রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছর আগে সাফল্যের এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ শিখ ছুঁয়েছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। কিন্তু এ বার কেরলে সেই সংখ্যা ধরে রাখা যাবে না বলে আশঙ্কা করছে কংগ্রেস শিবির। দক্ষিণী এই রাজ্যে ভোট মিটে যাওয়ার পরে কংগ্রেসের অন্দরের প্রাথমিক পর্যালোচনায় উঠে আসছে, গত বার জেতা ৫-৬টি আসন এ বার হাতছাড়া হতে পারে। কেরলে এ বার গত বারের তুলনায় রকম ভোটদানের হারকেই মূল ‘খলনায়ক’ ধরছেন কংগ্রেস নেতারা। প্রকাশ্যে অবশ্য তাঁদের দাবি, রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখে ওই রাজ্যে সব আসনই ঘরে তুলতে চলেছে কংগ্রেস ও তার শরিকেরা!
কেরলে এ বার ভোট পড়েছে ৭১.১৬%। যা গত বারের (৭৭.৮৪%) তুলনায় অনেকটাই কম। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর ১০ বছরের শাসন এবং কেরলে পিনারাই বিজয়নের ৮ বছরের সরকার— এই দুই সরকারের বিরুদ্ধে জোড়া প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ফায়দা নেওয়া যাবে বলে আশাবাদী ছিলেন কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু ভোটদানের হার তাঁদের সেই আশায় বেশ খানিকটা জল ঢেলে দিয়েছে। দলের অন্দরে কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট হলে যে পরিমাণ ভোট পড়া উচিত ছিল, বাস্তবে তা হয়নি। যা হয়েছে, তাতে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফের লাভ হতে পারে। তা ছাড়া, ভোট বেশি পড়লে ইউডিএফ বেশি আসন পায় এবং তুলনায় ভোট কম হলে এলডিএফের পক্ষে যায়— এটাই কেরল রাজনীতিতে বহু বছরের চেনা রেওয়াজ। সে দিক থেকেও এ বারের ভোটদানের হারে তাঁদের পক্ষে ‘ইতিবাচক’ লক্ষণ খুব বেশি দেখছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব।
ভোটদানের হার কম হওয়ার পিছনে ‘গুরুতর ত্রুটি’ আছে বলে অভিযোগ করে রবিবারই নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের ভি ডি সতীশন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অনেক বুথেই প্রবল গরমে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ভোটারদের। অপেক্ষা করে অনেককে ভোট না দিয়ে ফিরেও যেতে হয়েছে। এক একটি ভোটের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে সাধারণ ভাবে যা সময় লাগে, তার চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগেছে এ বার।’’ সতীশনের দাবি, কেন এমন বিলম্ব হল, তদন্ত করে দেখা দরকার। এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদকস(সংগঠন) এবং আলপ্পুঝার কংগ্রেস প্রার্থী কে সি বেণুগোপাল আরও এক ধাপ এগিয়ে অভিযোগ করেছেন, সিপিএম ভোট-প্রক্রিয়াকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ করে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে!
কমিশনের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, ভোট স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে। একমাত্র ভাডাকারা কেন্দ্রের কিছু এলাকার বুথ ছাড়া কোথাও রাত পর্যন্ত ভোট নিতেও হয়নি। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সকলকেই ‘টোকেন’ দেওয়া হয়েছে। ভোট-যন্ত্রে গোলমালের অভিযোগও নেই বলে জানাচ্ছে কমিশন।
ভোটদানের হার সংক্রান্ত তত্ত্বের পাল্টা বলেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ভাডাকারার প্রার্থী কে কে শৈলজা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সিপিএম কেন ভোট মন্থর করাতে যাবে! এটা সিপিএমের কাজ? ভোট কম পড়লেই এলডিএফের সুবিধা, এ সব পুরনো তত্ত্ব। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ভোট বেশি পড়লেও এলডিএফেরই লাভ হতো!’’
কংগ্রেসের অন্দরের আলোচনায় উঠে আসছে, শবরীমালা মন্দির সংক্রান্ত রায়ের প্রভাব গত বার বাম সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে রাহুল প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, এই হাওয়া কাজ করেছিল। তার জেরেই রাজ্যে ২০টির মধ্যে ১৯টি লোকসভা আসন জিতেছিল ইউডিএফ। এ বার সেই বিষয়গুলো কার্যকর নয়। ওয়েনাড়ে রাহুলের জয় নিয়ে সংশয় না থাকলেও ভাডাকারা, ত্রিশূর, পালাক্কাড, আট্টিঙ্গলের মতো কিছু আসন হাতছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে কংগ্রেস শিবিরে।
ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তিরুঅনন্তপুরমে এখনও আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেননি সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা এলডিএফের আহ্বায়ক ই পি জয়রাজনের ছেলের বাড়িতে গত বছর মার্চে তাঁর সঙ্গে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কেরলে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক প্রকাশ জাভড়েকরের সাক্ষাৎ নিয়ে শোরগোল বেধেছে রাজ্য রাজনীতিতে। ভোটের পর্যালোচনার পাশাপাশি ওই বিষয়েও আলোচনা করার কথা সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের। জয়রাজন যদিও বলেছেন, ‘‘এক ‘ব্রোকারে’র (‘দালাল নন্দকুমার’ নামে পরিচিত) সঙ্গে আমার ছেলের বাড়িতে যদি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আসেন, আমি কি বলব চলে যান! রাজনীতি নিয়ে ওঁর সঙ্গে কোনও কথাই হয়নি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এটা নিয়ে হইচই করা হচ্ছে।’’