বুধবার মাঝরাতে বলি অভিনেতা সইফ আলি খানের বাড়িতে ঢুকে আক্রমণ চালায় দুষ্কৃতী। ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় তাঁকে। বৃহস্পতিবার ভোরে মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় অভিনেতাকে।
মুম্বইয়ের বান্দ্রায় বিলাসবহুল এলাকায় ফ্ল্যাট রয়েছে সইফের। সেই ফ্ল্যাটেই গুরুতর জখম হন অভিনেতা। বলিপাড়া সূত্রে খবর, ১২ তলার এই ফ্ল্যাটের অষ্টম তলায় থাকেন তিনি।
মুম্বইয়ের এই ফ্ল্যাটটি নাকি ১০ বছর আগে কিনেছিলেন সইফ। বর্তমানে এই ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য ১০৩ কোটি টাকা। এই ফ্ল্যাটে মোট পাঁচটি বেডরুম রয়েছে। বিশাল ছাদ-বারান্দার পাশাপাশি রয়েছে আরও দু’টি বড় ঘর। গানবাজনার জন্য একটি ঘর এবং অন্য ঘরটি শরীরচর্চা করার জন্য। ছাদে রয়েছে বড় সুইমিং পুলও।
২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে মোট সম্পত্তির তালিকায় নবম স্থানে নাম রয়েছেন সইফ। ২০২৪ সাল পর্যন্ত বলি অভিনেতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১২০০ কোটি টাকারও বেশি।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, অভিনয় করতে ছবিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা পারিশ্রমিক আদায় করেন সইফ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলুগু ছবি ‘দেভারা’র প্রথম পর্বে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে সইফকে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমানে ‘পটৌদী প্যালেসে’ পরিবার-সহ থাকেন সইফ। বলিপাড়া সূত্রে খবর, শাহরুখের ‘মন্নত’-এর বর্তমান বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। অমিতাভের ‘জলসা’র আনুমানিক বাজারমূল্য ১০০ থেকে ১২০ কোটি টাকা। তবে, মূল্যের নিরিখে ‘পটৌদী প্যালেস’ অনেকটাই এগিয়ে। এই প্রাসাদের বাজারমূল্য আনুমানিক ৮০০ কোটি টাকা।
প্রায় ১০ একর জমির উপর তৈরি হয়েছিল পটৌদী প্যালেস। এই প্রাসাদে নাকি দেড়শো ঘর রয়েছে। প্রতিটি ঘরেই নবাবিয়ানার ছোঁয়া। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার নবাব ইফতিকর আলি খান পটৌদী বানিয়েছিলেন পটৌদী প্যালেস।
ইফতিকর সম্পর্কে সইফের ঠাকুরদা হন। সইফের ঠাকুরদা ছিলেন পটৌদীর নবাব। ভোপালের এক বেগমকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায়, বিয়ের আগে ইফতিকর যেখানে থাকতেন বিয়ের পর সেই বাড়িটিই পুনর্নিমাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ভোপালের বেগমের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইফতিকর।
রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি তৈরি করতে চেয়েছিলেন বলে রবার্ট টোর রাসেল নামে এক বিদেশি স্থপতিকে নিযুক্ত করেছিলেন ইফতিকর। ইফতিকরের পর পটৌদী প্যালেসে থাকতে শুরু করেন সইফের বাবা মনসুর আলি খান পটৌদী। খ্যাতনামী একটি হোটেল সংস্থার মালিক ফ্রান্সিস ওয়াজ়িয়ার্গ এবং অমন নাথের সঙ্গে চুক্তিপত্রে সই করেন মনসুর।
১৭ বছরের জন্য পটৌদী প্যালেসকে নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবহার করতে পারে ফ্রান্সিস এবং অমনের হোটেল সংস্থা। ২০১১ সালে মনসুরের মৃত্যুর পর পটৌদী প্যালেস ভাড়া দেওয়া হয় ওই হোটেল সংস্থাকে। মনসুরের মৃত্যুর কিছু দিন পর নাকি পটৌদী প্যালেস ফিরিয়ে দেওয়ার কথা সইফকে বলেছিলেন ফ্রান্সিস। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন সইফ।
সইফ বলেছিলেন, ‘‘ফ্রান্সিস আমায় বলেছিলেন আমার যদি কখনও মনে হয় তা হলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে পটৌদী প্যালেস আবার কিনে নিতে পারি। আমিও ফেরত পেতে চেয়েছিলাম।’’ পটৌদী প্যালেস ফিরে পাওয়ার জন্য নিজের অধিকাংশ সঞ্চয় খরচ করে ফেলেছিলেন সইফ। সাক্ষাৎকারে সইফ বলেছিলেন, ‘‘ছবিতে অভিনয় করে যা টাকা জমিয়েছিলাম তা দিয়ে আবার পটৌদী প্যালেস কিনেছিলাম আমি। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই বাড়ি তো আমারই।’’ সইফ আরও জানিয়েছিলেন, অতীতের সঙ্গে এত সহজে সম্পর্ক ছিন্ন করা যায় না। অন্তত তাঁর পরিবারের কোনও সদস্যই তা পারেন না বলে দাবি করেছিলেন অভিনেতা।
বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবির শুটিং হয়েছে পটৌদী প্যালেসের অন্দরমহলে। তালিকায় রয়েছে একটি হলিউডি ছবিও। ২০২৩ সালে সন্দীপ রেড্ডি ভঙ্গার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘অ্যানিম্যাল’। রণবীর কপূর অভিনীত এই ছবির শুটিং পটৌদী প্যালেসের ইব্রাহিম কোঠির অন্দরমহলে হয়েছে।
নিজের প্রাসাদে নিজের ওয়েব সিরিজ়েরও শুটিংও করিয়েছেন সইফ। ২০২১ সালে আলি আব্বাস জাফরের পরিচালনায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় ‘তাণ্ডব’ নামে একটি সিরিজ়। ‘তাণ্ডব’ ওয়েব সিরিজ়ে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন সইফ।
২০১১ সালে আলি আব্বাস জাফরের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘মেরে ব্রাদার কি দুলহন’। এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় ইমরান খান, ক্যাটরিনা কইফ এবং আলি জাফরকে। কানাঘুষো শোনা যায়, এই ছবির কয়েকটি দৃশ্যের শুটিং হয়েছে পটৌদী প্যালেসের অন্দরমহলে।
‘বীর জ়ারা’ ছবির চিত্রনাট্য অনুযায়ী অভিনেত্রীর বাড়ির ঠিকানা পাকিস্তানে। বলিপাড়া সূত্রে খবর, পটৌদী প্যালেসের ভিতর সেই দৃশ্যগুলি শুট করা হয়েছিল।
২০০৫ সালে কেতন মেহতার পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘মঙ্গল পাণ্ডে: দ্য রাইজ়িং’। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন বলিউডের ‘পারফেকশনিস্ট’ আমির খান। এই ছবির কয়েকটি দৃশ্যের শুটিং হয় পটৌদী প্যালেসের ভিতরে।
২০০৬ সালে রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার পরিচালনায় মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘রং দে বসন্তি’তে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন আমির। ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় পটৌদী পরিবারের কন্যা সোহা আলি খানকেও। বলিপাড়া সূত্রে খবর, এই ছবির গুটিকতক দৃশ্যের শুটিং হয় সইফের প্রাসাদে।
২০০৭ সালে বলি অভিনেতা অনিল কপূরের প্রযোজনায় মুক্তি পায় ‘গান্ধী মাই ফাদার’ ছবিটি। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন অক্ষয় খন্না। পটৌদী প্যালেসের অন্দরমহলে এই ছবির একাধিক দৃশ্য শুট করা হয়েছে বলে বলিপাড়া সূত্রে খবর।
বলিপাড়ার জনশ্রুতি, একটি ইংরেজি ছবির শুটিংও হয়েছে সইফের প্রাসাদে। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া জুলিয়া রবার্টস অভিনীত রোম্যান্টিক ড্রামা ঘরানার ছবি ‘ইট, প্রে, লভ’ ছবিটির শুটিং হয় পটৌদী প্যালেসে।
জিকুই ইন্ডিয়া সূত্রে খবর, সইফের বাড়ির গ্যারাজে রয়েছে দামি দামি গাড়ি। ১.৭১ কোটি টাকা মূল্যের মার্সিডিজ় বেঞ্জ এস৩৫০ মডেলের গাড়ি রয়েছে অভিনেতার।
৮৫ থেকে ৯৫ লক্ষ টাকা বাজারমূল্যের অডি কিউ৭ মডেলের একটি গাড়ি কিনেছেন সইফ। তা ছাড়া ৬২ থেকে ৬৬ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি জিপ র্যাংলার রয়েছে।