প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস করেছি সম্প্রতি। ১১ হাজার কোটির এই প্রকল্প চালু হলে কর্মসংস্থান হবে। বাংলার বিকাশ হলেই দেশের বিকাশ হবে। তাই ২৫ মে জ্যোতির্ময় মাহাতোকে সব বুথে জয়ী করুন। কমল চিহ্নে দেওয়া আপনাদের প্রতি ভোট মোদীর খাতায় যাবে। ঘরে ঘরে যান, বলুন, ‘মোদীজি এসেছিলেন। আপনাদের রাম রাম বলেছেন।’ ভারত মাতা কি জয়। বন্দে মাতরম।’’
মোদী বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার বিকাশে সরকার সচেষ্ট। মোদী বদ্ধপরিকর। জাতীয় সড়ক, ট্রেন লাইনের কাজ দ্রুত হচ্ছে। পুরুলিয়া স্টেশনের সংস্কার, বন্দে ভারত ট্রেন চালুর চেষ্টা করছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘৫০০ বছর পর যখন মন্দিরে রামলালা বিরাজমান হয়েছেন, আপনাদের আনন্দ হয়েছে কি না? বলুন, জয় শ্রীরাম! তৃণমূলের রামের নাম নেওয়া, রামনবমী পালন পছন্দ নয়। ভোটব্যাঙ্কের জন্য আমাদের আস্থার পরোয়া করে না। ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করার জন্যে সব করে। এই তৃণমূল আপনাদের একটা ভোট পাওয়ারও যোগ্য নয়।’’
মোদী বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার ছৌ নৃত্য প্রসিদ্ধ। বিজেপিই ছৌ মুখোশকে জিআই ট্যাগ দিয়ে পুরুলিয়ার পরিচিতির সঙ্গে জুড়েছে। দেশের সংস্কৃতিকে তারা দুনিয়ার কাছে পৌঁছে দিতে চায়। এখানে অযোধ্যা পাহাড় রয়েছে। সীতাকুণ্ডও রয়েছে। প্রভু রামের চরণ পড়েছিল।’’
মোদী বলেন, ‘‘দুঃখের সঙ্গে বলছি, স্বামী বিবেকানন্দ যখন বিদেশে গিয়েছিলেন, ভারতের কথা বলতেন, তখন অনেক মানুষ তাঁর ভক্ত হন। যাঁরা ভারতকে ঘৃণা করতেন, তাঁরা অপমান করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দকে। কিন্তু তিনি মা ভারতীর অভিযান নিয়ে বেরিয়েছিলেন। তিনি ভয় পাননি। বাংলায় আজ এমনই হচ্ছে। নির্বাচনে বাংলার মানুষকে ভয় দেখাতে সব সীমা পার করেছে তৃণমূল সরকার। দেশ, দুনিয়ায় ইস্কনকে সকলে চেনেন। রামকৃষ্ণ মিশন তৈরি করেছিলেন বিবেকানন্দ। সেবার জন্য ভারত সেবাশ্রমকে সারা দুনিয়া চেনে। এই সংগঠনগুলি ভারতের নাম উজ্জ্বল করে। কিন্তু আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সেই ইসকন, ভারত সেবাশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশনকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন। প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছেন এঁদের ভক্তরা। তাঁরা সেবার কাজ করেন। বাংলার সরকার তাঁদের দিকে আঙুল তুলছে। নাম নিয়ে হুমকি দিচ্ছে। এত সাহস! নিজের ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করতে, তোষণ করতে তৃণমূল এত নিচুতে নেমেছে! বাংলার লাখ লাখ মানুষের ভক্তি, ভাবাবেগ নিয়ে এরা ভাবে না। স্বামী বিবেকানন্দ, প্রভুপাদ, প্রণবানন্দ মহারাজের অপমান দেশ সহ্য করবে না। যে সরকার বাংলার মানুষের সংস্কৃতিকে সম্মান করে না, তাদের ভোটের শক্তি দিয়ে সাজা দিন, যাতে ওরা আর সন্ত, সাধুদের অপমান করতে না পারে। ’’
মোদী জানিয়েছেন, তিনি সকল ঘরে কলের জল পৌঁছে দেবেন। পুরুলিয়ার জলসঙ্কট মেটাবেন। ১২ কোটির বেশি ঘরে জল পৌঁছে দিয়েছে মোদী সরকার। পুরুলিয়ায় তৃণমূল করতে দিচ্ছে না।
মোদী বলেন, ‘‘এ বার তৃণমূলকে সরাবই। আমি স্থির করেছি। যাঁরা বহু দিন ধরে বঞ্চিত, মোদী তাঁদের স্থান দিয়েছে। নিজের যোজনার লাভ তুলে দিয়েছে। সকলকে পাকা ঘর দিয়েছে। ভেদাভেদ করেনি। সকলে পেয়েছেন শৌচালয়। বিনামূল্যে চাল দিয়েছে। ভেদাভেদ করিনি। ব্যাঙ্কে খাতা খুলিয়েছি।’’
