প্রচার শুরু করলেন তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র।
তমলুক ও কাঁথি লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা ছিলই। কাঁথিতে পদ্ম-প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্দে জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিকের নাম চর্চায় ছিল। রবিবার ব্রিগেডে সেই নামেই সিলমোহর পড়েছে। তবে তমলুকে যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করা নিঃসন্দেহে চমক। কোন অঙ্কে এই প্রার্থী নির্বাচন, কেনই বা নন্দীগ্রামের জেলায় একটি আসনে ভূমিপুত্র ও অন্যটিতে কলকাতার মুখ বাছা হল, তৃণমূলেরই অন্দরেই চলছে সেই কাঁটাছেড়া।
তৃণমূল সূত্রে খবর, উত্তম এবং দেবাংশু, দু’জনেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ব্রিগেডের সভায় দেবাংশুর নাম ঘোষণার সময় অভিষেক ‘ভ্রাতৃসম’ বিশেষণও জুড়েছিলেন। তা ছাড়া, তাঁকে প্রার্থী করে দলের তরুণ প্রজন্মকে বার্তা দেওয়া হয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, জেলায় দলের গোষ্ঠী রাজনীতির ঊর্ধ্বে এবং অধিকারী পরিবারের প্রভাব মুক্ত একজনকে বেছে নেওয়ার বিষয়টিও দেবাংশুকে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কাজ করেছে বলে অনুমান। দেবাংশু নিজে বলছেন, ‘‘এই প্রজন্মের একজনকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী করেছেন একটাই কারণে অনেক দৌড়তে হবে আমাকে। সবার পাশে দাঁড়াতে হবে।’’
২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে গেলেও তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী এবং কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী তৃণমূল ছাড়েননি। তবে তৃণমূলের সঙ্গে বাবা-ছেলের দূরত্ব বাড়ে। নিশ্চিত হয়ে যায়, জেলার লোকসভা আসনে আর অধিকারীদের কেউ ঘাসফুলের প্রার্থী হবেন না। সেই শূন্যস্থানে দাবিদার হয়ে ওঠেন জেলার একাধিক নেতা। গত দু’বছরে কাঁথিতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম-সহ স্থানীয় নেতৃত্বের সমন্বয়ের দ্বায়িত্বে রয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষ। আর গতবছর দলের আরেক রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষকে জেলায় ‘বিশেষ দ্বায়িত্ব’ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল । লোকসভায় কাঁথির প্রার্থী হিসেবে উত্তমের পাশাপাশি তন্ময়ের নামও চর্চা ছিল। শোনা যাচ্ছিল কুণালের নামও। শেষ পর্যন্ত ‘ভূমিপুত্র’কেউ উত্তম মনে করেছে দল। আর তমলুকে প্রার্থিপদের দৌড়ে ছিলেন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, তমলুকের পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় ও তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা চেয়ারপার্সন চিত্তরঞ্জন মাইতিও। দুই প্রবীণ নেতা সৌমেন ও চিত্তরঞ্জনের পাশাপাশি প্রায় ২৪ বছর ধরে পুর প্রতিনিধি পদে থাকা দীপেন্দ্রনারায়ণ তাম্রলিপ্ত রাজপরিবারের সদস্য হিসেবেও পরিচিত মুখ। তবে ওই তিন নেতারই যেমন ঘনিষ্ঠ ও অনুগামীরা রয়েছেন, আবার বিরোধী গোষ্ঠীও আছে। ফলে তাঁদের কোনও একজনকে প্রার্থী করলে কোন্দলের প্রবাব ভোটবাক্সে পড়ার আশঙ্কা ছিল। তবে সৌমেন, দীপেন্দ্রনারায়ণ ও চিত্তরঞ্জন একই সুরে বলছেন, ‘‘দলের প্রার্থীকে জেতাতে সর্বতোভাবে চেষ্টা করব।’’
ইতিমধ্যে কলকাতার হাই কোর্টের বিচারপতি পদে ইস্তফা দেওয়া অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তমলুকে বিজেপি’র প্রার্থী হবেন, এই জল্পনা শুরু হয়ে যায়।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অভিজিতের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবদের দিয়েই লড়বে তৃণমূল। অভিজিতের নাম ঘোষণা এখনও হয়নি। তবে যুবনেতা হিসেবে এই আসনে দেবাংশুকে বেছে নিয়েছে তৃণমূল।
রবিবার নাম ঘোষণার পরে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দেবাংশু সোমবারই তমলুকে আসেন। প্রথমে নিমতৌড়িতে তৃণমূল জেলা কার্যালয়ে প্রাথমিক বৈঠকের পরে কাছেই দেওয়াল লিখনে হাত লাগান। পরে সাংবাদিকদের দেবাংশু বলেন, ‘‘এখানে প্রার্থী হতে পেরে ভাল লাগছে। আগে মিটিং-মিছিল করেছি। ফলে আমার কাছে অচেনা মাটি নয়। নেতা-কর্মীরা পরিচিত। তমলুকের মানুষ আমাদের সাথে আছে।’’ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা নিয়ে দেবাংশুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘তিনি যদি প্রার্থী হন স্বাগত জানাচ্ছি। অন্য বিরোধী প্রার্থীদেরও স্বাগত জানাচ্ছি।’’