Lok Sabha Election 2024

নিশীথ প্রশ্নে মমতা বিঁধলেন প্রশাসনকে

অদূর অতীতে মুখ্যমন্ত্রী এর আগেও কোচবিহারে এসে নাম না করে নিশীথকে আক্রমণ করেছিলেন। এ বারে তিনি সেই সূত্রে পুলিশ-প্রশাসনকে নিশানা করলেন।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ , সুমন মণ্ডল 

দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৫১
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

কেন কোচবিহার লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এ বার সেই প্রশ্নে পুলিশ-প্রশাসনকে বিঁধলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘কিসের ভয়? চাকরি যাবে? নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দেবে? তা হলে দু’মাস পরে কী করবেন? না হয় এখনই দিল্লি চলে যান। তা না হলে নিশীথের বাড়ি চলে যান।’’ তার পরেই তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কোচবিহারে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সমস্যা হলে কাউকে ছেড়ে কথা বলব না।’’ তাঁর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য কিছু বলতে চাননি। নিশীথ পাল্টা বলেন, ‘‘যে সব পুলিশকর্মী নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছেন, তাঁদের প্রভাবিত করতে, ভয় দেখাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন মন্তব্য করেছেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে নিরপেক্ষ পুলিশ অফিসারদের পুরস্কৃত করা হবে।’’

Advertisement

অদূর অতীতে মুখ্যমন্ত্রী এর আগেও কোচবিহারে এসে নাম না করে নিশীথকে আক্রমণ করেছিলেন। এ বারে তিনি সেই সূত্রে পুলিশ-প্রশাসনকে নিশানা করলেন। শুক্রবার কোচবিহারের দিনহাটায় সংহতি ময়দানের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘একটা নেতা ১০টা পুলিশের গাড়ি নিয়ে, ২০টা গুন্ডা নিয়ে মোটরবাইক নিয়ে ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়ায় আর মানুষকে ভয় দেখিয়ে বেড়ায়। অথচ প্রশাসন সব দেখেও চুপচাপ বসে থাকে!’’ এর পরে তিনি ‘দানব-দস্যু’ বলে উল্লেখ করে দাবি করেন, ‘‘বিএসএফ, পুলিশের একাংশ (স্থানীয়) আর চোরাকারবারিদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বোমাবাজি থেকে শুরু করে শীতলখুচিতে বিএসএফকে দিয়ে গুলি চালিয়ে ভোটের লাইনে পাঁচ জনকে খুনে মদত দিয়েছে।’’ একই সঙ্গে গরুপাচার, মাদক পাচার, টাকা তছরুপের অভিযোগও করেছেন। তার পরে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তার বিরুদ্ধে নাকি কোনও মামলা নেই। থাকবে কী করে? কারণ, তিনি যে কচি হোম মিনিস্টার।”

এই সময়েই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ-প্রশাসনকে নিশানা করেন। যদিও শেষে সব পুলিশ খারাপ নয় বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘‘তিন-চার জনের নাম আছে। সবাই জানে। বাকিরা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন। আমি স্যালুট জানাই তাঁদের।’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরে পুলিশমহলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কেন এমন কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী, তা বুঝতে পারছি না। আমরা অভিযোগ অনুযায়ী, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।” তবে প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রশাসনকে কড়া বার্তাই দিতে চেয়েছেন মমতা। ভোট মেটার পরে প্রশাসনের উপর থেকে কমিশনের নিয়ন্ত্রণ উঠে যায়। তখন আবার রাজ্যের এক্তিয়ার চলে আসে। তখন চাইলে, যে কাউকে সরিয়ে দিতে পারে নবান্ন— ঘুরিয়ে সম্ভবত সেই হুঁশিয়ারিই তিনি দিয়ে রাখলেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, এখন ভোট সংক্রান্ত পুলিশি এবং প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের বলেই আরও বেশি করে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিকে সামনে এনেছেন। নিশীথ সম্প্রতি প্রার্থী হিসাবে দেওয়া নিজের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কতগুলি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সেই তথ্যকেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। নিশীথের অবশ্য দাবি, এই সব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

নিশীথের পাল্টা বক্তব্য, “হিংসে থেকে এমন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওঁর ভাইপো ছাড়া, অন্য কোনও যুব নেতা উঠে আসার চেষ্টা করলে তাঁদের সম্পর্কে এমন কথা বলেন। ওঁর ভাইপো দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। আগে নিজের ঘর সামলান, তার পরে কোচবিহার সামলাবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement