আমিনুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত।
সন্দেশখালির এসডিপিও আমিনুল ইসলামকে ভোটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়াও আরও দুই পুলিশকর্তাকে তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার ও রহড়া থানার আইসি। মঙ্গলবার জোড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে কমিশন। বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বসিরহাট জেলা পুলিশের মিনাখাঁর এসডিপিও পদ থেকে সরানো হয়েছে আমিনুলকে। উল্লেখ্য, মিনাখাঁ মহকুমার অধীনেই রয়েছে সন্দেশখালিও। বর্তমানে সন্দেশখালি রাজ্য রাজনীতিতে চর্চ্চার বিষয়। এই এসডিপিও-র বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সুর চড়িয়েছিল। তাই তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। শেখ শাহজাহান ও তাঁর অনুগামীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে ইতিমধ্যেই বসিরহাট জেলা পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। আর সেই আবহেই পুলিশকর্তা আমিনুলকে বদলি করল কমিশন।
অন্য দিকে, সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাওকেও তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে জানানো হয়েছে, তাঁকে আর ভোটের কাজে ব্যবহার করা হবে না। পাশাপাশি রহড়া থানার আইসি দেবাশিস সরকারকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, যে সমস্ত লোকসভা ভোট শেষ দফায় হচ্ছে, সেই সব এলাকা থেকেই এই পুলিশকর্তাদের বদলি করা হয়েছে। মিনাখাঁর এসডিপিওর কর্মপরিধি ছিল বসিরহাট লোকসভার মধ্যে। তাঁকে সেই দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। জয়নগর ও মথুরাপুর লোকসভা এলাকার পুলিশ সুপারের দায়িত্বে ছিলেন কোটেশ্বর। আবার দমদম লোকসভার অধীন রহড়া থানায় কর্মরত ছিলেন আইসি দেবাশিস। এই জায়গায় কাদের পাঠানো হবে, রাজ্যকে তাঁদের নাম সুপারিশ করতে বলা হয়েছে বলেই সূত্রের খবর।
ষষ্ঠ দফার নির্বাচনে পুরুলিয়া ও পূর্ব মেদিনীপুরে ভোটের আগে রবিবার একযোগে এক এসপি-সহ চার পুলিশ অফিসারকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তাঁদের মধ্যে তিন জন ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার। কাঁথির এসডিপিও পদ থেকে সরানো হয় দিবাকর দাসকে। ওই জেলার পটাশপুর থানার ওসি রাজু কুন্ডুকে নির্বাচনের কাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল কমিশন। সঙ্গে কমিশন ভূপতিনগর থানার ওসির কাজেও সন্তুষ্ট ছিল না। তাই ওই থানার ওসিকেও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে ধৃতিমান সরকার ও পুরুলিয়ায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পুলিশ সুপার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে কমিশন। পুলিশ সুপারদের সরিয়ে দেওয়ার পর নিজের এক্স হ্যান্ডলে গর্জে উঠেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘রবিবার বিজেপি নেতা সমিত মণ্ডলকে হিসাব-বহির্ভূত নগদ ৩২ লক্ষ টাকা সমেত ধরেছে জেলা পুলিশ। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সভামঞ্চেও দেখা গিয়েছিল। ওই জেলারই এসপিকে সোমবার বদলি করে দিল নির্বাচন কমিশন। এটাই মোদীর গ্যারান্টি। ধর্ষক এবং দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল।’’
এপ্রিল মাসের গোড়ায় সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক লাভলি মৈত্রের স্বামী সৌম্য রায়কেও তাঁর পদ থেকে সরানো হয়। কমিশনের তরফে সৌম্যকে সরানোর কথা জানিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়, অবিলম্বে আইপিএস সৌম্যকে কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পশ্চিম বিভাগের (বেহালা) ডিসি পদ থেকে সরিয়ে কোনও অ-নির্বাচনী পদে রাখতে হবে। তাঁকে যে পদে বদলি করা হবে, তার সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়ার কোনও সম্পর্ক থাকবে না। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশে বদলি নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ধারাবাহিক ভাবে আক্রমণ করছে তৃণমূল। তা সত্ত্বেও সেই বদলি নীতি থেকে সরেনি কমিশন, তা মঙ্গলবার আরও এক বার বুঝিয়ে দিল তারা।