দলগুলির নেতা-প্রার্থীদের কাছে তাঁদের একটিই আর্জি, হানাহানি বা কুকথার স্রোতের পরিবর্তে প্রকৃত অর্থেই গণতন্ত্রের উৎসবের আকার নিক নির্বাচন। দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে রাজনৈতিক পরিবেশ হোক সৌহার্দ্যপূর্ণ, যেমনটা ছিল ৬৭ বছর আগে, প্রথম বার যখন সাংসদ নির্বাচন করেছিলেন তাঁরা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৫৭ সালে প্রথম আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন হয়েছিল। সে বার জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী মনোমোহন দাস। প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দী নির্দল প্রার্থী অম্বুজাভূষণ বসুকে প্রায় ৬০ হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন তিনি। কেমন ছিল সে বারের ভোট-চিত্র, জানালেন সদ্য ৯৯ বছর বয়সে পা রাখা বরাকরের বাসিন্দা কালিদাস চট্টোপাধ্যায়। বয়স শরীরে থাবা বসালেও স্মৃতি এখনও সতেজ তাঁর। নিজেকে একনিষ্ঠ কংগ্রেস কর্মী বলে মনে করেন এখনও। তিনি বলেন, ‘‘বেঁচে থাকা অবধি ভোটে যোগদান করব ঠিকই। কিন্তু এখনকার রাজনৈতিক পরিবেশে আর শান্তি পাচ্ছি না। কেন এত খুনোখুনি, রক্তারক্তি হবে? তখন তো এ সব ছিল না!’’ তাঁর আর্জি, ‘‘প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলিকে জানাচ্ছি, অতীতের সেই দিনগুলি আবার ফিরিয়ে আনুন।’’
কালিদাসের স্মৃতিচারণে উঠে এল, বরাকরে সে বার ভোটের প্রচারে এসেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর ভাষণ শুনতে নানা পক্ষের মনোভাবাপন্ন বাসিন্দারা নির্বিশেষে ভিড় জমিয়েছিলেন। বেগুনিয়া লাগোয়া একটি প্রাথমিক স্কুলে বুথ হয়েছিল। হইহই করে আবালবৃদ্ধবনিতা ভোট দিতে গিয়েছিলেন। কালিদাস বলেন, ‘‘এখন সব সময়ে অনিশ্চয়তা। বাসিন্দারা আশঙ্কায় থাকেন, ভোটের সকালে হয়তো বাড়ির দরজা খুলে দেখতে পাবেন, বোমা পড়ে রয়েছে।’’ নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় এ বার তিনি বাড়িতেই ভোট দেবেন বলে জানালেন।
ভোটের এখনও বেশ কয়েক দিন বাকি। কিন্তু সকাল-বিকেল বাড়ির সামনে দিয়ে চলেছে ভারী বুটের মিছিল। কাঁধে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। তা দেখে আক্ষেপ ঝরে পড়ে প্রাক্তন নিয়ামতপুরের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক, ৯৮ বছরের বিভূতিভূষণ বিশ্বাসের গলায়। তিন বলেন, ‘‘১৯৫৭ সালে প্রথম বার ভোট দেওয়ার সময়ে বুথে এক জন মাত্র লাঠিধারী পুলিশ দেখেছি। এখন বুথ তো দুর্গ বলে মনে হয়। তবু মারামরি থামছে না।’’
তাঁর সংযোজন, ‘‘রাজনীতির লড়াই হোক অন্ন, বাসস্থান সংস্থানের ও উন্নয়নের জন্য। কিন্তু এখন ব্যক্তি আক্রমণ ও অশালীন বাক্য ব্যবহারে কানে তুলো দেওয়ার জোগাড়।’’ তবে এ বারও তিনি ভোট দিতে হেঁটেই বুথ পর্যন্ত যাবেন বলে জানালেন বিভূতিভূষণ।
নব্বই ছুঁই ছুঁই ইসিএলের প্রাক্তন আধিকারিক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় আবার বলছেন, ‘‘পূর্বজরা চাইতেন, তাঁদের সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। কিন্তু আমি সাহস করে এখন তা চাইতে পারি না। আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি,
ভাত-ডাল জোগাড় করতে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। প্রত্যেকেই ব্যক্তিস্বার্থে ব্যস্ত। কেউ এ সব ভাবছেন না!’’ তাঁর প্রস্তাব, ‘‘যেই জিতুন, তাঁকে এলাকার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের সমস্যা জেনে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে, এটাই নীতি হওয়া উচিত।’’