মোদীর কটাক্ষ, তৃণমূল, কংগ্রেস নেতাদের বাড়ি থেকে যে টাকা মিলছে, তা জীবনে দেখেননি। হাতেনাতে ধরা পড়ে, অথচ গালি দেয় মোদীকে। তিনি বলেন, ‘‘২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে বলছি, দুর্নীতিবাজদের জেলের বাইরে থাকতে দেব না। আপনাদের যারা লুট করছে, তাদের সঙ্গে মোদী ঠিক করছে কি না! এরা গালি দিলেও করা উচিত কি না! যারা লুট করছে, তাদের শাস্তি দরকার কি না! মোদী গ্যারান্টি দিচ্ছে, ৪ জুনের পর নতুন সরকার হতেই এ রকম ভ্রষ্টাচারীদের জীবন জেলে অতিবাহিত হবে। পদক্ষেপ আরও তীব্র হবে।’’
দর্শকাসন থেকে এক জন মোদীর ছবি তুলে ধরেছিলেন। মোদী তাঁকে ছবি নামিয়ে রাখতে বলেন। তিনি বলেন, ‘‘তোলাবাজি, চুরি করা তৃণমূল সরকারের স্বভাব। যে বাংলায় সরস্বতীর পুজো হয়, সেখানে তৃণমূল শিক্ষায় চুরি করে। শিক্ষক নিয়োগে হাজার হাজার যুবকের ভবিষ্যৎ বরবাদ করেছে। সকলকে ধারে ডুবিয়েছে। বাংলার গ্রামে আজ শিক্ষক নেই। বাচ্চাদের ভবিষ্যৎও চুরি করেছে। তৃণমূল, কংগ্রেস একই।’’
মোদী বলেন, ‘‘শাহজাহানকে বাঁচাতে সন্দেশখালির মহিলাদের দোষী বলছে। তাঁদের চরিত্র নিয়ে আঙুল তুলছে। ওঁদের জন্য যে ভাষায় কথা বলছে, তার জবাব বাংলার সব মহিলা দেবেন। ভোটের মাধ্যমে জবাব দেবেন। তৃণমূলকে বরবাদ করবেন।’’
মোদী বলেন, ‘‘মা, মাটি, মানুষের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। তাঁদেরই আর দেখছে না। বাংলার মহিলারা আর তৃণমূলকে ভরসা করেন না। সন্দেশখালিতে যে পাপ হয়েছে, তা পুরো বাংলার মহিলাদের ভাবাচ্ছে। এসসি, এসটি পরিবারের মহিলাদের তৃণমূল মানুষ ভাবে না।’’
মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল জনজাতিদের সংরক্ষণ ছিনিয়ে নিতে চায়। অম্বেডকর ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিরোধিতা করতেন। এরা তাই চায়। কেরলে মুসলমানদের সংরক্ষণ দিচ্ছে। তৃণমূল এই ষড়যন্ত্রে রয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রয়েছে। আপনারা নিজেদের সংরক্ষণ লুট করতে দেবেন? নিজেদের সংরক্ষণ অন্য কাউকে দিতে দেবেন? আপনারা তৃণমূল, কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক নন বলে কেউ পরোয়া করে না।’’
মোদী বলেন, ‘‘বিরোধী জোট সংবিধানকে শেষ করতে চায়। অনুপ্রবেশকারীদের মদত দেয়। ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করতে সিএএ-র বিরোধিতা করে।’’
মোদী জানান, বিকশিত ভারত, আত্মনির্ভর ভারতের জন্য আশীর্বাদ চাইতে এসেছি। কপ্টার থেকে নেমে তিনি চলে গিয়েছিলেন জনসমুদ্র দেখতে। বলেন, ‘‘এত লোক দেখে দর্শন করতে চলে গেছিলাম। দিল্লির এসি ঘরে বসে সব হিসাব করে। এখানে এসে দেখুক, ৪ জুন কী হবে।’’
নমস্কার জানিয়ে ভাষণ শুরু মোদীর। তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়া, জঙ্গলমহল বিজেপিকে অসীম স্নেহ দিয়েছে। আজ মোদী আপনাদের থেকে শুধু ভোট চাইতে আসেননি। বরং সবার কাছে আশীর্বাদ চাইতে এসেছে।’’
জনসভা মঞ্চে উপস্থিত মোদী। মঞ্চের চারপাশ ঘুরে তিনি প্রণাম করেন উপস্থিত জনতাকে। তাঁকে স্বাগত জানান স্থানীয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। মোদীর গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দেন জ্যোতির্ময়। তাঁকে পুরুলিয়ায় তৈরি মুখোশ দেন তিনি। মঞ্চে রয়েছে স্থানীয় ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সুশান্ত মহারাজ।