গৌরব গগৈ। — নিজস্ব চিত্র।
চেনা ক্লাস, চেনা সিলেবাসে এক বছরের প্রস্তুতি নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় বসতেন তিনি। কিন্তু আনকোরা স্কুলের অচেনা পাঠ্যক্রম মাত্র ৩০ দিনে শেষ করেই পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে গৌরব গগৈকে। তিনি লোকসভায় কংগ্রেসের উপ-দলনেতা। ইংরেজিতে বরাবরই চোস্ত। হিন্দিতে ক্রমশ তুখোড়। বরং দুর্বল ছিল অসমিয়া। রাজ্য-রাজনীতির দাবি মেনে এখন তাতেও সাবলীল। কিন্তু লোকসভার সীমানা পুনর্বিন্যাসের জেরে যে সাংসদরা সবচেয়ে সমস্যার মুখে পড়েছেন তাঁদের অন্যতম গৌরব গগৈ।
বাবা-কাকার কলিয়াবর কেন্দ্রে তিনি দু’বারের সাংসদ। কিন্তু পুনর্বিন্যাসের ফলে কলিয়াবরই উধাও। বদলে, বিস্তর টানাপড়েনের পরে গৌরবকে লড়তে হচ্ছে যোরহাট কেন্দ্র থেকে। তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য কংগ্রেসের বটবৃক্ষ তরুণ গগৈ ২০২০ সালে প্রয়াত হওয়ার পরে এই প্রথম লড়তে নামছেন পুত্র গৌরব। তবে তাঁর লড়াইটা তপন গগৈয়ের সঙ্গে নয়। লড়াইটা গৌরব গগৈয়ের সঙ্গে সরাসরি বিজেপির। গৌরবকে হারাতে রাজ্যের তাবড় মন্ত্রীরা ঘাঁটি গেড়েছেন যোরহাটে।
এখানে এক দিকে আছে মিসিং জনজাতি অধ্যুষিত নদদ্বীপ মাজুলি। আবার চা বাগানের ভোটও এখানে নির্ণায়ক। শিবসাগর পর্যন্ত আহোম রাজত্বের পুরনো ভিটেয় এখনও আহোমদের ভোট ৩৩ শতাংশ। গৌরব নিজে যেমন আহোম, মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সাংসদ তপন গগৈও তাই।
এমন পরিস্থিতিতে, একের পর এক বাগান চষে ফেলা গৌরবের সফরসঙ্গী হিসেবে প্রথম প্রশ্নই ছিল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে, যা ভোটের মুখে রাজ্যের প্রধান আলোচ্য। গৌরব মণিপুর প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘‘মানুষ দেখেছেন বিজেপির
বিভাজন নীতির কী ফল হয়েছে মণিপুরে। একই ভাবে অসমেও তারা সিএএ-র মাধ্যমে অসমিয়া ও বাঙালিদের মধ্যে বিভাজন ঘটানোর ষড়যন্ত্র করেছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সিএএ বাতিল হবে।’’
গৌরবের অভিযোগ, এনআরসিতে বহু প্রকৃত ভারতীয় বাঙালির নাম বাদ পড়েছে। বিজেপি সরকার তাঁদের নাম এনআরসিতে তোলার বদলে এখন জোর দিচ্ছে যাতে তাঁরা নিজেদের বিদেশি শরণার্থী হিসেবে মিথ্যে পরিচয় দিতে বাধ্য হন। ‘‘বাঙালিদের বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার দরকার নেই। এই কাজ বাঙালিদের অপমান।’’
চা বাগান বরাবর কংগ্রেসি দুর্গ ছিল। কিন্তু বিজেপি আমলে দুই দফায় মজুরি বৃদ্ধি, রাস্তা-স্কুল তৈরি করা, সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের জেরে বাগানে বিজেপি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে।
কোথাও ঝুমুর, কোথাও আদিবাসী পরবে হাজির হওয়া গৌরব বলছিলেন, ‘‘বাবা শেখাতেন, রাজনীতি হল সম্পর্ক তৈরির রসায়ন। আমিও বাগানের সঙ্গে, এখানকার যুবাদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা প্রচারে জোর দিচ্ছেন কংগ্রেস নেতাদের নাগাড়ে দলত্যাগের উপরে। গৌরবের মতে, ‘‘অসমে আসলে লড়াইটা কংগ্রেসের সঙ্গে প্রাক্তন কংগ্রেসিদের। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তাবড় মন্ত্রী-বিধায়ক বিজেপির ওয়াশিং মেশিন মারফৎ কলঙ্ক ধুয়ে আসা প্রাক্তন কংগ্রেসি। সেই সঙ্গে, সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললে জেলে ঢোকানো হচ্ছে। চাকরি চলে যাচ্ছে। এখানে গণতন্ত্র নেই।’’
সীমানা পুনর্বিন্যাসের জেরে কতটা ক্ষতি হল তাঁর ও দলের? গৌরবের দাবি, ‘‘বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ অনুযায়ী সীমানা পুনর্বিন্যাস করেছে। দলের সিদ্ধান্তে একদা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি যোরহাটে দলকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব আমায় দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৩৬৫ দিনের প্রস্ততি ৩০ দিনে শেষ করে নতুন আসনে লড়তে নামছি।’’
বিজেপি দাবি করছে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া দূরে থাক, রাম মন্দিরের হাওয়াতেই তাদের চারশো পার করা বাঁধা। গৌরবের মতে, ওদের চারশো পার করা সোনার পাথরবাটি।
ভগবান রামের নামে ভোট
চাওয়াই রাম তথা হিন্দু ধর্মের প্রতি অপমান। রামের স্থান মন্দিরে, জনসভায় নয়।’’