Lok Sabha Election 2024

বামের বাক্সে কেমন ভোট, হিসাব সেই অঙ্কে

বর্ধমান পূর্ব লোকসভার মধ্যে এই রায়না বিধানসভা এলাকার এক দিকে দামোদর, আর এক দিকে মুণ্ডেশ্বরী-দ্বারকেশ্বর।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

রায়না শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৪ ০৮:৩৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

পরিবর্তনের বছরেও এই এলাকায় ঘাসফুল ফোটেনি। তবে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে মিলেছিল ৩৪ হাজার ভোটের ‘লিড’। দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে আবার মাত্র ৪৪৮ ভোটে জয় পায় তৃণমূল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে দল আবার এগিয়ে যায় প্রায় ৫৫ হাজার ভোট। গত বিধানসভায় সেই ব্যবধান কমে দাঁড়ায় প্রায় ১৮ হাজারে। গত কয়েকটি নির্বাচনের এই ‘হালখাতা’ যদি লোকসভা ভোটের বিষয়ে কোনও ইঙ্গিত দেয়, তা রায়না বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল নেতাদের হাসি চওড়া করার মতো। তার পরেও শাসকদলের অন্দরে আশঙ্কার ফল্গুধারা বইছে। জেলার কোনও বিধানসভা এলাকায় লাল ঝান্ডার উপস্থিতি যদি চোখে পড়ার মতো হয়, সেটা রায়না। বামের ভোটব্যাঙ্ক কার কাঁটা হবে, চর্চা রয়েছে সে নিয়েও।

Advertisement

বর্ধমান পূর্ব লোকসভার মধ্যে এই রায়না বিধানসভা এলাকার এক দিকে দামোদর, আর এক দিকে মুণ্ডেশ্বরী-দ্বারকেশ্বর। সুগন্ধী, বোরো ধান, আলু ও আনাজ চাষের ক্ষেত্রভূমি এই এলাকা। রাস্তায় দু’ধারে প্রায়ই নতুন নতুন চালকল গড়ে উঠছে। তার ছাই নিয়ে স্থানীয়দের
মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। আবার সুগন্ধী ধান বা গোবিন্দভোগের দাম না পাওয়া নিয়েও চাষিদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তার পরেও আশায় বাঁচে চাষা।

রায়নার ব্যবধানের উপরে বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী শর্মিলা সরকারের লোকসভায় যাওয়ার পথ কতটা মসৃণ হবে, তা নির্ভর করছে। তৃণমূল নেতারা আবার সিপিএম তার ‘শক্তি’ কতটা ধরে রাখবে, সে দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন। জেলার একমাত্র পঞ্চায়েত সিপিএম দখল করেছে রায়না ১ ব্লকের পলাশনে। এ ছাড়া, কয়েকটি পঞ্চায়েতে অনেকগুলি আসন সিপিএম জিতেছে। অনেক বুথে ভাল ভোটও পেয়েছে সিপিএম। এক সময়ে দলের ‘শক্ত মাটি’ পুনরুদ্ধারে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। দলের নেতা জিকরিয়া চৌধুরি বলছিলেন, “বার বার করে বাড়ি বাড়ি যাওয়া, পাড়া-বৈঠকে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বুথ কমিটিতে ৩০-১০০ জনের দল তৈরি করা হয়েছে। প্রতিরোধ করার মানসিকতা নিয়েই আমরা ময়দানে আছি।”

Advertisement

সিপিএমের এই প্রচার তৃণমূলের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। দলের রায়না ১ ব্লকের সভাপতি বামদেব মণ্ডল বলেন, “রাম আর বাম এক নয়, এই ভোটে সিপিএমকে প্রমাণ করতে হবে। পঞ্চায়েতে আমাদের সঙ্গে যুঝে সিপিএম অনেকগুলি আসন পেয়েছে, ভোটও পেয়েছে। সেটাকে ধরে রাখার দায়িত্ব সিপিএমের। সেই ভোট চলে গেলে কী আর এখানকার মানুষ সিপিএমকে বিশ্বাস করবেন?” ব্লক সভাপতির সঙ্গেই ‘ভাইঝি’ বিধায়ক (রায়না) শম্পা ধাড়ার সম্পর্ক ‘আদায়-কাঁচকলায়’, দাবি তৃণমূলের নানা সূত্রের। পরিস্থিতি সামলাতে দলনেত্রীকেও হস্তক্ষেপ করতে হয় বলে খবর। গোটা বিধানসভা এলাকার মধ্যে শম্পাকে শুধু রায়না ২ ব্লক দেখার দায়িত্ব দিয়েছে দল। সেখানেও গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে একটা অংশ ‘নিষ্ক্রিয়’ বলে দাবি।

বিজেপির অন্দরেও ‘দ্বন্দ্ব’ রয়েছে। দল সূত্রের দাবি, নেতাদের মধ্যে পরস্পরকে কোণঠাসা করার ‘ছক’ রয়েছে। কয়েক দিন আগে রায়নার হিজলনার বামুনিয়ায় বিজেপি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারের নেতৃত্বে থানায় বিক্ষোভও হয়। সেখানেও অনেক বিজেপি নেতাকে দেখা যায়নি। দলের অন্দরেই গুঞ্জন, ওই বিজেপি নেতার সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের ‘ভাব’ রয়েছে। যদিও দলের রায়না বিধানসভার আহ্বায়ক সুভাষ পাত্র বলেন, “একটা চোরাস্রোত বইছে। বিজেপিকে দেখা যাবে না, কিন্তু গণনা শুরু হলেই কী হয়েছে বোঝা যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement