Lok Sabha Election 2024

সন্ত্রাসের তির বিরোধীর, উন্নয়নে ভরসা শাসকের 

পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ৫১.৭৭ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী প্রতিমা ভৌমিক। অন্য দিকে কংগ্রেস প্রার্থী সুবল ভৌমিক পেয়েছিলেন ২৪.১৮ শতাংশ ভোট।

Advertisement

অনঘ গঙ্গোপাধ্যায়

আগরতলা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৪৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

আগরতলার বিজেপি কার্যালয়ের ঘরে লেখা রয়েছে ‘অস্বাস্থ্যকর কথা’ এখানে চলবে না। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর নয়, গোটা ত্রিপুরায় কেউ শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছেন না বলে দাবি বিরোধীদের। শাসকের অবশ্য দাবি, এ সবই মিথ্যে।

Advertisement

পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ৫১.৭৭ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী প্রতিমা ভৌমিক। অন্য দিকে কংগ্রেস প্রার্থী সুবল ভৌমিক পেয়েছিলেন ২৪.১৮ শতাংশ ভোট। তৃতীয় স্থানে ছিলেন সিপিএমের শঙ্করপ্রসাদ দত্ত।

তার পরে জল গড়িয়েছে অনেক। গত বিধানসভা ভোটে আসন সমঝোতা করেছিল কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। আগামী লোকসভা ভোটেও ত্রিপুরায় যৌথ ভাবেই লড়ছে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের এই দুই শরিক। পশ্চিম ত্রিপুরা কেন্দ্রে তাদের প্রার্থী প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আশিস সাহা। অন্য দিকে, বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটের আগে যাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে মানিক সাহাকে দায়িত্ব দেয় বিজেপি।

Advertisement

কিন্তু জোট বাঁধলেও প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে বলে দাবি বাম ও কংগ্রেস নেতাদের। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের দাবি, ‘‘বিজেপি ফ্যাসিস্টসুলভ সন্ত্রাস চালাচ্ছে। সে জন্যই আরও জোট বেঁধেছে সিপিএম-কংগ্রেসের মতো দল।’’

সন্ত্রাসের রূপটা কেমন বলে অভিযোগ?

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, রামনগর কেন্দ্রে উপনির্বাচনের প্রার্থী তথা আগরতলার মেয়র দীপক মজুমদারদের দাবি, ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটের পরে কোনও ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ঘটনা হল গত বিধানসভা ভোটের পরে বেশ কিছু ঘটনায় শাসকের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছিলেন বিরোধীরা। বারবার উঠে এসেছিল বিজেপির ‘বাইক বাহিনীর’ কথা।

কিন্তু এ বারে এখনও কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া এখনও হামলার খবর তেমন মেলেনি। মানিকের দাবি, এখন কৌশল বদলেছে বিজেপি। হামলা না চালিয়ে আঘাত হানছে বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকায়। শাসকের বিরুদ্ধে মুখ খুললে ব্যবসায়ীর দোকান বন্ধ করা, চাপ দেওয়ার মতো পথে হাঁটছে তারা। কংগ্রেস প্রার্থী আশিস সাহার মতে, যে হামলা বজায় থাকছে প্রায় সারা বছরই।

রাজনীতি নিয়ে মুখ খুলতে স্থানীয় বাসিন্দাদের যে ভয় বা অনীহা যে আছে তা অবশ্য আগরতলা শহরে ঘুরলেই বোঝা যায়। শহরের শকুন্তলা রোডের উপরে চৈত্র সেলের মেলা বসেছে। কিন্তু সেলের কথা থেকে ভোটের কথা তুলতেই বেঁকে বসলেন এক বিক্রেতা। তাঁর কথায়, ‘‘যে-ই আসুক আমাদের কী। ব্যবসা করি। এ ভাবেই চলতে হবে।’’

রাজনীতির ব্যাকরণ যে বদলে গিয়েছে তা মানছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাই কোর্টের এক প্রবীণ আইনজীবীও। তাঁর বাড়ির সামনেই হামলা হয়েছিল প্রবীণ কং‌গ্রেস নেতা সুদীপ রায়বর্মণের উপরে। যা নিয়ে শাসকের দিকে আঙুল তুলেছিলেন বিরোধীরা।

প্রায় একই এলাকায় থাকেন আর এক প্রবীণ আইনজীবী ও রামনগর কেন্দ্রে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী পক্ষ সমর্থিত নির্দল প্রার্থী পুরুষোত্তম রায় বর্মণ। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া এ বারও শুরু হয়েছে। এখন ভয় সর্বগ্রাসী।’’

তবে ভিতরে ভিতরে প্রবল বিরোধিতার স্রোতও যে আছে তা-ও বোঝা যায় মাঝে মাঝে।
উদাহরণ গাড়িচালক অজয় মালাকার (নাম পরিবর্তিত)। স্পষ্টতই সিপিএমের সমর্থক অজয় বললেন, ‘‘ভোট এখানে করতে দেবে না। না হলে বিজেপি হারত।’’

সন্ত্রাস বা অন্য যে কোনও কারণেই হোক, গোটা পশ্চিম ত্রিপুরায় যে প্রচারের উদ্যোগ-আয়োজনে বিজেপি অনেকটাই এগিয়ে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। রামনগর কেন্দ্রের উপনির্বাচন তথা লোকসভা ভোটের প্রচারের জন্য আগরতলার বর্ডার গোলচক্কর এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার সভায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দেখা গেল এলাকার মুসলিম বাসিন্দাদের বড় অং‌শের উপস্থিতি। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘ভীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সংখ্যালঘুরাও দলে দলে বিজেপির সভায় যাচ্ছেন।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যের পাল্টা দাবি, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ একেবারে মিথ্যে। বরং বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে প্রথম রাজনৈতিক খুন হয়েছিল। বামেরা সংবিধানই মানেন না। এ দিকে সেই সংবিধানকে রক্ষার বার্তা দিয়ে ভোটে লড়ছেন।’’

নিজেদের দাবির সমর্থনে পুরনো ঘটনার ইতিবৃত্ত সামনে আনছে বিজেপি। বিজেপির মিডিয়া ইনচার্জ সুনীত সরকারের দাবি, খোয়াই জেলায় গাঁওসভার নির্দল প্রধান নৃপেন্দ্র দেবনাথের হত্যা, রাজ্যের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিমল সিন্হার হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ত্রিপুরায় বিজেপি-পূর্ববর্তী জমানার সন্ত্রাসের উদাহরণ। বিজেপির দাবি, ত্রিপুরায় জঙ্গিদের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগ নিয়ে সরব হয়েছেন ত্রিপুরার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার থেকে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। এখন সেই কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সিপিএম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সেই সময়ে জঙ্গিদের নিশানা ছিল রাজ্যের উন্নয়ন ও প্রশাসনকে থমকে দেওয়া। আর এখন বিজেপি নাগরিক অধিকারের উপরে আঘাত হানছে। দু’টি ভিন্ন বিষয়। আর কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শগত পার্থক্যের কথা আমরা কখনওই অস্বীকার করছি না।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীবের অবশ্য দাবি, ‘‘বিমানবন্দর থেকে রেল প্রকল্প, সর্বত্র উন্নয়নের পথে হাঁটছে বিজেপি। সেই যজ্ঞে সংখ্যালঘু-সহ সকলেই শামিল হয়েছেন।’’ সেই উন্নয়নের গতির ফলেই পশ্চিম ত্রিপুরায় তাঁদের লড়াই অনেকটাই সহজ বলে মনে করছেন রাজীব ভট্টাচার্য-মানিক সাহারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement