ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের পথে মহিলা ভোটকর্মীরা। পুরুলিয়া সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। ছবি: সুজিত মাহাতো।
বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়া তিন লোকসভা কেন্দ্রে এ বারও কি পদ্ম ফুটবে? না কি ঘাসফুল? কংগ্রেস ও সিপিএমের উপরে কি জনতা জনার্দনের মন ঘুরবে? এই সব প্রশ্নের মধ্যেই আজ, শনিবার রাঙামাটির তিন কেন্দ্রে ভোটারের মনের ছাপ পড়তে চলেছে ইভিএমে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের তুলনায় এ বার প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। গতবার ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট না দিতে পারায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ, পাড়ায় পাড়ায় যুব সম্প্রদায়ের মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শোনা যেত (বিশেযত পুরুলিয়ায়)। এ বার দুই বিষয়েই তুলনায় কিছুটা ভাটা রয়েছে। তুলনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে নিয়োগ থেকে রেশন, কয়লা, বালি দুর্নীতি, কেন্দ্রের প্রকল্পে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের একশো দিনের কাজ থেকে আবাস প্রকল্পে বরাদ্দে বঞ্চনার অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল। অন্যদিকে, সিপিএম ও কংগ্রেস কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতি, বেকারত্ব থেকে মূল্যবৃদ্ধি, অতিমারি পর্বে লোকাল ট্রেনকে মেল-এক্সপ্রেস করে দিয়ে ভাড়া বৃদ্ধির নামে ‘ভাঁওতাবাজির’ অভিযোগে সরব হয়ে সাধারণ মানুষের মন ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে। তবে তৃণমূলের বড় ভরসা লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপভোক্তা মহিলারা।পাল্টা বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে অন্নপূর্ণা প্রকল্পে বেশি টাকা মহিলাদের দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছে।
এ সবের মধ্যে বিশেষত পুরুলিয়া জেলায় বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের দ্বন্দ্ব, বিজেপির বিভিন্ন বুথে সাংগঠনিক দুর্বলতাও দুই দল কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে, সে দিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। পাশাপাশি, বাম তথা সিপিএমের গত কয়েক বছরে নানা কর্মসূচিতে যে ভিড় দেখা গিয়েছে, তা কতটা ভোট-ব্যাঙ্ক ফেরাতে সহায়ক হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
ঘটনা হল, পুরুলিয়া কেন্দ্রে জোট ভেঙে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দিয়ে পৃথক ভাবে লড়ছে। তেমনই পুরুলিয়া কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে সভা, মিছিলে সিপিএম কর্মীদের ভিড়ও দেখা গিয়েছে। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীরাও কতখানি দাগ কাটেন, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পুরুলিয়া কেন্দ্রে এ বার আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোয় অন্য মাত্রা যোগ হয়েছে। জাতিসত্তার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অজিতের ঝুলিতে নিজেদের সম্প্রদায়ের ভোট গেলে কার শিঁকে ছিঁড়বে, তা নিয়েও চর্চার অন্ত নেই। বাম-কংগ্রেস জোটে ভোট ফিরলে, তাতে কি বিজেপি বেকায়দায় পড়বে?
নজর থাকবে প্রাক্তন দম্পতি বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ ও তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। পাঁচ বছর আগে সুজাতা একাই প্রচার চালিয়ে স্বামী (তখনও বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি) সৌমিত্রকে জিতিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। এ বার সেই সৌমিত্রকে হারাতে পারবেন সুজাতা?
সব দলই অবশ্য জমি ছাড়বে না বলে দাবি করছে। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির দাবি, “শুধু বিজেপির ভোটই নয়, তৃণমূলেরও একটা বড় অংশের ভোট এ বার সিপিএম পাবে।’’
অন্য দিকে, পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘দলের দ্বন্দ্ব, বিরোধীদের রটনা। আমরা সবাই এককাট্টা। পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখেই পুরুলিয়া কেন্দ্র আমরা এক লক্ষের বেশি ভোটে জিতে আছি। অন্যেরা দিবাস্বপ্ন দেখছেন।’’ বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘তিন কেন্দ্রই যে বিজেপি দখলে রাখছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার পরে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ পাল্টা সিপিএম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপির বাইরে মানুষ এ বার তৃতীয় বিকল্প শক্তি চাইছে। বিশেষ প্রচারে তরুণ প্রজন্মের ভিড়ে সেটাই দেখতে পাচ্ছি।’’ মানুষের রায় জানা যাবে ৪ জুন।