—প্রতীকী চিত্র।
দলের প্রার্থীকে জেতালে দুর্গাপুরে বন্ধ পড়ে থাকা সব রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা চালুর কাজ করবে বিজেপি— সোমবার দুর্গাপুরের সভা থেকে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু পাশের কেন্দ্র আসানসোলে এখনও বন্ধ কারখানা বা খনি নিয়ে স্পষ্ট কোনও বার্তা নেই বিজেপির প্রচারে। আসানসোল-রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের বন্ধ প্রকল্পগুলির তাহলে ভবিষ্যৎ কী, প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দারা।
আসানসোলের শিল্পনগরী যথেষ্ট পুরনো ও সমৃদ্ধ। কুলটি ও বার্নপুর ইস্কো কারখানা, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানা, নানা কয়লা খনি শতাধিক বছরের পুরনো। হিন্দুস্থান কেব্লস ও সেনর্যালে সাইকেল কারখানা তৈরি হয় ১৯৫২ সালে। চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস কারখানা (সিএলডব্লিউ) তৈরি হয় ১৯৫০ সালে। বর্তমানে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, হিন্দুস্থান কেব্লস, সেনর্যালে সাইকেল কারখানার মতো নানা শিল্প ছাড়াও ইসিএলের গোটা সাতেক খনি বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রথায় চলছে কুলটির ইস্কো কারখানা। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, সিএলডব্লিউ এবং ইসিএলের প্রায় ১৬টি খনি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্র।
এ ছাড়াও, আসানসোলের পিনক্লিংটন কাচ কারখানা, রানিগঞ্জের বল্লভপুর কাগজকল, জেকে নগরের অ্যালুমিনিয়াম ও আসানসোলের ধাদকা নীল কারখানা বন্ধ পড়ে আছে। একের পর এক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিক-কর্মীরা কাজ হারিয়েছেন। অভিযোগ, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ও খনি সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ায় বেকারত্ব বেড়েছে শিল্পাঞ্চলে। আসানসোল শিল্পাঞ্চলের অর্থনীতি কার্যত ভেঙে পড়েছে।
ভোট আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সমর্থনে দলের কোনও জাতীয় স্তরের শীর্ষ নেতা এখনও প্রচারে আসেননি। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার কর্মসূচি শেষবেলায় বাতিল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা করার কথা শোনা গেলেও, দলের তরফে এখনও নিশ্চিত কিছু জানানো হয়নি। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, প্রচারে বিজেপি প্রার্থীর মুখে আসানসোলের শিল্প-ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও কথা শোনা যায়নি। প্রার্থী সুরেন্দ্র শুধু বলেন, “এখন আমি এলাকায় ঘুরছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা জানার চেষ্টা করছি। তার পরেই কিছু বলা সম্ভব।”
এর মধ্যে দুর্গাপুরে শাহের আশ্বাসের পরে খানিক হতাশ আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা। বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের প্রাক্তন কর্মী তথা বিএমএস নেতা সুনীল সিংহের দাবি, “প্রধানমন্ত্রী আসানসোলে সভা করে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, কেব্লস ও কাচ কারখানা খোলার বিষয়ে ইতিবাচক কিছু বলবেন, এমনটাই আশা রাখি। তা হলে শিল্পাঞ্চলবাসীর হতাশা কাটবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী, যে কেউ বন্ধ কারখানা খোলার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও, তা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হবে না বলে দাবি তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর। তাঁর দাবি, “যে সরকার রাষ্ট্রের সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে, তারা কারখানা খুলবে, এটা অবিশ্বাস্য।” সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীরও দাবি, “বিজেপি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। শিল্প নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।”