নরেন্দ্র মোদী। ছবি: ফেসবুক লাইভ থেকে।
দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে বিজেপির প্রচারের অভিমুখ কী হবে, তা অনেক আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। রাষ্ট্রপতির আসনে দ্রৌপদী মুর্মুকে বসানো সময়ে বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আদিবাসী সমাজের ভোটকে বিজেপির ঝুলিতে একত্রিত করেই তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার সোপান তৈরি করতে চান তিনি। সেই সময় থেকে বিজেপি আদিবাসী সমাজকে শ্রদ্ধা করে, উন্নতি চায়— এমন প্রচার শুরু করে দেয় পদ্মশিবির। বৃহৎ সংখ্যায় আদিবাসী ভোটার থাকা বালুরঘাটের প্রচারে এসে সেই বার্তাই স্পষ্ট করে গেলেন মোদী। বিজেপির ইস্তাহার থেকে সন্দেশখালি সব কিছু তাঁর বক্তৃতায় এলেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের কথা বলতে বেশি সময় খরচ করলেন প্রধানমন্ত্রী।
বালুরঘাটে ১৫ শতাংশ আদিবাসী ভোট রয়েছে। সেই সঙ্গে তফসিলি জাতির ভোট প্রায় ২৭ শতাংশ। এই অঙ্ক মাথায় রেখে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তাঁর আসনে মোদীর সভা সঞ্চালনার দায়িত্ব দেন ওই সম্প্রদায়ের দুই প্রতিনিধিকে। আর মোদীও বক্তৃতার শুরু থেকেই স্থানীয় আবেগ ছুঁতে চান। বাংলায় শুরু করা বক্তৃতায় দেশ জুড়ে রামনবমী পালনের কথা যেমন বলেন, তেমনই দক্ষিণ দিনাজপুরের স্থানীয় দেবী বোল্লা কালীর নামও উল্লেখ করেন। এর পরে দলের ইস্তাহার নিয়ে কিছু ক্ষণ বলার পরেই মোদী দলিত, আদিবাসীদের সম্পর্কে বিজেপির ভাবনা বলতে শুরু করেন। একই সঙ্গে সেই প্রসঙ্গে আক্রমণ শানান তৃণমূলকে।
সরাসরি তৃণমূলকে আদিবাসী বিরোধী বলে দাবি করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘দলিত, আদিবাসী, বঞ্চিতরা তৃণমূলের দাস নয়। আদিবাসী মহিলাদের নিচু করে দেখানো তৃণমূল নিজেরাই নিচু হয়ে যাবে।’’ এর পরে স্থানীয় আবেগ ছুঁতে চেয়ে মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার বালুরঘাটের মতো সীমান্তবর্তী এলাকা, যেখানে আদিবাসী বেশি, সেখানে মানুষকে জেনে বুঝে গরিব করে রেখেছে। রোজগারের সুযোগ করতে দেয়নি, চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেয়নি।’’
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় এই এলাকায় তিন মহিলা বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তাঁদের দণ্ডি কাটানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিস্তর চাপানউতর চলে সেই সময়ে। মোদী সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই বালুরঘাটেই তিন আদিবাসী মহিলা বিজেপিতে যোগদান করেন। ফলে তৃণমূলের গুন্ডারা সাজা দিয়েছিল।’’ সেই সঙ্গে দ্রৌপদী মুর্মুর প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘বিজেপিই প্রথম আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছে। অন্য দিকে, তৃণমূলের মতো দল দলিত, আদিবাসীদের বেঁধে রাখতে চায়।’’
উত্তরবঙ্গের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখানো থেকে ক্ষমতায় এলে কী কী সুবিধা দেওয়া হবে— সে কথা বলার পাশাপাশি সন্দেশখালি থেকে এনআইয়ের উপরে হামলার অভিযোগ নিয়েও বার্তা দিয়েছেন মোদী। বালুরঘাটে তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনা সমগ্র দেশ দেখেছে। কী ভাবে তৃণমূল শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছে অপরাধীদের বাঁচানোর, তা-ও দেখেছে। সরকারি জায়গাগুলি তৃণমূলের দুর্নীতির আখড়া হয়ে গিয়েছে। প্রাইমারি শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা কোথাও গেলে তাঁদের উপরে হামলা চালানো হচ্ছে।’’