গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি শেখ নুরুল ইসলামের হয়ে সভা করতে বসিরহাট দক্ষিণের সংগ্রামপুরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেশখালিকাণ্ডের এই প্রথম বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে এলেন তিনি। শুরুতেই সন্দেশখালি নিয়ে কথা বললেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালির মা-বোনেদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তার জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখিত। মা-বোনেদের নিয়ে যেন অসম্মানের খেলা কেউ না খেলে।’’ এর পরেই বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘মোদীর আমলে দেশে মেয়েদের উপর অত্যাচার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। উত্তরপ্রদেশে একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। বাংলায় মেয়েদের উপর অত্যাচার হয় না। যে দু’-একটা ঘটনা ঘটে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বাংলায় মেয়েদের উপর অত্যাচার করলে কেষ্ট-বিষ্টু, রাম-রহিম— কাউকে ছাড়া হয় না। ’’
সোমবার মমতার বক্তৃতায় এর পাশাপাশিই উঠে এসেছে সন্দেশখালির আরও কথা। সরাসরি উল্লেখ না করেও সন্দেশখালি স্টিং ভিডিয়োর ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘ভোটের আগে কাউকে ২০০০, চক্রান্ত করার জন্য ৫০০০, তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে ওরা, চক্রান্ত করাচ্ছে,... কী ভাবে চলছে আমাদের দেশটা!’’
মমতা এ-ও বলেন যে, ‘‘বিজেপি চক্রান্ত করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয় না।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, ‘‘ভোটের আগে বিজেপির প্ল্যান এ ছিল সন্দেশখালি। বাতিল হয়ে গিয়েছে। মা বোনেরাই বাতিল করে দিয়েছেন। তবে প্ল্যান বি আছে। সাবধানে থাকবেন। ’’
মমতা বললেন, ‘‘হিন্দু-মুসলমান ভাগাভাগি করবেন না। ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পে যখন সবাই রক্ত দেয়, সেই রক্তে হিন্দু-মুসলিম লেখা থাকে না। হিন্দুর রক্ত মুসলিম পায়। মুসলিমের রক্ত হিন্দু পায়। মানুষটা বেঁচে যায়, এটাই আমাদের দেশ।’’
মমতা বললেন, ‘‘শুনুন যেটা আমি বুঝি না, আপনি বোঝেন না, সেটা দেশ বোঝে। দেশ বোঝে বলেই আমাদের কাছে খবর আসছে। আর খবরটা জেনুইন। যে বিজেপি হারছে। ওরা দেশ থেকে যাচ্ছে। এদের কাজ হচ্ছে মিথ্যে প্রচার করা। চারিদিকে বলে গেল তৃণমূল চোর হ্যায়। সবচেয়ে বড় চোর, সবচেয়ে বড় ডাকাত কে? বিজেপি দল।’’
মমতা বললেন, ‘‘যদি আপনাদের মনে হয়, কারও উপরে রাগ আছে, আপনাদের বলার অধিকার আছে। আপনারা একটা চিঠি আমার বাড়িতে পৌঁছে দেবেন। আমি এক দিন হোক দু’দিন হোক, আমি ঠিক দেখে নেব। চিঠিটা আর্জেন্ট হলে আগে করে দেব। সব করতে পারি তা তো নয়। কিন্তু ৯৯.৯ শতাংশ ক্ষেত্রে যতটা করতে পারি, করে দিই। ’’
২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে বসিরহাটেও সরব মমতা। বললেন, ‘‘এক জন বোমা ফাটিয়ে নাচছিলেন ধিন তাক ধিন তাক তা। কী, না ২৬ হাজার চাকরি খেয়েছে!’’ নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ মমতার।
