—প্রতীকী ছবি।
ভোটের মাঠে সরাসরি না থাকলেও পর্দার আড়াল থেকে ভূমিকা নেন যথেষ্টই— খনি অঞ্চলের রাজনীতিতে তেমনটাই খবর। ‘পছন্দের’ পক্ষকে জেতাতে অর্থ ও লোকবলের জোগান দেন তাঁরা, আসানসোল-রানিগঞ্জের ভোটে কয়লার অবৈধ কারবারিদের সম্পর্কে এ কথা চালু রয়েছে দীর্ঘদিন। তাঁদের সমর্থনের সূত্র ধরে ভোট-ময়দানে এগিয়ে কোন পক্ষ, তার খানিক আঁচও মেলে। তবে এ বার সেই আঁচ পাওয়া মুশকিল বলে দাবি ওই কারবারে জড়িত একাংশেরই। তাদের দাবি, এ বার জল বেশ গভীর। আন্দাজ পাওয়া মুশকিল হওয়ায় ঘুঁটি সাজিয়ে রাখতে হচ্ছে নানা তরফেই। এমনকি, ভোটের মাঠ থেকে খানিক দূরত্বও রাখছেন তাঁদের কেউ কেউ, খনি এলাকার বাতাসে এমনই খবর।
খনি অঞ্চলের ভোটে কয়লা মাফিয়াদের যোগের অভিযোগ ওঠা শুরু হয় নয়ের দশকের শেষ দিক থেকে। কারবার চালাতে পোক্ত রাজনৈতিক পক্ষের ‘ছত্রছায়ায়’ থাকার প্রয়োজন পড়ে তাঁদের। প্রতিদান হিসেবেই ভোটে ‘সাহায্যের’ হাত বাড়িয়ে দেন তাঁরা। নানা সূত্রের দাবি, সেই ভাবেই বোঝাপড়া চলত। কিন্তু ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের ফল দেখে পালাবদলের আঁচ পেয়ে দুর্গাপুর লাগোয়া এলাকার এক হোটেলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে বৈঠক করেন কয়লা কারবারের মাথারা। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পরে অবশ্য আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট গড়ে এই অঞ্চলে কয়লা পাচার রুখতে কিছু পদক্ষেপ করেছিল তৃণমূলের সরকার। কয়েক জন কারবারিকে গ্রেফতারও করা হয়।
তবে কারবারে জড়িতদের একাংশের দাবি, কারবার থেমে থাকেনি। শুধু সময়ের সঙ্গে সমীকরণ পাল্টে তৈরি হয়েছে নতুন ‘বোঝাপড়া’। ভোটে তাঁদের কী ভূমিকা থাকে? ওই কারবারিদের দাবি, ভোটে ‘সহায়তা’ করা হয় নানা ভাবে।
সভা-মিছিলে লোক সরবরাহ, বড় সভা ভরাতে লোক পাঠানোর খরচ বহন থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থের জোগানও দেওয়া হয়ে থাকে। ভোটের দিন বুথের অদূরে গাড়ি ও লোক মজুতের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে ছাপ্পা বা বুথ ‘জ্যাম’ করতে গিয়ে পার্টির লোকজন সমস্যায় পড়লে তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করা যায়।
ওই কারবারিদের অনেকের দাবি, এ বার এ সব থেকে কিছুটা দূরে থাকছেন তাঁরা। কারণ, কয়লা পাচার নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে চাপ বেড়েছে। কারবারেও খানিক রাশ পড়েছে। পরিস্থিতি বুঝে কোনও পক্ষের বিরুদ্ধে না যাওয়ার তাগিদও তৈরি হয়েছে। তাই বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ক্ষেত্রে ‘সাহায্য’ করা হলেও, অন্য বারের মতো ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে না। সেই ‘সাহায্যও’ পক্ষ নির্বিশেষেই করা হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি, যাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা যার হাতেই থাকুক, সমস্যা না হয়।
তৃণমূলের অন্যত্যম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন যদিও বলছেন, ‘‘মাফিয়া দিয়ে ভোটে জেতা যায় না। ভোট দেন মানুষ। সিপিএম প্রায় দেড় দশক মাফিয়াদের ব্যবহার করেছে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মাফিয়ারাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।”
অভিযোগ উড়িয়ে আসানসোলের সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ মদত ছাড়া অবৈধ কয়লা কারবার চলা অসম্ভব। তাই মাফিয়ারা দু’নৌকায় পা রেখে চলছে।’’
বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের পাল্টা দাবি, ‘‘আমাদের আন্দোলনেই কয়লা পাচারের শিকড় উপড়ে ফেলার তদন্ত শুরু হয়। প্রতি ভোটে মাফিয়ারা তৃণমূলের হয়ে ভোট লুট করে। এ বার তা আটকাতে নির্বাচন কমিশনকে আর্জি জানানো হচ্ছে।’’