ভোট দিয়ে বেরিয়ে রথিবালার মেয়ে সঞ্জু আড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল ৯টা। থমথমে মুখ, চোখের কোনায় জল। হাতে ভোটার কার্ড ধরে লাইনে দাঁড়ালেন। যদিও রথিবালার মেয়ে সঞ্জু আড়িকে দেখেই জায়গা ছেড়ে দিলেন অন্য ভোটারেরা। ‘ভোট পূর্ববর্তী হিংসা’য় মাকে হারানো সঞ্জু ভোট দিয়ে বেরিয়ে বললেন, ‘‘বাড়ির বাকিরাও ভোট দিতে আসছে।’’
গত বুধবার রাতে বিজেপির মহিলা কর্মী রথিবালাকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় লোকসভা ভোটের মধ্যে আবার শিরোনামে নন্দীগ্রাম। এখনও থমথমে রথিবালার গ্রাম। তাঁর মেয়ে সঞ্জু এক জনের স্কুটিতে চেপে ভোট দিতে এসেছিলেন। জানালেন, গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে মায়ের মৃত্যুর জবাব দিচ্ছেন তিনি।
নন্দীগ্রামের গড়চক্রবেড়িয়া থেকে সোনাচূড়াগামী সড়ক ধরে প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলে মনসা বাজার। ভোটের দিন সকালে দেখা গেল বাজারে তেমন লোক নেই। পুলিশের একটি দল টহল দিচ্ছে রাস্তায়। ওই মূল রাস্তার ডান দিক থেকে ছোট্ট পাকা রাস্তা ধরে প্রায় আড়াই কিলোমিটার হাঁটাপথ ধরে এগিয়ে গেলেই রথিবালাদের বুথ। সাউদখালি জলপাই গ্রামের এই রাস্তায় ঢুকতেই অদ্ভুত এক থমথমে পরিস্থিতি মালুম হয়। গোটা এলাকায় চোখে পড়ছে বিজেপির পতাকা।
আপাত সুনসান ওই রাস্তায় মাঝেমধ্যেই সামান্য জটলা করে দাঁড়িয়ে দু’-তিন জন গ্রামবাসী। অচেনা লোক দেখলেই চোখের চাউনিতে সন্দেহ তাঁদের। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখে কয়েক জন বলে উঠলেন, ‘‘ভোট তো শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। আপনারা কেন এখানে এসেছেন? এমনিই অশান্তি বাড়ছে...।’’ ওই রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে ভজহরি বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল বুথের আগেই ছোট্ট একটি জটলা। ভোটারদের তালিকা হাতে বসে আছেন এক ভোটকর্মী। সেই জটলার কয়েক হাত দূরে বুথের সামনে ভোটারদের লাইন। রোদে যাতে অসুবিধে না-হয়, তার জন্য মাথার উপর ত্রিপলের ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলাদা ভাবে দাঁড়িয়ে মহিলা এবং পুরুষ ভোটারেরা। বুথের বাইরে সতর্ক প্রহরায় মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর চার জওয়ান। সেখানেই সকাল সকাল ভোটদান করলেন রথিবালার মেয়ে সঞ্জু। তাঁকে দেখেই দ্রুত বুথের ভিতরে যাওয়ার রাস্তা ছেড়ে দিলেন অন্যরা। ছলছল চোখে ভোট দিয়ে বেরিয়ে সঞ্জুর মন্তব্য, ‘‘মায়ের আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় গোটা পরিবার ভেঙে পড়েছে। বাড়িতে দুই দাদা এবং বৌদি। বড় দাদা সঞ্জয় গুরুতর জখম হয়ে কলকাতায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। বাড়িতে ওর স্ত্রী আর দুই শিশু আছে। আর এক দাদা এবং তার স্ত্রী-ও বাড়িতে আছে।’’ এক নিঃশ্বাসে বলে একটু থামলেন সঞ্জু। তার পর আবার বললেন, ‘‘আমি আগে এলাম। বাড়ির বাকি সবাই ভোট দিয়ে যাবে। ইভিএমেই মায়ের মৃত্যুর জবাব দিচ্ছি।’’ এটা বলে আর দাঁড়ালেন না সঞ্জু। স্কুটি চেপে বাড়ির পথ ধরলেন।