বুধবারের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
বুধবার বারাসতে দলের মহিলা সম্মেলন থেকে সন্দেশখালি নিয়ে তোপ দেগেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সময় নষ্ট না করে তার পরদিনই দলের মহিলা সংগঠনের মিছিল থেকে তার জবাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেশখালিতে ‘কিছু ঘটেছে’ বলে মেনে নেওয়ার পাশাপাশি অনেক ‘ভুয়ো খবর’ বেরিয়েছে বলেও দাবি করেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই সঙ্গে তাঁর সরকারের নীতি জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরে বিধানসভায় ওই বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন মমতা। মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের বক্তৃতায় মমতা বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করে ইডি ঢুকল। সেই নিয়ে গোলমাল করে সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের মধ্যে ঝামেলা লাগানো হচ্ছে। ওখানে আরএসএসের বাসা রয়েছে।’’ সন্দেশখালি ‘অশান্তিপ্রবণ’ এলাকা জানিয়ে মমতা এ-ও বলেছিলেন, ‘‘সেখানে মুখে মাস্ক পরে গোলমাল করা হচ্ছে। বহিরাগতরাই সন্দেশখালিতে এত গোলমাল পাকাচ্ছে।’’
মমতার এই ‘বহিরাগত’ মন্তব্য নিয়েও নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছিল সন্দেশখালিতে। এর পরে কখনও নন্দীগ্রামের সঙ্গে সন্দেশখালির তুলনা নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন মমতা, কখনও দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সন্দেশখালির নাম তাঁর মুখে সে ভাবে শোনা যায়নি। কিন্তু বারাসতে মোদীর সভার পরের দিনই তিনি বললেন, ‘‘বাংলায় জায়গাটার মিষ্টি নাম— সন্দেশ। হিন্দিতে অর্থ ‘সংবাদ’। সেই সন্দেশখালি নিয়ে ভুয়ো সংবাদ দেওয়া হচ্ছে। যে ভাবে কয়েকটি ঘটনা নিয়ে... হতেই পারে কিছু ঘটেছে। হাতের পাঁচ আঙুল তো সমান নয়!’’ এর পরে সরকারের অবস্থান জানানোর পাশাপাশি বিজেপির নিন্দা করে মমতা বলেন, ‘‘অনেক সময় জানতে পারি না আমরা। কিন্তু কোনও ঘটনা চোখে পড়লেই ব্যবস্থা নিই। তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করতেও কার্পণ্য করি না। বিজেপির একটাই কাজ— তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা।’’
সন্দেশখালি নিয়ে ‘ভুয়ো বার্তা’ দেওয়ার নেপথ্যে বাংলাকে বদনাম করার চক্রান্ত রয়েছে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কেন বদনাম করা হচ্ছে বাংলাকে? কালকেও বিজেপি নেতা বলে গেলেন, এখানে নাকি মহিলারা সব চেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার! চ্যালেঞ্জ করে বলছি, বাংলাই একমাত্র জায়গা, যেখানে মহিলারা নিরাপদ, সব চেয়ে বেশি সুরক্ষিত।’’ বারাসতে মোদী বুধবার বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল এই ভূমিতে নারীশক্তির উপর অত্যাচার করেছে। মা-বোনদের উপর অত্যাচার করে তৃণমূল ঘোর পাপ করেছে। সন্দেশখালিতে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে যে কারও মাথা লজ্জায় নুয়ে যায়। কিন্তু তৃণমূলের কিছু যায়-আসে না।’’ তার জবাব দিতেই বিজেপি শাসিত রাজ্যের উদাহরণ টেনে মমতা বলেন, ‘‘বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানে বিচার হয় না! হাথরস, মণিপুরে বিচার হয় না! মণিপুরে যখন মহিলারা জ্বলছিলেন, উলঙ্গ করে তাঁদের ঘোরানো হচ্ছিল, কোথায় ছিলেন বিজেপি নেতারা?’’
নামোল্লেখ না করে মোদীকেই যে তাঁর আক্রমণ, তা বুঝিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বিলকিসের কথা ভুলে গিয়েছেন? কত অসহায় দলিত, সংখ্যালঘু মহিলা, তফসিলি মহিলার বিজেপির হাতে নির্যাতিত হয়েছে। ভয়ে কথা বলতে পারেন না তাঁরা।’’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মিছিলে বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে ভারতীয় মহিলা কুস্তিগিরদের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘খালি বাংলার উপর, বাংলার মেয়েদের উপর এত রাগ কেন? আপনারা মহিলাদের সম্মানের কথা বলেন। সাক্ষী মালিক জলজ্যান্ত প্রমাণ। একজন কুস্তিগির, আপনার দলের সাংসদ অত্যাচার করেছে বলে অভিযোগ। তার পরেও তাঁকে চেয়ারম্যান করা হল!’’
বুধবার মোদী বারাসতের সভা থেকে বলেছিলেন, ‘‘মা-বোনেদের এই রাগ সন্দেশখালিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। পুরো রাজ্যে সন্দেশখালি ঝড় উঠবে।’’ ঝড়ের জবাবে ‘টর্নেডো বার্তা’ দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘বাংলার রূপ জাগ্রত রূপ। বাংলা প্রতিবাদ করতে জানে, প্রতিরোধও করতে জানে। আগামীতে দেশ, বাংলাকে বাঁচাতে হলে গর্জন করতে হবে, রাজনৈতিক টর্নেডো আনতে হবে।’’