Lok Sabha Election 2024

কাদের ‘সুবিধা’ করতে সরে গেলেন, তোপের মুখে এখন নওশাদেরা

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একাধিক বার দাবি করেছিলেন, ডায়মন্ড হারবারে নওশাদ প্রার্থী হলে অভিষেক তৃতীয় হবেন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৫২
Share:

নওশাদ সিদ্দিকী। — ফাইল চিত্র।

ডায়মন্ড হারবার-সহ রাজ্যের আরও পাঁচ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল বামফ্রন্ট। তবে সেই প্রার্থী ঘোষণা ছাপিয়েও সামনে চলে এল নওশাদ সিদ্দিকীর আইএসএফ-কে নিয়ে বিতর্ক। সমঝোতার বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো প্রার্থী দিয়ে দেওয়ায় আইএসএফের উদ্দেশে জোড়া তোপ দাগছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। আবার ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়াবেন বলেও নওশাদ সেখানে প্রার্থী না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ‘সেটিং’-এর অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। নওশাদ যদিও পাল্টা বলছেন, স্বতন্ত্র দল হিসেবে তাঁরা যা করার, করেছেন। কারও কাছে ‘বিক্রি’ হননি।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন প্রতীক-উর রহমান। ওই কেন্দ্রের জন্য এসএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রতীক-উরের নাম বেছে রাখাই ছিল। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নওশাদ প্রার্থী হলে তাঁকে সমর্থনের পরিকল্পনা ছিল বলে সময় নিচ্ছিল বামফ্রন্ট। শেষ পর্যন্ত আইএসএফ সমঝোতার বাইরে নিজেদের মতো প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ার পরে শুক্রবার বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু ডায়মন্ড হারবারে প্রতীক-উরের নাম জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গেই আরও চার আসনে বাম প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন বিমানবাবু।

উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে সিপিএমের প্রার্থী প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার, ব্যারাকপুরে অভিনেতা দেবদূত ঘোষ, বারাসতে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীর ঘোষ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে সিপিআই প্রার্থী তপন গঙ্গোপাধ্যায়। সিপিএম সূত্রের খবর, উলুবেড়িয়া, বনগাঁ ও কাঁথি আসন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কংগ্রেসের জন্য। সেই সূত্রে কংগ্রেসের আসন দাঁড়াচ্ছে ১২। বামফ্রন্টের প্রার্থী রয়েছে এখনও পর্যন্ত ২৮ আসনে। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর ও মথুরাপুর কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি এখনও। কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা সম্পূর্ণ হলে ওই দুই কেন্দ্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

