Lok Sabha Election 2024

পবনকাণ্ডের মতো অস্বস্তি প্রথম নয় বিজেপির, গত বিধানসভা ভোটেও দু’জন ঘোষিত প্রার্থী সরে দাঁড়ান

দুই আসনে প্রার্থীরা বিজেপির হয়ে ভোটে না দাঁড়াতে চাওয়ায় সঙ্কটে পড়েছিল বিজেপি। সদ্য দলে যোগদান করা এক নেতার কথাতেই এই দু’জনকে প্রার্থী করেছিলেন তাঁরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৮:১০
Share:

পবন সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।

শনিবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে নাম ঘোষণা হয়েছিল তাঁর। কিন্তু রবিবার দুপুরেই ভোজপুরী সিনেমার ‘পাওয়ার স্টার’ পবন সিংহ আসানসোলে ভোটে দাঁড়াতে অস্বীকার করছেন। তা নিয়ে রাজ্য তথা জাতীয় রাজনীতিতেও হইচই পড়ে গিয়েছে। যা লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিতে বঙ্গ বিজেপির কাছে ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে এই বাংলার ভোটে প্রার্থী হিসাবে ঘোষিত হয়েও সরে দাঁড়ানোর ঘটনা পদ্মশিবিরে আগেও ঘটেছে।

Advertisement

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দফায় দফায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। কলকাতার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল দিল্লি থেকে। তৎকালীন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী উত্তর কলকাতা লোকসভার অধীন চৌরঙ্গী বিধানসভায় শিখা মিত্র ও কাশীপুর বেলগাছিয়া কেন্দ্রে তরুণ সাহার নাম ঘোষণা করেছিলেন। নাম ঘোষণার সময় পর্যন্ত দু’জনেই বিজেপিতে যোগদান করেননি। সেই সময় শিখা রাজনীতির ধারে কাছে ছিলেন না। স্বামী সোমেন মিত্রর প্রয়াণের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে থাকলেও, রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক শিখা। আর তরুণ তখনও তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী কাউন্সিলর হওয়ার পাশাপাশি, তাঁর স্ত্রী মালা সাহা বেলগাছিয়া কাশীপুর কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক ছিলেন।

দিল্লি থেকে বিধানসভায় প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পরেই বিবৃতি দিয়ে সোমেন জায়া বলেছিলেন, ‘‘আমার সম্মতি না নিয়ে বিজেপি একতরফা ভাবে আমার নাম ঘোষণা করেছে। আমি ভোটে দাঁড়াতে চাই না।’’ আর তরুণের নাম যখন ঘোষিত হয় সেই সময় তিনি কাশীপুর বেলগাছিয়ার নতুন তৃণমূল প্রার্থী অতীন ঘোষের সমর্থনে মিছিল করছিলেন। মিছিল শেষ হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন, তাঁকে কাশীপুর বেলগাছিয়া কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী করেছে। তরুণ বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন, বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়াবেন না তিনি। তৃণমূলের প্রার্থীর হয়েই ভোট করাবেন তিনি। কাশীপুর বেলগাছিয়া বিধানসভার তিনবারের বিধায়ক ছিলেন তরুণজায়া মালা। তাঁকে সরিয়ে অতীনকে প্রার্থী করে তৃণমূল। তাই তাঁকে টিকিট দেওয়র হয়েছে বলেই মনে করেছিলেন বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। তবে বিজেপির টিকিট প্রত্যাখান করে তৃণমূলে থেকে গিয়েছেন তরুণ। ফলস্বরূপ পুরভোটে তাঁকে ফের কাউন্সিলর পদে টিকিট দেয় তৃণমূল। জয়ী হয়ে বর্তমানে কলকাতা পুরসভার বোরো-১ –এর চেয়ারম্যান করা হয়েছে তাঁকে। শিখাও ২০২২ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন।

Advertisement

ওই দুই আসনে প্রার্থীরা বিজেপির হয়ে ভোট না দাঁড়াতে চাইলে সঙ্কটে পড়েছিল বিজেপি। সদ্য দলে যোগদান করা এক নেতার কথাতেই এই দু’জনকে প্রার্থী করেছিল দল। পরে চৌরঙ্গী আসনে দেবদত্ত মাজি ও কাশীপুর বেলগাছিয়া আসনে শিবাজি সিংহরায়কে প্রার্থী করে মুখরক্ষা করে পদ্মশিবির।

তবে আসানসোল থেকে ভোটে না লড়তে চাইলেও, বিহারের যে কোনও কেন্দ্র থেকে তিনি ভোটে লড়াই করতে চান বলে বিজেপি নেতৃত্বকে জানিয়েছেন ভোজপুরী অভিনেতা পবন। বিহারের আরা লোকসভা এলাকার বাসিন্দা তিনি। সেই আসনে থেকেই বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন পবন। কিন্তু ওই আসন থেকে বর্তমানে বিজেপি সাংসদ রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরকে সিংহ। তাই সেই আসনে পবনের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সম্প্রতি আবার জেডি (ইউ) সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন এই ভোজপুরী সুপারস্টার। এ ক্ষেত্রে জেডি (ইউ)-এর প্রতীকেও বিজেপি এই অভিনেতা-রাজনীতিককে বিহারের ভোটের ময়দানেও দেখা যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ বিহারে ৪০টি লোকসভা আসন হলেও, বিজেপি লড়বে ১৭টি আসনে। যার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে বিজেপি। তবে লোকসভা ভোটের গোবলয়ে রাজ্যগুলিতে পবনের ‘স্টারডম’-কে ব্যবহার করতে চায় বিজেপি। তাই ঘুরপথে বিহার বা উত্তরপ্রদেশের কোনও আসনে তাঁকে প্রার্থী করার কথাও ভাবতে পারেন অমিত শাহ-জেপি ন়়ড্ডারা।

এ ক্ষেত্রে আসানসোল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বিজেপি নেতৃত্বকে। এই আসনের দাবিদার রয়েছেন তিনজন। প্রথমজন বর্তমানে সাংসদ পদে রয়েছেন। যাঁর আসনে এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। একজন মহিলা বিধায়কও আসনসোলে প্রার্থী হতে চান। এ ছাড়াও, আরও একজন আসানসোলের প্রভাবশালী বিজেপি নেতা। যিনি আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement