মনোরঞ্জন ব্যাপারী। —ফাইল চিত্র।
কয়েক মাস আগে সমাজমাধ্যমে তাঁর সঙ্গে দলে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বিতন্ডা বৈঠক করে সামাল দেন দলীয় নেতৃত্ব। এ বার দলের একাংশের বিরুদ্ধে তাঁকে কোণঠাসা করার অভিযোগ তুলে বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী ভোটে দলীয় প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানালেন নিজের ফেসবুক পেজে।
হুগলি কেন্দ্র পুনরুদ্ধারে দলীয় প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে সবাইকে ঝাঁপানোর নির্দেশ দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলাগড়ের দায়িত্ব তিনি দিয়েছেন দলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইনকে। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার মনোরঞ্জনের ওই পোস্ট নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। গত লোকসভায় বলাগড়ে ৩৫ হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল। এ বার ফল কী হবে, তা নিয়ে আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করল বিধায়কের অবস্থান। অস্বস্তি তৃণমূলে।
পোস্টে মনোরঞ্জনের অভিযোগ, দলে তাঁর বিরুদ্ধপক্ষ প্রচার করছে, তাঁকে সামনে রেখে নির্বাচন জেতা যাবে না। ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে যাতে প্রার্থী হারলে সব দায় তাঁর কাঁধে চাপানো যায়। বিধায়ক লেখেন, ‘আমি সেই ফাঁদে পা দেব না। তাই নির্বাচন কমিটির সব দায়িত্ব ত্যাগ দিচ্ছি (করছি)।’’ মনোরঞ্জন জানিয়ে দেন, প্রার্থী জিতলে তিনি কোনও কৃতিত্ব দাবি করবেন না। সব (কৃতিত্ব) তাঁদের থাকবে, যে ১৪-১৫ জন তাঁর বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছেন। তিনি সরে থাকলে সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেন, তার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। তাই সরে যাচ্ছেন। সেই ১৪-১৫ জন কারা, তা অবশ্য মনোরঞ্জন স্পষ্ট করেননি।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মনোরঞ্জন বলেন, ‘‘যা বলার ওখানেই বলেছি।’’ দলের তরফে মিটমাটের পরেও পরিস্থিতি শুধরোয়নি? বিধায়কের জবাব, ‘‘আরও খারাপ হয়েছে। অন্যান্য বিধানসভায় যেখানে প্রার্থী ঘুরছেন, সেখানকার বিধায়ক পাশে থাকছেন। বলাগড়ে ঘুরলে কিন্তু আমার জায়গা হয় না। বলাগড়ের বিধায়ক পাশে কখনও থাকতে পারেন না। এ থেকে বুঝে নিন যা বোঝার।’’
ফেসবুকে মনোরঞ্জন জানিয়েছেন, দলের কাছে তিনি একটি গাড়ি চেয়েছেন। তাতে তিনি একা বলাগড় বিধানসভার ১৭টি পঞ্চায়েত জুড়ে উদ্বাস্তু মানুষের কাছে গিয়ে সিএএ, এনআরসি-র বিপদ নিয়ে প্রচার করবেন।
মনোরঞ্জনের অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে অরিন্দম বলেন, ‘‘বিধায়ক ওখানকার নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান। উনি অতিরিক্ত প্রচারের দায়িত্ব নিজে নিয়েছেন। বলাগড়ে অনেক তফসিলি জাতি-জনজাতির মানুষ আছেন। বিজেপি এলে ক্ষতি কী হতে পারে সেটা বোঝাতে সিএএ, এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রচার করতে চাইছেন।’’ চেষ্টা করেও রচনার প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপেরও জবাব দেননি।
মনোরঞ্জনের বক্তব্য নিয়ে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে ভাবে ওদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হচ্ছে, সবাই বুঝতে পারছেন হুগলি আসন ফের বিজেপির দিকে যাচ্ছে। তাই ওদের অনেকে কাদায় নামতে চাইছেন না।’’ বিজেপি নেতা স্বপন পালের কথায়, ‘‘তৃণমূল বিধায়ক দেওয়াল লিখন পড়ে ফেলেছেন যে, হুগলিতে বিজেপিই ফের জিতবে। বলাগড়ে পিছিয়ে পড়বে তৃণমূল। তাই সরে যাচ্ছেন।’’