জয়ের শংসাপত্র নিচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হা। ছবি: পাপন চৌধুরী।
গত দুই লোকসভা ভোটে ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। তবে দু’বছর আগে উপনির্বাচনে বড় জয় আশা জাগিয়েছিল ঘাসফুল শিবিরে। তেমন বিপুল ব্যবধানে না হলেও, আসানসোল কেন্দ্র ধরে রাখল তৃণমূল। প্রায় ৬০ হাজার ভোটে বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে হারিয়ে দিলেন এই কেন্দ্রের বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা।
এই জয়ের জন্য রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্পগুলিকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। লক্ষ্মীর ভান্ডার তৃণমূলের সাফল্যে বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে ধারণা তাঁদের। বিজেপির আবার অনুমান, সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছে। বামেরা সেই ভোটে খুব বেশি থাবা বসাতে না পারার কারণেই তৃণমূল সুবিধা পেয়েছে, মনে করছেন বিজেপি নেতাদের অনেকে। এ দিন বিকেলে জয়ের শংসাপত্র নেওয়ার পরে শত্রুঘ্ন জানান, সংসদে তিনি আসানসোলের জন্য নিয়মিত সওয়াল করবেন। সুরেন্দ্র কোনও মন্তব্য না করে বেরিয়ে যান।
আসানসোল কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা এলাকার পাঁচটিতেই ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। আসানসোল দক্ষিণ ও কুলটি— এই দুই এলাকায় শুধু এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। পাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, আসানসোল উত্তর ও বারাবনিতে এগিয়ে তৃণমূল। তার মধ্যে পাণ্ডবেশ্বরে ব্যবধান প্রায় ৪০ হাজার ভোটের। বারাবনিতে ২৫ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে শত্রুঘ্ন। কুলটিতে প্রায় ১৫ হাজার ও আসানসোল দক্ষিণে প্রায় ১২ হাজার ভোটে এগিয়ে থেকেছেন সুরেন্দ্র।
বিজেপি সূত্রের দাবি, তারা চারটি জায়গা থেকে এগিয়ে থাকার আশা করেছিল— কুলটি, রানিগঞ্জ, আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ। তার মধ্যে কুলটিতে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকার আশা করলেও, তা হয়নি। তবেআসানসোল দক্ষিণের ফল আশানুরূপ বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। হারের কারণ হিসেবে তাঁদের আরও অভিযোগ, তৃণমূলের চাপা সন্ত্রাস কাজ করেছে। সেই সঙ্গে বিজেপি নেতাদের অনেকে মেনেনিচ্ছেন, কিছু জায়গায় সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে।
সে কারণেই যে সব জায়গা থেকে ‘লিড’ আশা করা হয়েছিল, তা মেলেনি। কুলটি এবং বারাবনিতে প্রচার-পর্বে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলের ঘটনা সামনে আসে। ভোটের দিন দলের একাংশ নিষ্ক্রিয় ছিল বলেও বিজেপির কেউ কেউ মনে করছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি। আমাদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে হবে। কোথায় কোথায় দুর্বলতা রয়েছে তা পর্যালোচনা করা হবে।’’
তৃণমূলের নিচুতলার দাবি, ২০১৪ এবং ২০১৯-এর তুলনায় এ বার দলের অন্দরের ‘কোন্দল’ নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণেই জয় এসেছে। যদিও দলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, আরও ভাল ফল আশা করেছিলেন তাঁরা। দলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা আরও বেশি ভোটে জিততে পারতাম। কিছু কিছু জায়গায় সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য বেশি ভোটেএগোতে পারিনি। সেগুলি নিয়ে কাটাছেঁড়া করব। মলয় ঘটকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’ শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়। মোদীর একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষ রায় দিয়েছেন।’’