নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
স্বাধীনতা সংগ্রামে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর ‘নেতিবাচক’ ভূমিকা নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষে বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছিল কংগ্রেস। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজ্যে দলিতদের উপর আক্রমণের ঘটনা এবং সম্প্রতি ইডির হাতে আদিবাসী নেতা তথা ঝাড়খণ্ডের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের গ্রেফতারি নিয়ে কংগ্রেস বলেছিল, মোদী সরকার আদিবাসী এবং অনগ্রসর শ্রেণির বিরোধী। বুধবার রাজ্যসভায় বাজেট বক্তৃতার উপর আলোচনা করতে গিয়ে এই দুই প্রসঙ্গ টেনেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ব্রিটিশদের চালু করে যাওয়া নানান বন্দোবস্ত বছরের পর বছর টিকিয়ে রাখা নিয়েই রাজ্যসভায় কংগ্রেসকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘‘আমি এই প্রশ্ন এখানে তুলব না যে, কংগ্রেসের জন্ম কে দিয়েছিল। কিন্তু কতগুলো প্রশ্ন তুলতে চাই, যাতে স্পষ্ট হয়ে যাবে কারা আসলে ব্রিটিশদের তাঁবেদারি করেছিল।’’ এর পরেই এক, দুই, তিন করে কংগ্রেসের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন মোদী। বলেন, ‘‘কারা ব্রিটিশদের চালু করা দণ্ডবিধি (পেনাল কোড) টিকিয়ে রেখেছিল? কেন ব্রিটিশ ঘরানা মেনে বিকেল পাঁচটায় বাজেট অধিবেশন হত? কেন ‘রাজপথ’-এর নাম ‘কর্তব্য পথ’ করতে এত দিন অপেক্ষা করতে হল? কেন আন্দামান-নিকোবরে ব্রিটিশদের নিশান জ্বলজ্বল করছে? কেন তা মুছে ফেলা যায়নি? কোন মানসিকতা থেকে ভারতের আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে গুরুত্ব না-দিয়ে ইংরেজিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে?’’
এর পরেই মোদী চলে যান তফসিলি জাতি, জনজাতি ও আদিবাসী প্রসঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কংগ্রেস এখন অনগ্রসর শ্রেণি নিয়ে বড় বড় কথা বলছে! ভাবলেও অবাক লাগে।’’ এর পরেই স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জওহরলাল নেহরুর প্রসঙ্গ টানেন মোদী। তাঁর বক্তৃতা উদ্ধৃত করে মোদী বলেন, ‘‘নেহরুজি এক বার দেশের সব মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছিলেন, ‘আমি সংরক্ষণের (জাতিগত) বিরুদ্ধে। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ তো নৈব নৈব চ। তাতে সরকারি কাজের গতি কমে যাবে।’’’ এর পর মোদী বলেন, ‘‘তাই আমি বলি, কংগ্রেস জন্মগত ভাবে এসটি, এসসি, ওবিসিদের বিরুদ্ধে।’’ মোদী নিজে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত। লোকসভার বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘‘এই তো এক জন ওবিসি দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু ওরা দেখতে পাচ্ছে না।’’ বুধবার একদা কংগ্রেস সভাপতি সীতারাম কেশরীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, ‘‘সীতারাম কেশরী ছিলেন অনগ্রসর শ্রেণির। কিন্তু আমরা দেখেছিলাম, তাঁকে কী ভাবে চ্যাংদোলা করে ফুটপাথে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।’’ ২০০০ সালে সীতারামকে সরিয়েই কংগ্রেস সভানেত্রী হয়েছিলেন সনিয়া গান্ধী। বর্তমান কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও দলিত শ্রেণিভুক্ত।
কংগ্রেসকে আক্রমণের পাশাপাশি তাঁর নিজের আমলে কী কী হয়েছে সেই প্রসঙ্গও তোলেন মোদী। বলেন, ‘‘রামনাথ কোবিন্দের মতো এক জন দলিতকে আমরাই রাষ্ট্রপতি করেছিলাম। তার পর আজকে এক জন আদিবাসী মহিলা দেশের রাষ্ট্রপতি। আর সেই আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে বিরোধীরা কতই না কদর্য আক্রমণ করেছেন। সে সব ভাবলে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়।’’ অনেকের মতে, নাম না-করে বাংলার তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী অখিল গিরির কথাই বলতে চেয়েছেন মোদী।