ভোট প্রচারে কীর্তি আজাদ। —ফাইল চিত্র।
১৯৮৩-র ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য কীর্তি আজাদকে প্রার্থী করে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি ঝুলিতে পুরতে চেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু ওই কেন্দ্রটি নিয়ে তিনি যে চিন্তিত, বৃহস্পতিবার বর্ধমানে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। আসনটিকে ‘পাখির চোখ’ করতে বলার পাশাপাশি, কয়েকটি ব্লকের নেতৃত্বের ‘মনোভাবে’ তিনি যে ‘ক্ষুব্ধ’, সে কথাও বৈঠকে গোপন করেননি তিনি। বৈঠকে হাজির একাধিক তৃণমূল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি নিয়ে দলের ‘মাথাব্যথা’ রয়েছে। অভিষেক তা বুঝিয়েও দিয়েছেন। পাশাপাশি, বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রটিকেও ‘পাখির চোখ’ করতে বলেছেন তিনি।
এ দিন বর্ধমানের নবাবহাটের কাছে একটি হোটেলের ঘরে দলের ছ’জন বিধায়ক, দলের পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং মন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে বৈঠক শুরু হয়। সূত্রের খবর, দলের পরামর্শদাতা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভায় দল ‘নড়বড়ে’। সে কারণে দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক, রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গড়ে দেন অভিষেক। দু’য়েক দিনের মধ্যে ওই কমিটি বৈঠক করবে। তাঁদের মধ্যস্থতাতেই দল ও দলের শ্রমিক সংগঠন বোঝাপড়া করে চলবে বলে জানিয়েছেন অভিষেক। মলয়কে দুর্গাপুরে বাড়তি নজর দিতে বলেছেন তিনি। সূত্রের খবর, বিধায়ক ও দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বারবার বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটির জন্যে ‘সিরিয়াস’ হতে বলেছেন অভিষেক। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা, গলসি ১ ব্লক, বর্ধমান ২ ব্লকের নেতাদের ‘মনোভাবে’ তিনি ‘ক্ষুব্ধ’। বৈঠকে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসকে অভিষেক জানান, এখনও দলের অনেকে কাজে নামছেন না। ‘এক সঙ্গে’ চলতে হবে। একই বার্তা দেন ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীকেও। অভিষেক বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিককে জানান, বর্ধমান ২ ব্লকের হাল ‘ভাল’ নয়। প্রয়োজনে অঞ্চল কমিটি ভেঙে নির্বাচনী কমিটি গড়তে হবে। প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা চলা ওই বৈঠকের পরে কর্মিসভায় যোগ দেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রের খবর, সেখানে মেমারি ২ ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি মহম্মদ ইসমাইল ব্লক নেতৃত্ব ও বিধায়ককে নিয়ে ‘অনুযোগ’ করেন। তাঁর দলীয় কার্যালয়ে মন্তেশ্বরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর অনুগামীরা তালা মেরে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। দাবি করেন, কোনও কর্মসূচি করতে দেওয়া হচ্ছে না। অভিষেক অবশ্য বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। বরং মন্ত্রীর সঙ্গে চলার নির্দেশ দেন ওই নেতাকে। তবে দলীয় কার্যালয় খোলার আশ্বাস দিয়েছেন অভিষেক। গলসি ১ ব্লকের তৃণমূল নেতা জাকির হোসেনের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, পারাজ, মানকর, পোতনা-পুরষা, লোহা-কৃষ্ণরামপুরে দলের সংগঠন ভাল নয়। তাঁকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। জাকির বৈঠকে অভিযোগ করেন, ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় তাঁকে কাজ করতে দিচ্ছেন না। এর পরেই ব্লক সভাপতির উপরে কার্যত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অভিষেক। সভায় হাজির এক নেতার কথায়, “জাকিরকে ওই চারটি পঞ্চায়েতের সব দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন অভিষেক। গলসি ১ ব্লকের ফল খারাপ হলে তার দায় ব্লক সভাপতির উপরে পড়বে বলে বার্তা দেন তিনি। সে ক্ষেত্রে তিনি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।”
সূত্রের খবর, বৈঠকে বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা এবং বর্ধমান শহরে দলীয় কাজকর্ম নিয়েও অভিষেক ‘বিরক্তি’ প্রকাশ করেন। পুরপ্রধান পরেশ সরকার ও বিধায়ক খোকন দাসকে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে দূরত্ব ও মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে। আপনারা বিষয়টি মিটিয়ে নেবেন।” যদিও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে দুই নেতাই দাবি করেন, তাঁদের সম্পর্কে ‘ফাটল’ ধরেনি। এক সঙ্গেই তাঁরা কাজ করেন।
একাধিক তৃণমূল নেতার কথায়, “বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি তৃণমূলের কাছে এখনও ‘টলমলে’, তা কার্যত অভিষেক জানিয়ে দিয়েছেন। ভোটের শেষ দশ দিন ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন।” ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, “দরজা বন্ধ করেই সভা করতে হবে। মানুষের কাছে আর যেতে পারবেন না। ওঁরা বদ্ধ ঘরেই আটকে থাকবেন।”