প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত।
বালুরঘাটে মোদীর মুখে বিদায়ী সাংসদ সুকান্তের প্রশংসা শোনা গেল। তিনি বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন সুকান্ত। এ বার তাই ভোটটা ওঁকেই দিন। রেকর্ড ভোটে জেতান। আর পশ্চিমবঙ্গের প্রতি ঘরে মোদীর বার্তা পৌঁছে দিন।’’ ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে ভাষণ শেষ করেন মোদী।
বালুরঘাটের তাঁতি, কৃষকদের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, তাঁতি, কৃষকদের জন্যও চিন্তা করেছে বিজেপি। ১৩ হাজার কোটি খরচ করে তাঁতি, কৃষকদের উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। পাটচাষিদের লাভের কথা ভেবে বিজেপি ‘জুট আই কেয়ার’ প্রকল্প চালু করেছে। তিন লক্ষ কৃষক এই সুবিধা পাচ্ছেন।
মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিজেদের কাজে গেলে, দুর্নীতিগ্রস্তদের ধরতে গেলে, বাধা দেওয়া হয়। সিএএর বিরোধিতা করছে ওরা, যা আইনি ভাবে নাগরিকত্ব দিচ্ছে শরণার্থীদের। তৃণমূলকে সাজা দিন পদ্ম বোতাম টিপে। ২৬ এপ্রিল সেই সুযোগ রয়েছে।’’
মোদী জানান, তৃণমূল তোলাবাজ, ভ্রষ্টাচারীর আড্ডা। বিজেপি কর্মীদের হত্যা করা হয় রাজ্যে। বালুরঘাটে বুথ সভাপতিকে হত্যা করা হয়েছে। সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর যে অত্যাচার হয়েছে, সারা দেশ দেখেছে। তৃণমূল কী ভাবে সন্দেশখালিতে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে, তা-ও দেখেছে দেশ। মোদীর আরও খোঁচা, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগেও এ রাজ্যে দুর্নীতি হয়েছে।
বালুরঘাটে কী কী ট্রেন পরিষেবা দেওয়া হয়েছে, সে কথা স্মরণ করালেন মোদী। তিনি বলেন, বালুরঘাট স্টেশনকে ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন হিসাবে বিকশিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বালুরঘাট-শিয়ালদহের মধ্যে নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। তাঁর কটাক্ষ, তৃণমূল একটা বিমানবন্দরও এখানে করতে পারেনি। কোনও চেষ্টাই নেই। তিনি জানান, তৃণমূল যত বাধাই দিক, আগামী পাঁচ বছরে বালুরঘাটে উন্নয়ন করবে বিজেপি। এটা ‘মোদীর গ্যারান্টি’। তিনি আরও আশ্বাস দিয়ে বলেন, বন্দে ভারতের মতো ট্রেনও চলবে বালুরঘাটে। হবে জাতীয় সড়ক। বালুরঘাটের মানুষের স্বপ্নই তাঁর স্বপ্ন। তিনি বলেন, ‘‘আপনার স্বপ্নই আমার সঙ্কল্প। আমার প্রত্যেক মুহূর্ত দেশের নামে। ২৪ ঘণ্টা, সাত দিন ধরে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত মোদী আপনার জন্য।’’
মোদী বলেন, ‘‘বালুরঘাটে জনজাতির সংখ্যা বেশি। বাম এবং তৃণমূল সরকার ইচ্ছা করে বালুরঘাটকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করেছে। চিকিৎসার জন্য ভাল হাসপাতাল করতে দেয়নি। যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে দেয়নি। এখানকার যুবকদের অন্য রাজ্যে কাজের জন্য যেতে হচ্ছে। গত ১০ বছরে তৃণমূলের অনেক বাধা সত্ত্বেও বিজেপি বালুরঘাট এবং বাংলার বিকাশের জন্য সব রকম চেষ্টা করেছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘জনজাতি কার্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল। ওরা ভাবছে সব সুবিধা