মমতা বলছেন, ‘‘ভোটের আগে কাউকে ২০০০, চক্রান্ত করার জন্য ৫০০০, তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে ওরা, চক্রান্ত করাচ্ছে, এই তো পার্টি অফিস থেকে কোটি কোটি টাকা বার হচ্ছে। আর যে সেটা ধরল, তাকেই নির্বাচন কমিশন সাসপেন্ড করে দিল। কী ভাবে চলছে আমাদের দেশটা। ’’
‘‘বিজেপি চক্রান্ত করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয় না’’, নাম না করে সন্দেশখালির স্টিং ভিডিয়োকাণ্ডে ইঙ্গিত মমতার।
‘‘মোদীবাবু খবরের কাগজে বড় বড় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল মোদীর গ্যারান্টি বলে। আমাদের আক্রমণ করছিল। এটা বেআইনি। আমরা বার বার বিচার চেয়েও পাচ্ছিলাম না। অবশেষে হাই কোর্ট কাল বলে দিয়েছে, হ্যাঁ এটা বেআইনি।’’
বসিরহাটের মাছের ভেড়ি প্রসঙ্গে মমতা বললেন, ‘‘অনেক মাছের ভেড়ি আছে। অনেকে অনেকের ভেড়ি দখল করে নেয়। আমরা তাই একটা পলিসি তৈরি করছি। জোর করে ভেড়ি কেড়ে নেওয়া যাবে না। যার ভেড়ি সে চাষ করুক। না হলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলো চালাক। কিন্তু সরকারের রেকর্ডে নাম রাখতে হবে। সরকারকেও তার জন্য একটা শুল্ক দিতে হবে। তাতে ভেড়িতে অধিকার বজায় থাকবে। ’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে মমতা বললেন, ‘‘আপনার আমলে ভারতবর্ষে মেয়েদের উপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়েছে। দলিতদের উপর অত্যাচার হয়েছে। আমাদের এখানে হয় না। আমাদের এখানে যে দু’-একটা ঘটনা হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নিই। রাম হোক বা রহিম কেষ্ট হোক বা বিষ্টু— সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কাউকে ছাড়া হয় না।’’’
বসিরহাট নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মমতা বললেন, ‘‘এ সব অন্য কথা, এ বার কয়েকটা রাজনৈতিক কথা বলব।’’ এর পরেই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে বললেন, ‘‘২০২১ সালের ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডার করে দেব বলেছিলাম, করেছি। কৃষকদের সাহায্য করার কথা বলেছিলাম করেছি। যা যা বলেছিলাম সব করেছি। বিনা পয়সায় আপনারা রেশন পাচ্ছেন। ১০০ দিনের কাজের টাকাও আমরা দিয়ে দিয়েছি। যেটা মোদীর দেওয়ার কথা ছিল।’’ এর পাশাপাশি ৫০ দিনের কাজ এবং বাংলার বাড়ি প্রসঙ্গেও ঘোষণা করলেন মমতা। দেড় বছরের মধ্যে বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে যাবে বলেও ঘোষণা করলেন মমতা।
মমতার ঘোষণা, ‘‘সুন্দরবন নিয়ে নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি, আপনাদের জেলা নতুন জেলা হবে। বসিরহাটের বেশির ভাগ অঞ্চলগুলি নিয়ে একটা জেলা হবে। ওই দিকে বকখালি, সাগরদ্বীপ নিয়ে আরও একটা জেলা হবে।’’
মমতা বললেন, ‘‘ভোটের আগে বিজেপির প্ল্যান-এ ছিল সন্দেশখালি। বাতিল হয়ে গিয়েছে। মা-বোনেরাই বাতিল করে দিয়েছেন। এখনও প্ল্যান বি জারি রয়েছে। ধর্মস্থানে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করা।’’
বসিরহাটের মঞ্চে শুরুতেই সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টানলেন মমতা। বললেন, ‘‘সন্দেশখালির মা-বোনেদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তার জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখিত। মা-বোনেদের নিয়ে যেন অসম্মানের খেলা কেউ না খেলে।’’