এমকে স্ট্যালিন (বাঁ দিকে) এবং কমল হাসন। —ফাইল চিত্র।
টালবাহানার অবসান। তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস এবং এমকে স্ট্যালিনের মধ্যে আসন বোঝাপড়া প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র একটি সূত্র মারফত এমনই জানা গিয়েছে। জোটে থাকছেন কমল হাসনও। তবে তাঁর দল ‘মাক্কাল নেধি মইয়ম’ (এমএনএম) লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। জোটের শর্ত অনুযায়ী, ২০২৫ সালে তামিলনাড়ুর একটি রাজ্যসভা আসনে কমলের দলের প্রার্থীকে সমর্থন জানাবে ডিএমকে এবং কংগ্রেস।
শনিবার চেন্নাইয়ে ডিএমকে প্রধান তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের সঙ্গে বৈঠক করেন কমল। বৈঠকের পর এই অভিনেতা-রাজনীতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমরা লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করছি না। কিন্তু ডিএমকের নেতৃত্বাধীন জোটকে সার্বিক ভাবে সমর্থন করছি।” একই সঙ্গে কমল জানান, কোনও পদের জন্য নয়, দেশের স্বার্থে তিনি এই জোটে যোগ দিয়েছেন। ডিএমকে সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই নেতার বৈঠকে স্থির হয়েছে, তামিলনাড়ুর ৩৯টি লোকসভা আসনে তো বটেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরির একটি আসনেও জোটপ্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে যাবেন কমল।
বিরোধী জোট সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে আনুষ্ঠানিক ভাবে জোটের কথা ঘোষণা করতে পারে ডিএমকে এবং কংগ্রেস। ওই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, রাজ্যের মোট ৩৯টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১০টিতে লড়াই করবে কংগ্রেস। সিপিএম, সিপিআই এবং দলিত সংগঠন ভিসিকে লড়াই করবে দু’টি করে আসনে। ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ এবং কেডিএমকে— এই দু’টি আঞ্চলিক দলকে একটি করে আসন ছাড়ছে ডিএমকে। ভাইকোর দল এমডিএমকে-ও একটি আসনে লড়াই করবে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন ন’টি দলের জোটের অন্যতম শরিক ছিল কংগ্রেস। দাক্ষিণাত্যের ওই রাজ্যের ৩৯টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৮টিতেই জিতেছিল ওই জোট। বিজেপির তৎকালীন সহযোগী এডিএমকে জিতেছিল একটি আসনে। বছর কয়েক আগেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ছেড়েছে এডিএমকে। দলের একমাত্র সাংসদ আর রবীন্দ্রনাথকে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে বহিষ্কার করেছেন এডিএমকে প্রধান ইকে পলানীস্বামী।
পাঁচ বছর আগে ওই লোকসভা ভোটে ডিএমকে ২০, কংগ্রেস ন’টি আসনে লড়েছিল। সিপিএম, সিপিআই এবং দলিত সংগঠন ভিসিকে লড়েছিল দু’টি করে লোকসভা কেন্দ্রে। ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, এমডিএমকে, আইজেকে এবং কেএমডিকের ভাগে পড়েছিল একটি করে আসন। একমাত্র থেনি আসনটিতে হেরেছিলেন ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোটের কংগ্রেস প্রার্থী।
গত ডিসেম্বরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় কমলের উপস্থিতির পরেই জল্পনা দানা বেঁধেছিল, তাঁর দল ‘মাক্কাল নেধি মইয়ম’ (এমএনএম) বিজেপি বিরোধী জোটে যোগ দিতে পারে। প্রসঙ্গত, জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা কমল ২০১৮ সালে নিজের দল এমএনএম গড়েছিলেন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তামিলনাড়ুর ৩৯টি আসনের মধ্যে ৩৭টিতে প্রার্থী দিলেও একটিও জেতেনি কমলের দল। পেয়েছিল সাকুল্যে সাড়ে তিন শতাংশ ভোট। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে কোয়ম্বত্তূর দক্ষিণ কেন্দ্রে কমল লড়ে হাজার দেড়েক ভোটে এডিএমকে-বিজেপি জোটের প্রার্থীর কাছে হেরে গেলেও পেয়েছিলেন প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট। তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়েছিলেন ডিএমকে-কংগ্রেস-বাম জোটের প্রার্থীকে। সম্প্রতি ‘সনাতন ধর্ম’ বিতর্কে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিনের পুত্র উদয়নিধির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কমল হাসন। লোকসভা ভোটের আগে এই জনপ্রিয় অভিনেতা বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় যোগ দেওয়ায় তামিলনাড়ুতে তার ‘প্রভাব’ পড়বে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।