ওড়িশা জয় বিজেপির। — ফাইল চিত্র।
বাংলায় কার্যত ব্যর্থ হলেও প্রতিবেশী ওড়িশায় দুর্দান্ত ফল করল বিজেপি। ২১ আসনের পুরীর রাজ্যে বিজেপি একাই দখল করল ২০টি আসন। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি প্রধান নবীন পট্টনায়কের দল একটি আসনেও জয়লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ফলে পরিষ্কার, ওড়িশায় কার্যত দুমড়ে গেল নবীন-সাম্রাজ্য। কংগ্রেসও একটি আসন পেয়েছে ওড়িশায়।
ওড়িশায় লোকসভার মোট আসন ২১টি। বিধানসভায় ১৪৭। গত দু’টি লোকসভা ভোটের ফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ বলছে, ২০১৪ সালে ‘অচ্ছে দিন’-এর ভোটে শ্রীক্ষেত্রের রাজ্যে দাগ কাটতে পারেনি বিজেপি। মোদীরথে সওয়ার হয়েও ওড়িশায় ২০১৪ সালে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র একটি আসন। বাকি ২০টি আসন দখল করেছিল মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের বিজেডি। কিন্তু ২০১৯ সালে পুরীর রাজ্যে সমীকরণ বদলে যায় পুরোপুরি। যে বিজেপি মাত্র একটি আসন পেয়েছিল মোদীর প্রথম ইনিংসে, ২০১৯ সালে তাঁর ‘প্রত্যাবর্তন পর্বে’ সেই ওড়িশাতেই ‘খেলা’ ঘুরিয়ে দেয় পদ্মশিবির। ২১ আসনের মধ্যে বিজেপি দখল করে আটটি আসন। বিজেডি থেমে যায় ১২ আসনেই। আর কংগ্রেস পায় একটি আসন।
সাম্প্রতিক কালে ওড়িশায় বিজেপির সেই ‘উত্থান’ নজর কেড়েছিল। যদিও তার প্রভাব সে বারের বিধানসভা ভোটে পড়েনি। ওড়িশায় লোকসভা ভোটের সঙ্গেই বিধানসভা ভোট হয়। ২০১৯-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেডি একাই পেয়েছিল ১১২টি আসন। বিজেপি ২৩টি এবং কংগ্রেস ন’টি। যা থেকে স্পষ্ট, ওড়িশার মানুষের লোকসভা এবং বিধানসভায় ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে মাপকাঠি এক নয়। এ বারে কী হবে, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল। দেখা গেল, ২১ আসনের ওড়িশায় এ বার বিজেপি একাই জিতে নিল ২০টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে একটি আসন। লোকসভায় কোনও প্রতিনিধিত্বই থাকল না বিজেডির।
এই রাজ্যে বিজেপির মতো জাতীয় দলের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিজেডিকে রুখে দেওয়া। তারই অঙ্গ হিসাবে বছরের গোড়া থেকে রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে বিপুল প্রচার এবং জগঝম্প দেখেছে ওড়িশা। মোদী বার বার এসেছেন রাজ্যে। ভোটের প্রত্যাশিত চিত্রনাট্য মেনে দু’তরফেই ছুটেছে প্রতিশ্রুতির বন্যা। তৈরি ছিলেন নবীনও। বিজেপির ‘মন্দির-কৌশল’কে বিজেডি বোতলবন্দি করার চেষ্টা করে পাল্টা কৌশলে। ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মোদী অযোধ্যায় রামলালার মন্দিরের উদ্বোধন করেন। তার পাঁচ দিন আগে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী নবীন তৈরি হয়েছিলেন। ১৭ জানুয়ারি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেন চার হাজার কোটি টাকায় তৈরি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ‘পরিক্রমা প্রকল্প’ ও ‘শ্রীসেতু’ সংযোগের। সঙ্গে আরও দু’হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির, কোনারকের সূর্য মন্দির, সম্বলপুরের সমলেশ্বরী, পুরীর গুন্ডিচা, রেমুনার ক্ষীরচোরা গোপীনাথ-সহ রাজ্যের প্রত্যেকটি প্রধান মন্দিরের সংস্কারের কাজ। এই তালিকা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, বিজেপির রামমন্দিরের উচ্চকিত প্রচারের মোকাবিলায় নবীন-বাজি ছিলেন পুরীর জগন্নাথদেব। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজল না। পাশাপাশি এসে পড়েছিল আরও একটি বিষয়— সম্বিত পাত্র। পুরীর বিজেপি প্রার্থী ভোটের ঠিক আগে জগন্নাথদেব এবং মোদীকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে লাভের বদলে ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল বেশি। প্রমাদ গুনেছিল বিজেপি। জল্পনা ছিল, ক্ষমা চেয়ে, প্রায়শ্চিত্ত করেও সেই মন্তব্যের ‘গুরুভার’ কি সম্বিত শেষ পর্যন্ত খণ্ডাতে পারবেন? সে কারণেই পুরীর ফলাফলের দিকে বাড়তি নজর ছিল। মনে করা হচ্ছিল, সম্বিতের সেই মন্তব্য ধস নামিয়ে দিতে পারে গোটা রাজ্যে বিজেপির ভোটভাগ্যেই। দিনের শেষে দেখা গেল, লক্ষাধিক ভোটে জিতে শেষ হাসি হাসলেন সম্বিতই। কোনও কৌশলই পুরীর রাজ্যে কাজে লাগল না নবীনবাবুর। বিপুল জয় পেল বিজেপি। আর তিনি শূন্য হয়ে গেলেন লোকসভায়।