(বাঁ দিকে) জগন্নাথ সরকার এবং মুকুটমণি অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
দু’জনের দ্বন্দ্বের ইতিহাসটা বেশ পুরনো। তবে রানাঘাট লোকসভার বিজেপি এবং তৃণমূল প্রার্থী অন্য ঢঙে সেই লড়াই শুরু করেছেন। এক জন বিদায়ী সংসদ। চেনা মাঠেই ফের গড় ধরে রাখার লড়াই তাঁর। অন্য জনের লড়াই অচেনা মাঠে নতুন সংগঠনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে মর্যাদার সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার।
আগে মুকুটমণি অধিকারী, জগন্নাথ সরকার বিজেপিতেই ছিলেন। তবে তাঁদের সম্পর্কে শীতলতা ছিল। আর এ বার মুকুটমণির ফুল বদলের পর দু’জনেই যুযুধান। জগন্নাথ গত পাঁচ বছরের সাংসদ। সে হিসেবে লোকসভা এলাকায় তাঁর পরিচিতি যেমন রয়েছে, তেমনই এলাকার ভূগোল এবং রাজনৈতিক সমীকরণ সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল তিনি। অন্তত তেমনটাই জানাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। সেই সঙ্গে পুরনো দলের হয়ে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। ফলে দলের পুরনো সংগঠনকে নিয়েই তাঁর নির্বাচনী লড়াই। আবার প্রায় তিন বছর বিজেপির বিধায়ক থাকার পর তৃণমূলে যোগ দিয়ে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে লোকসভার লড়াইয়ে নেমেছেন মুকুটমণি। সূত্রের খবর, তৃণমূলের সংগঠন তাঁর কাছে কার্যত অচেনা। সেই সংগঠনকে এখন চিনে নেওয়ার পালা।
জেলার রাজনৈতিক মহল বলছে, দু’জনের মধ্যে শত্রুতা হলেও দু’জনের লড়াই ভিন্ন মাঠে। এক জন খেলতে নামছেন চেনা মাঠে। অন্য জন নামছেন সম্পূর্ণ অচেনা মাঠে। তাই পরিকল্পনাও করতে হচ্ছে দু’জনকে ভিন্ন ভাবে। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট এলাকা ভাগ করে দলীয় নেতৃত্ব এবং কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পরিচিতির কাজ সারছেন মুকুটমণি অধিকারী। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, মুকুটমণি অন্য দল থেকে আসায় তৃণমূলের বিভিন্ন জায়গায় যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে তার মধ্যে তিনি পড়বেন না। কারণ, এখনও পর্যন্ত তিনি কোনও শিবিরের বলে চিহ্নিত হননি। এটাকে যেমন তাঁর ইতিবাচক বলে ধরা হচ্ছে, তেমনই নতুন দলে নতুন সংগঠনে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া এবং সেই সংগঠনকে নিয়ে নির্বাচনের লড়াই তাঁর। ফলে এখন জনসংযোগের পাশাপাশি প্রার্থী পরিচিতির উপরই তাঁকে জোর দিতে হচ্ছে। এটা তাঁর পক্ষে নেতিবাচক বলে মনে করছেন কেউ কেউ। নতুন সংগঠনের পক্ষে দাঁড়িয়ে লোকসভা নির্বাচনের মতো চ্যালেঞ্জ পার করাটাও কঠিন হবে বলে দাবি একাংশের। আবার জগন্নাথের ক্ষেত্রে লড়াইটা চেনা মাঠে পরিচিত সংগঠনে এবং নিজের গতবারে জেতা লোকসভা আসনে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। ফলে নতুন করে পরিচিত হওয়ার পরীক্ষা তাঁকে দিতে হচ্ছে না। যে সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে তিনি ভোটে লড়তে যাচ্ছেন সেটাও তাঁর চেনা। এই সুবিধা যদি তিনি পেয়ে থাকেন তবে দলের কোন্দল তাঁকে স্বস্তি দেবে না। দলের মধ্যে জগন্নাথের বিরোধী অনেকে। বিভিন্ন সময় দলের নানা গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে রানাঘাটের বিদায়ী সাংসদের নাম। ফলে চেনা মাঠে খেলতে নামলেও দ্বন্দ্ব সামলানো পরীক্ষাও দিতে হবে জগন্নাথকে।
তৃণমূলের দাবি, মুকুটমণিকে ভাল ভাবে গ্রহণ করেছেন দলের কর্মীরা। বিভিন্ন জায়গাতে সদ্য বিজেপি ফিরে থেকে আসা মুকুটমণিকে ঘিরে উৎসাহ যেমন রয়েছে, তেমনই রানাঘাট লোকসভাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে এগোতে চাইছেন তাঁরাও। গত বারের লোকসভা ভোটে তাঁর নামই প্রথমে ঘোষিত হয়েছিল প্রার্থী হিসেবে। তিনি প্রচার নেমে পড়েছিলেন। মতুয়া সংগঠনের জেলা সভাপতি দায়িত্বও ছিলেন তিনি। দাবি, এই এলাকার রাজনৈতিক সমীকরণ সম্পর্কেও তিনি ওয়াকিবহাল। তাঁর মুখও পরিচিত। মুকুটমণি বলেন, ‘‘সর্বত্রই ভাল সাড়া পাচ্ছি। সবাই পাশে আছেন। এক সঙ্গে ঝাঁপাচ্ছেন। সকলকে সঙ্গে নিয়েই এই লড়াইটা পার হতে চাই।’’
যদিও জগন্নাথের দাবি, ‘‘পুরনো দলের প্রার্থী হওয়া অবশ্যই একটা অ্যাডভান্টেজ। দলবদলটাও মানুষ ভাল ভাবে নেন না। তৃণমূলের সবাই কি তাঁদের প্রার্থীর পাশে থাকবেন?’’