দিচ্ছে মোদী। সব ঘরে পৌঁছচ্ছে জল। জনজাতি গৌরব দিবস পালন করছে বিজেপি। জনজাতি বাচ্চাদের জন্য স্কুল খুলেছে। এই বিজেপিই দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রথম জনজাতি মহিলা রাষ্ট্রপতি করেছে। কিন্তু তৃণমূল জনজাতিদের বেঁধে রাখতে চাইছে। এই বালুরঘাটে তিন মহিলা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তৃণমূলের লোক এসে আটকে দেয়। হেনস্থা করে। এই নির্বাচন ওদের বুঝিয়ে দেবে, বাবাসাহেব অম্বেডকরের লোকতন্ত্রে দলিত, বঞ্চিত জনজাতি তৃণমূলের দাস নয়, হবেও না। জনজাতি মহিলাদের অপদস্থ করা তৃণমূল নিজেই তার শিকার হবে।’’
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস, সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করবে বিজেপি। বিদ্যুতের বিল হবে শূন্য। আগামী পাঁচ বছর বিনামূল্য রেশন দেবে বিজেপি। বাংলায় মেয়েদের আইটি, শিক্ষা, পর্যটনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাড়ি, সিলিন্ডারের সুবিধা পাবেন দেশের সব মানুষ। এতে মঙ্গল হবে আদিবাসী মহিলাদের।
মোদী বলেন, ‘‘গোটা বাংলা বলছে, ৪ জুন ৪০০ পার।’’ ৪ জুন লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা। বিজেপির দাবি, চলতি লোকসভা ভোটে সারা দেশে ৪০০-র বেশি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসবে তারা। সেই নিয়েই স্লোগান দিলেন মোদী।
বল্লা কালীকে প্রণাম জানিয়ে ভাষণ শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘‘এই প্রথম রামনবমী পালিত হবে, যখন অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালা বিরাজমান। তৃণমূল এখানে এই উৎসব বন্ধের জন্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু জয় সত্যেরই হয়।’’
সুকান্ত বলেন, ‘‘পাঁচ বছরের জন্য জনগণ যে দায়িত্ব দিয়েছেন, বালুরঘাটে তা পালন করেছি। ‘সাংসদ-রত্ন’ তকমা ছিনিয়ে এনেছি। মোদী আমাদের দিল্লি যাওয়ার জন্য ট্রেন পাঠিয়েছেন বালুরঘাটে। বালুরঘাট স্টেশনের জন্য ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’’
সুকান্ত বলেন, ‘‘বিশ্বের সব থেকে জনপ্রিয় নেতাকে আমাদের মাঝে পেয়েছি। ভগীরথ গঙ্গাকে মর্ত্যে এনেছিলেন। মোদীজি রামচন্দ্রকে অযোধ্যায় নিয়ে এসেছেন। নবরাত্রির উপোসের মধ্যেই তিনি এসেছেন বালুরঘাটে।’’
দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে স্বাগত জানিয়ে ধ্বনি দেন বিজেপির স্থানীয় মহিলা কর্মীরা। তার পর বক্তৃতা শুরু করেন সুকান্ত।
প্রধানমন্ত্রী এখনও জনসভাস্থলে পৌঁছননি। তবে তার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ সভার মাঠ। মঞ্চে বিজেপির মহিলা কর্মীরা মোদীকে স্বাগত জানিয়ে ধ্বনি দিচ্ছেন। রয়েছেন বালুরঘাটে বিজেপির প্রার্থী তথা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
বালুরঘাটে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের হয়ে সদ্য জনসভা করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার সেখানে জনসভা প্রধানমন্ত্রীর। লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার আগেই রাজ্যের চার জায়গায় সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন ঘোষণার পরে কোচবিহারের ও জলপাইগুড়িতে দু’টি সভা হয়েছে তাঁর।