Lok Sabha Election 2024

‘পানি কে বাতাসে’র হিসেব মেলে, আসনের মেলে না

হজরতগঞ্জের অন্য প্রান্তে বিধানসভা মার্গে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য বিজেপির সদর দফতর। সেখানে ঠিক উল্টো ছবি। উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনে বিজেপি এ বার কতগুলি জিতবে, কেউই সে হিসেব মেলাতে পারছেন না।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

লখনউ শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ০৯:১৯
Share:

যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল চিত্র।

হজরতগঞ্জের শাহনাজফ রোডে ঢুকলে ছোট্ট দোকানের সামনে বিকেল থেকেই মারকাটারি ভিড়। বৃদ্ধ দীনেশ শঙ্কর শুক্ল ওরফে শুক্লজি এক মনে ‘পানি কে বাতাসে’ খাইয়ে চলেছেন। ছয় দশকের পুরনো দোকান এই শুক্ল চাট হাউস। আলু টিক্কি হোক বা মটর, সব রকম চাটেরই দাম ষাট টাকা। আর ‘পানি কে বাতাসে’ ওরফে ফুচকার দাম কুড়ি টাকায় পাঁচটা। শুক্লজি খাইয়ে চলেন। দাম চাইতে হয় না। ‘পানি কে বাতাসে’ আর চাট খেয়ে ফুরফুরে মনে আশি টাকা দিয়ে যেতে কারও ভুল হয় না।

Advertisement

হজরতগঞ্জের অন্য প্রান্তে বিধানসভা মার্গে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য বিজেপির সদর দফতর। সেখানে ঠিক উল্টো ছবি। উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনে বিজেপি এ বার কতগুলি জিতবে, কেউই সে হিসেব মেলাতে পারছেন না। মুখে সকলেই বলছেন, ‘আশিতে আশি’। কিন্তু হিসেব চাইলে মিলছে না। এক জন যদি বলেন, “আগের বারের থেকে আসন কমবে না”, অন্য জন বলবেন, “আগের বারের থেকেও বেশি আসন জিতব”! কিন্তু কোথায় আসন বাড়বে, তা জিজ্ঞাসা করলেই হিসেব গুলিয়ে যাবে।

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি উত্তরপ্রদেশ থেকে ৬২টি আসন জিতেছিল। বিজেপির শরিক দল জিতেছিল আরও দু’টি আসন। তার জোরেই লোকসভায় বিজেপি ‘তিনশো পার’ করেছিল। এ বার নরেন্দ্র মোদী ‘চারশো পার’-এর লক্ষ্য স্থির করেছেন। তা করতে হলে উত্তরপ্রদেশ থেকে বিজেপিকে আসন বাড়াতেই হবে। বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ৬২ জন সাংসদের মধ্যে জনা বিশেক সাংসদকে আর প্রার্থীই করেনি। যে রাজ্য থেকে নরেন্দ্র মোদী সাংসদ, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, সেই রাজ্যে বিজেপির তিন ভাগের দু’ভাগ সাংসদ আর টিকিটই পেলেন না কেন?

Advertisement

উত্তর খুঁজতে লখনউয়ের বিজেপির রাজ্য দফতরে ঢুঁ মারতে গিয়ে বিজেপির যুব মোর্চার শীর্ষ নেতা ধনঞ্জয় শুক্লের দেখা মিলল। ইনিও ‘শুক্লজি’। তবে ‘পানি কে বাতাসে’-র বদলে রাজনীতির জল মাপেন। বিজেপি দফতরে সংবাদমাধ্যমের জন্য তৈরি প্রচার কেন্দ্রের ভার তাঁরই হাতে।

কত আসন পাবে বিজেপি? বিজেপির শুক্লজি উত্তর দেবেন, ‘সেভেন্টি প্লাস’। মানে সত্তরের বেশি। তবেই না নরেন্দ্র মোদীর গোটা দেশে ‘চারশো পার’-এর লক্ষ্য পূরণ হবে! কিন্তু কী ভাবে? শুক্লজি-র ব্যাখ্যা, উত্তরপ্রদেশের লড়াই মূলত বিজেপি বনাম অখিলেশ যাদবের। অখিলেশ যাদব গত লোকসভা ভোটে মায়াবতীর বিএসপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। যাঁর কাছে ১৯ শতাংশ ভোট ছিল। এ বার অখিলেশ ৩ শতাংশ ভোটের পার্টি কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ‘বহেনজি’ মায়াবতী ময়দানেই নেই। তিনি কার্যত হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। বিএসপি-র ভোটারেরা বরাবরই সমাজবাদী পার্টির বিরোধী। মায়াবতীর দলিত ভোটব্যাঙ্ক তাই বিজেপির ঝুলিতে এসে পড়বে।

বিজেপি দফতর থেকে বেরিয়ে লখনউয়ের সরু সিটওয়ালা সাইকেল রিকশয় উঠলে কিছুক্ষণের মধ্যে বিক্রমাদিত্য মার্গে সমাজবাদী পার্টির দফতর। দেখা মিলবে আশিস কুমার যাদবের। অখিলেশ যাদব যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, আশিস ছিলেন তাঁর ওএসডি। বিজেপির দাবি শুনে আশিসের জবাব, “বহেনজির ভোটারেরা অখিলেশ যাদবকে ভোট দেবেন। মিলিয়ে নেবেন, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আসন সংখ্যা এ বার চল্লিশের নীচে নামছে। দেখছেন না, ভোটাররা সবাই চুপচাপ। ভোটের হাওয়াই নেই। মোদী-যোগী সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষের চোরাস্রোত বইছে।”

ভোটের হাওয়া সত্যিই নেই বটে! গোটা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজধানী লখনউতেও একই হাল। আইপিএল-এ লখনউ সুপার জায়ান্টস-এর মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে টিমের ক্যাপ্টেন কে এল রাহুলের বিবাদ নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে। মোদী-যোগী বনাম অখিলেশ-রাহুলের লড়াই নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। ভোটের মরসুম শুধু বোঝা যায় নরেন্দ্র মোদী ও যোগী আদিত্যনাথের বিরাট বিরাট ছবিওয়ালা হোর্ডিং দেখে। সব হোর্ডিংয়ে নরেন্দ্র মোদী ও যোগী আদিত্যনাথের ছবি নিখুঁত ভাবে একই মাপের বসানো হয়েছে। কেউ বড় নন, কেউ ছোট নন। অন্তত ছবিতে। সঙ্গে ‘বিকশিত উত্তরপ্রদেশ, বিকশিত ভারত’-এর জয়ধ্বনি।

বিজেপি নেতারা বলছেন, এক দিকে নরেন্দ্র মোদীর নানা সরকারি প্রকল্পের ‘লাভার্থী’-রা আবাস যোজনা থেকে আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা পাচ্ছেন। অন্য দিকে, যোগী আদিত্যনাথের ‘সুশাসন’-এ ‘ভয়মুক্ত উত্তরপ্রদেশ’-এ রাজ্যের মানুষ শান্তিতে রয়েছেন। তারই সুফল মিলবে। যোগীর উত্তরপ্রদেশ মোদীকে ‘চারশো পার’-এর লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।

তারপরে কি যোগী আদিত্যনাথকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে? যেমনটা অরবিন্দ কেজরীওয়াল বলেছেন! না কি যোগী আদিত্যনাথ ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে যাবেন?

প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে বিজেপির শুক্লজি মুখ বন্ধ করে ফেলেন। যেন মুখে শুক্লজির ‘পানি কে বাতাসে’ পুরে ফেলেছেন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement