সন্দেশখালিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি: পিটিআই।
লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে বাংলায় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের ডাকা বৈঠকেও উঠে এল সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। বস্তুত, সন্দেশখালিতে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে তুলোধনা করল তারা। পাশাপাশি ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ নিয়েও জেলাশাসকদের ‘সাবধান’ করা হল।
রবিবারই কলকাতায় এসেছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। শহরে রয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। সোমবার দুপুরে কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠকে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে গত কয়েক দিন ধরে যে ঘটনা ঘটেছে, যে সমস্ত অভিযোগ উঠে এসেছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর, সেখানে বসিরহাটের পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। জানানো হয়েছে, সন্দেশখালিতে বোমাবাজি, ভয় দেখানো, মহিলা নির্যাতন এবং অন্যান্য যে অশান্তির অভিযোগ সামনে এসেছে, তা যদি ভোটের প্রাক্কালে আসে, তখন কমিশন সেটা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না। প্রয়োজনে সিনিয়র পুলিশ আধিকারিকদের সরানোর আগে দু’বার ভাববে না তারা। উল্লেখ্য, রবিবার রাতেই সন্দেশখালিতে পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। রবিবার বেড়মজুর থেকে জেলিয়াখানি— বিস্তীর্ণ এলাকায় রুট মার্চ করেছেন জওয়ানেরা।
কলকাতার একটি হোটেলে দুপুরের ওই বৈঠকে কমিশনের ফুল বেঞ্চ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে। বিশেষত, যে জায়গাগুলি স্পর্শকাতর সেগুলিতে যেন বিশেষ নজর দেওয়া হয়। কমিশনের একটি সূত্রে খবর, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর দিনাজপুর থেকে বেশ কয়েকটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফুল বেঞ্চ অসন্তুষ্ট। পুলিশ যেন কার্যকরী পদক্ষেপ করে, এই মর্মে একটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জামিন অযোগ্য ধারায় যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের যাতে প্রথম দফা ভোটের আগেই ধরা হয়, তা নিয়ে পুলিশকে আলাদা করে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এ-ও জানা গিয়েছে, জেলাশাসকদেরও বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে কমিশন জানতে চায়, কেন এই রকমের ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না? হিংসা বন্ধে প্রশাসন কী পদক্ষেপ করছে, তা কমিশনকে জানানোর কথা বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, কমিশনের ফুল বেঞ্চ জেলাশাসকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘সব নজর রাখা হচ্ছে। আমরা চুপ করে বসে থাকব না।’’ পাশাপাশি লোকসভা ভোটের সময় যাতে কোনও ভাবেই গ্রিন পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের কোনও দায়িত্ব দেওয়া না হয়, সে ব্যাপারটিও সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ।
ভুয়ো ভোটারদের অভিযোগ প্রসঙ্গে হাওড়া জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের কড়া বার্তা দিয়েছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। কমিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে ভুয়ো ভোটার সংক্রান্ত নানা অভিযোগ আসছে। কেন এই সব অভিযোগ উঠে আসছে? প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন।’’ এর পর হাওড়ার পুলিশ সুপারের কাছে সমস্যার কথাও জানতে চাওয়া হয়। ফুল বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘কী সমস্যা আছে এখনই বলুন? আমরা কিন্তু এর পরে আর সময় দেব না।’’
কমিশন জানিয়েছে, গত নির্বাচনে যে সব জায়গায় অশান্তি হয়েছে, এ বারের ভোটে ওই জায়গাগুলিতে যাতে আর তার পুনরাবৃত্তি না-হয় সেটা খেয়াল রাখা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের লক্ষ্যে নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগেই আগাম কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট করানোর লক্ষ্যেই ওই পদক্ষেপ। আগামী ৭ মার্চ আরও ৫০ কোম্পানি বাহিনী আসবে রাজ্যে। বাহিনীকে পর্যায়ক্রমে বুথে বুথে টহল দিতে বলা হয়েছে। অতিস্পর্শকাতর এলাকায় একাধিক বার রুট মার্চ করবে বাহিনী।