Advertisement

কংগ্রেস ও সিপিএম সমঝোতার প্রক্রিয়া চালিয়ে গেলেও বিতর্ক বেধেছে আইএসএফ-কে নিয়েই। বিমানবাবু যেমন এ দিন বলেছেন, ‘‘আইএসএফের সঙ্গে অনেক বার আলোচনা হয়েছে। ওরা অনেক আসন চেয়েছিল, ৭-৮টা আসন দেওয়া যাবে না শুনে ওরা মনোক্ষুণ্ণ হয়। তার পরেও আলোচনা হয়েছে। ব্যাপক আসন না পাওয়ায় হয়তো আসেনি।’’ বিমানবাবুর সংযোজন, ‘‘ওদের কথামতো বামেদের উপরে এর দায়িত্ব পড়ে না। রাজ্যে ২০২১ সালে তৈরি হওয়া দল এত আসন দাবি করে কী করে!’’ ডায়মন্ড হারবারে লড়বেন বলেও নওশাদ সেখানে না দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘আইএসএফ নেতা নিজেই লড়বেন বলেছিলেন। এখন কেউ যদি পালাতে চায়, আমাদের কী করার আছে! আইএসএফের সঙ্গে আমাদের আগেও সমঝোতা ছিল না, এখনও নেই। এখন তো মনে হচ্ছে, হায়দরাবাদ থেকে ওয়াইসির ছোট ভাই এসেছে! তারা এখন অনেক কথা বলছে। আসলে ওয়াইসিকে বিজেপি যেমন কাজে লাগায়, এখানেও এদের ভোট কাটতে কাজে লাগাচ্ছে।’’ বিমানবাবুও এ দিন বলেছেন, ওয়াইসির এমআইএম থেকে আসা লোকজনকে আইএসএফ প্রার্থী করেছে বলে তিনিও শুনেছেন।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একাধিক বার দাবি করেছিলেন, ডায়মন্ড হারবারে নওশাদ প্রার্থী হলে অভিষেক তৃতীয় হবেন! আইএসএফ ডায়মন্ড হারবারে অন্য প্রার্থী দেওয়ায় বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা আবার নওশাদের সঙ্গে তৃণমূলের সেটিং-এর অভিযোগ করেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘লোকের গদ্দারির একটা মাত্রা থাকা উচিত। সিপিএমকে, বামফ্রন্টকে নাচিয়েছে। কংগ্রেসকে নাচিয়েছে। নাচিয়ে এতগুলো লোককে টুপি পরিয়ে পুরো অভিষেকের লাইনে খেলে যাচ্ছে! এ তো বৃহত্তর সেটিং!’’ কুণাল ঘোষ-সহ তৃণমূলের নেতারা অবশ্য দাবি করেছেন, অভিষেকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর হিম্মত যে বিরোধীদের নেই, নওশাদের সিদ্ধান্তে সেটাই প্রমাণিত!

আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বাম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ। — নিজস্ব চিত্র।

স্বয়ং নওশাদের দাবি, বিজেপির আমলে দেশে বেকারত্ব বেড়েছে, পেহলু খানেরা খুন হয়েছেন। তৃণমূলের আমলে রাজ্যে দুর্নীতির পাহাড়ে চড়েছে। এই দু’দলের কারও সঙ্গেই তিনি নেই। নওশাদের কথায়, ‘‘যে বিজেপির জন্য বিভাজনের রাজনীতি হচ্ছে, পেহলু খানকে শহিদ হতে হয়েছে। সেই বিজেপির কথায় নওশাদ সিদ্দিকী বা আইএসএফ ওঠাবসা করবে? তৃণমূল কংগ্রেস চাকরি চুরি করেছে, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দফতরে দুর্নীতি হয়েছে। অভিষেকের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ রয়েছে। যে সরকার আমাকে জেল খাটিয়েছে, আমার সঙ্গীদের মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছে। তাদের সঙ্গে আপস করব? ভাবা যায়?’’ ভাঙড়ের বিধায়ক জানিয়েছেন, বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস কারও কথাতেই তাঁদের দল চলে না। স্বতন্ত্র দল হিসেবেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অন্য দিকে, কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতার মধ্যেও পুরুলিয়া ও কোচবিহার আসনে কাঁটা রয়েই যাচ্ছে। কোচবিহারে বামফ্রন্টের তরফে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবুর অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব বার্তা পাঠানোর পরেও কোচবিহারের কংগ্রেস প্রার্থী নিজের নাম প্রত্যাহার করেননি। এই পরিস্থিতিতে পুরুলিয়া আসন ছেড়ে দিতে নারাজ ফ ব। বামফ্রন্টের বৈঠকে এই অবস্থানই এ দিন তারা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছে। সূত্রের খবর, কোচবিহারে ফ ব প্রার্থীকেই সমর্থন করবে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। পুরুলিয়ায় বামফ্রন্টের সমর্থন পাবেন কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো। পরে প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘পুরুলিয়ায় বামফ্রন্ট প্রার্থী দিচ্ছে না। ওখানে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে।’’ ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁরা পুরুলিয়ায় প্রার্থী দিচ্ছেন। প্রাক্তন বিধায়ক ধীরেন মাহাতোকে ওখানে প্রার্থী করছে ফ ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement