PM Narendra Modi

বেকারত্বের মতো সমস্যার সমাধান সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, উপদেষ্টার কথায় বেকায়দায় মোদীও

নাগেশ্বরণের মন্তব্য নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় সরকারের কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করছে, নাগেশ্বরণ গত কাল তা-ও বলেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৭:২৭
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

এমনিতেই দেশে বেকারত্বের সমস্যা নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তারই মধ্যে এ বার লোকসভা ভোটের মুখে সরকারকে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে ফেলে কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণের মন্তব্য, বেকারত্বের মতো সমস্ত সামাজিক ও আর্থিক সমস্যার সমাধান করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।

Advertisement

এই মন্তব্য কার্যত লুফে নিয়ে বুধবার কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম থেকে শুরু করে প্রায় পুরো বিরোধী শিবির মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। রাহুল গান্ধী তাঁর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ থেকেই বেকারত্বকে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে তুলে ধরেছিলেন। রাহুল আজ বলেছেন, ‘‘আমি গত কালই প্রশ্ন তুলেছিলাম, মোদী সরকারের কাছে কি কাজের সুযোগ তৈরির কোনও পরিকল্পনা রয়েছে? আজ সরকারের উত্তর এসে গিয়েছে, নেই।’’

নাগেশ্বরণ মঙ্গলবার আইএলও (ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজ়েশন বা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) এবং আইএইচডি-র (দ্য ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট) তৈরি ভারতের কর্মসংস্থান নিয়ে ‘ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট-২০২৪’ প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে বেকারদের মধ্যে এখন ৮৩ শতাংশই তরুণ-তরুণী বা যুবক-যুবতী। এই বেকারদের সিংহভাগই পড়াশোনা-জানা বা শিক্ষিত। রিপোর্ট অনুযায়ী, বেকার তরুণদের মধ্যে শিক্ষিতদের ভাগ ২০০০ সালে ছিল ৩৫.২ শতাংশ। কিন্তু ২০২২ সালেই তা বেড়ে ৬৫.৭ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে।

Advertisement

এই রিপোর্ট প্রকাশের পরেই নাগেশ্বরণ বলেন, সরকার সমস্ত সামাজিক ও আর্থিক চ্যালেঞ্জের সমাধান করতে পারে, এটা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। তিনি যুক্তি দেন, বেকারত্বের মতো সমস্যা সমাধানের থেকে রোগ নির্ণয় করা সহজ। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি করেছেন। এটাই যদি বিজেপি সরকারের অবস্থান হয়, তা হলে বিজেপিকে বলতে হয়, গদি খালি করো।’’ চিদম্বরম কংগ্রেসের লোকসভা ভোটের ইস্তাহার তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘কংগ্রেসের কাছে বেকারত্বের সমস্যা সমাধানের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। ইস্তাহারে তা প্রকাশ করা হবে।’’

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদী বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মোদী জমানাতেই বেকারত্ব ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল বলে জানিয়েছিল সরকারি পরিসংখ্যানই। আইএলও রিপোর্ট জানিয়েছে, বেকারদের মধ্যে এখন ৮৩ শতাংশ তরুণ। গ্রামে তরুণদের মধ্যে মাত্র ১৭.৫ শতাংশ নিয়মিত চাকরির সঙ্গে যুক্ত। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৬ শতাংশ শিল্প বা কারখানায় কর্মরত। ২০১২ থেকে এই হার একই জায়গায় থমকে রয়েছে। আর্থিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত তরুণদের হার ২০১২ সালে ছিল ৪২ শতাংশ। তা ২০২২-এ ৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১২ সালের তুলনায় মোদী সরকারের আমলে বেকারত্বের হার তিন গুণ বেড়েছে।

তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলের মন্তব্য, ‘‘এটাই মোদী গ্যারান্টি। এত দিন ধরে আকাশছোঁয়া বেকারত্বের কথা অস্বীকার করে মোদী সরকার শেষে মেনে নিয়ে বলল, তারা এর সমাধান করতে পারবে না।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মতে, ‘‘কর্পোরেট ও হিন্দুত্বের আঁতাঁত ভারতকে অচল করে দিচ্ছে। ভারতের ভবিষ্যতের স্বার্থে এই সরকারের যাওয়া উচিত।’’

নাগেশ্বরণের মন্তব্য নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় সরকারের কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করছে, নাগেশ্বরণ গত কাল তা-ও বলেছিলেন। কিন্তু বিরোধীদের পাল্টা বক্তব্য, আইএলও-র রিপোর্টই বলছে, মোদী সরকারের কোনও পদক্ষেপে কোনও কাজ হয়নি। রাহুল গান্ধী আজ বলেছেন, ‘‘বিজেপির অর্থই হল বেকারত্ব ও হতাশা। কংগ্রেসের অর্থ কর্মসংস্থানের বিপ্লব। আমরা যুবকদের জন্য ন্যায় হিসেবে ক্ষমতায় এলে ৩০ লক্ষ সরকারি পদে চাকরির গ্যারান্টি দিয়েছি। নতুন কর্মসংস্থানের জন্য স্টার্ট-আপের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলের কথাও বলেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement