মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারিয়ে কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সরকার হলে তিনি বাইরে থেকে সমর্থন করবেন বলে আগে মন্তব্য করেছিলেন। বিতর্কের মুখে পরে আবার বলেছিলেন, তাঁর কথার ‘ভুল ব্যাখ্যা’ হয়েছে। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, তাঁদের সমর্থন নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সরকার হলে ‘শর্ত’ থাকবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) বাতিল করার।
সপ্তম দফার ভোটের আগে রবিবার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সোনারপুরে এবং যাদবপুরে জোড়া সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। খারাপ আবহাওয়ার জন্য তাঁর পদযাত্রা অবশ্য বাতিল হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যেই চলেছে সভার কাজ। দীর্ঘ ভোট-পর্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশিই মমতা বলেছেন, ‘‘এই দুর্যোগের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আর কেউ মিটিং করতে পারবে না! এটা শুধু বাংলা পারে।’’ সেই সঙ্গেই যাদবপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের বিদায়ী সাংসদ মিমি চক্রবর্তীকে এলাকার মানুষ সে ভাবে পাননি বলেও মেনে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এ বারের প্রার্থী সায়নী ঘোষের সমর্থনে সোনারপুর স্পোর্টিং ইউনিয়নের মাঠের সভা থেকে মমতার মন্তব্য, ‘‘আগের সাংসদকে আপনারা সে ভাবে পাননি। অবশ্য দোষ ওর নয়। ও অভিনয়ের কাজে ব্যস্ত ছিল। দোষ আমাদেরই। তবে সায়নী কিন্তু এলাকায় পড়ে থেকে কাজ করবে।’’
জোড়া সভা থেকেই বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কড়া আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। অভিযোগ করেছেন, বিজেপির সরকার এনআরসি নিয়ে আসবে, সকলের শংসাপত্র বাতিল হবে এবং সকলেই জেলে থাকবে। যাদবপুরে তাঁর ঘোষণা, ‘‘এনআরসি করবেন, সিএএ করবেন, ইউসিসি করবেন। আমি একটাও করতে দেব না। তোমার ধমকানি, চমকানিতে আমার কিছু যায় আসে না!’’ এই সূত্রেই তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমাদের সমর্থন নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট সরকার তৈরি করবে। তৈরি (সরকার) করার পরে আমার শর্ত থাকবে, এনআরসি বাতিল করো, সিএএ বাতিল করো, ইউসিসি বাতিল করো!’’ তার সঙ্গেই মমতা যোগ করেছেন, ‘‘মোদী যাক, সংবিধান থাক। শান্তি থাক। এই ভোটে হারাতে না পারলে আর কোনও দিন ভোট করতে দেবে না!’’
বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র সরকার গঠন নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর নানা মন্তব্য নিয়ে পাল্টা সরব হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘এটা আবার নতুন নাটক! শর্ত! বিজেপি-বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সব দলই সিএএ বা এনআরসি-র বিরুদ্ধে, এটাই ঘোষিত অবস্থান। এতে আবার শর্ত দেওয়ার কী আছে? শর্ত চেয়েছেই বা কে? ওঁর অবস্থা গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ভোটের সময়ে মোদী এবং দিদি সিএএ, এনআরসি এ সব ব্যবহার করেন বিভাজনের ফায়দা তোলার জন্য। দিদি বাংলায় ২০২১ সালে তার ফায়দা পেয়েছেন। এখন বুঝতে পারছেন কংগ্রেস ও বামেরা উঠে আসায় সংখ্যালঘুদের সব সমর্থন তিনি পাচ্ছেন না। তাই সংখ্যালঘু ভোটের দিকে তাকিয়ে এই সব কথা বলছেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘শর্ত দিচ্ছেন কাকে? ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যে জাতীয় দুই দল কংগ্রেস ও সিপিএম-সহ সকলেই সিএএ বা ইউসিসি-র বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী শুরু করেছিলেন কংগ্রেস ৪০টা আসনও পাবে না বলে। তার পরে বিজেপির হাওয়া খারাপ দেখে বললেন বাইরে থেকে সমর্থন। এ বার এটা। ট্রেন থেকে নেমে গিয়ে নানা শর্ত এখন দিচ্ছেন আবার উঠবেন বলে!’’
মমতা অবশ্য এ দিন ফের বলেছেন, বাংলায় কোনও জোট নেই। ‘বিজেপির বন্ধু’দের সঙ্গে রাজ্যে তাঁরা কোনও জোটে নেই। সিপিএম ও কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তৃণমূল নেত্রীর কটাক্ষ, ‘‘কিছু করলেই কোর্টে যাচ্ছে! বিজেপি আছে। আরও দুই হার্মাদ আছে। সিপিএম, কংগ্রেস। ওরা কোর্টে লড়ুক! আমি ভোটে লড়ব।’’ আর প্রধামন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘হিটলারি কায়দায় দেশটাকে শেষ করে দেবেন। মোদী যাক, দেশ থাক!’’