মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মতুয়া গড়ে সভা করতে এসে অসমে এনআরসি-র পরিণতি স্মরণ করিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে যে কোনও পরিবারের সঙ্গে ‘মানুষের পরিবার’ বড় বলেও মন্তব্য করলেন।
মঙ্গলবার কল্যাণী শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের জনসভায় মমতা দাবি করেন, "ভোট এলেই বিজেপির সিএএ বা এনআরসি-র কথা মনে পড়ে। কারণ মানুষকে ভয় দেখাতে হবে, মতুয়া ভোটগুলো চাই। ভোট এলেই ইউনিফর্ম সিভিল কোড করতে হবে। এর মানেটা তো আপনারা অনেকে জানেন না। এসসি-এসটি সব তুলে দেবে। সংখ্যালঘুদের তুলে দেবে। হিন্দুদেরও তুলে দেবে।" তাঁর আরও মন্তব্য, "অসমে যখন এনআরসি হয়েছিল, ১৯ লক্ষ হিন্দু বাঙালির নাম বাদ গিয়েছিল। মোদী গ্যারান্টি ফোর টুয়েন্টি।"
গত লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্রটি তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। সেই সময় প্রায় এক লক্ষ ১১ হাজার ভোটে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বিজেপির শান্তনু ঠাকুর। আবার এই কেন্দ্রের মধ্যেই রয়েছে নদিয়া জেলার কল্যাণী ও হরিণঘাটা বিধানসভা। এই দুই বিধানসভা বরাবরই মতুয়া এবং তফসিলি অধ্যুষিত বলেই পরিচিত। ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও এই দুই বিধানসভায় নিজেদের জয় নিশ্চিত করে বিজেপি। ফলে কল্যাণী ও হরিণঘাটা থেকে এ বারের নির্বাচনে লিড বাড়ানোর পাশাপাশি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র জয় করাই তৃণমূলের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
মতুয়া-তফসিলি প্রসঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করার পাশাপাশি রাজ্যের তৃণমূল সরকার মতুয়াদের প্রতি কতটা দরাজ, তারও ফিরিস্তি তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, "হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করেছে।" বড়মার অসুস্থতার সময় তিনিই চিকিৎসা করিয়েছেন বলেও দাবি করেন মমতা। এর পরেই সিএএ প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, "মতুয়ারা কি নাগরিক নন? তফসিলি, বৈষ্ণব, আদিবাসী, পাঞ্জাবি, হিন্দু আমরা প্রত্যেকেই নাগরিক। এক জন মতুয়ার গায়েও হাত দিতে দেব না।"
বনগাঁর বিদায়ী সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের নাম না করেও মমতার প্রশ্ন, "শেষ পাঁচ বছরে তাঁর টিকি পাওয়া যায়নি। তিনি নিজে কি বিদেশি হওয়ার জন্য সিএএ-তে জন্য আবেদন করেছেন?" তার পরেই তিনি যোগ করেন, "বড়মার ঘর তালা দিয়ে রেখেছ কেন? ওটাও কি বিক্রি করে খাবে নাকি?" মানুষের পরিবারের চেয়ে কোনও পরিবার বড় নয় বলেও এ দিন হুঁশিয়ারি দেন মমতা।
শান্তনু ঠাকুর পাল্টা বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুরবাড়ির দেবোত্তর সম্পত্তি এবং অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘকে কেন দখল করতে চান, তার উত্তর আগে দিন।" তাঁর দাবি, "ওই ঘরটি তৃণমূলের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। মতুয়ারা সেটি দখল করেছে। মতুয়া ভক্তেরাই সেই ঘরটি ব্যবহার করবেন।"
প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটের বাগদা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন এক সময়ে তৃণমূলে থাকা বিশ্বজিৎ দাস। এ বারের লোকসভার আগে তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। ঠাকুরবাড়ির সদস্য না হয়েও বিশ্বজিতের মতো দলবদলুকেই বনগাঁ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি ও তৃণমূল উভয়ের কাছেই এই কেন্দ্রের ফলাফল নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।