অগ্নিমিত্রার (বাঁ দিকে) ডিজ়াইন করা পোশাকে অন্যদের সঙ্গে জুনও (ডান দিকে)। কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে। —ফাইল চিত্র ।
এ বার মেদিনীপুরের ভোটযুদ্ধে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে এই ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’র বাইরে প্রায় দু’দশকের বন্ধুত্ব দু’জনের— তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া এবং বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের।
জুন অভিনেত্রী। অগ্নিমিত্রা ফ্যাশন ডিজ়াইনার। কাজের সূত্রেই পরিচয় এবং তার পরে বন্ধুত্ব। এক সময়ে ডিজ়াইনার অগ্নিমিত্রার শো-স্টপার ছিলেন অভিনেত্রী জুন। অগ্নিমিত্রার ডিজ়াইন করা পোশাক পরে কলকাতায় র্যাম্পে নজরও কেড়েছিলেন জুন।
সে দিনের কথা ভোলেননি কেউই। জুন বলছিলেন, ‘‘ব্যক্তিগত জীবন আর রাজনীতি, দুটো আলাদা। অগ্নি (অগ্নিমিত্রাকে এই নামেই ডাকেন) সব সময় আমার বান্ধবী থাকবে। ওকে কুড়ি বছর ধরে চিনি। অগ্নি যখন কেরিয়ার শুরু করেছে, এখনও মনে আছে, ওর জন্য মডেলিং করেছিলাম।’’ অগ্নিমিত্রাও বলছেন, ‘‘ঠিক। উনি আমার ফ্যাশন শোয়ে শো-স্টপার ছিলেন। আমার জন্য হেঁটেছেন (র্যাম্প)। সেই হিসেবে আমাদের পরিচিতি, বন্ধুত্বও।’’ বছর কয়েক আগে নিউটাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠান মঞ্চে তারকাদের সঙ্গে হেঁটেছিলেন পাচারকারীর হাত থেকে উদ্ধার হওয়া কয়েক জন তরুণী। সে দিন তাঁরা সবাই অগ্নিমিত্রার ডিজ়াইন করা পোশাকই পরেছিলেন। মঞ্চে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন, রূপম ইসলাম, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে ছিলেন জুনও।
দু’জনে সমবয়সি। প্রায় একই সময়ে কেরিয়ার শুরু করেছেন। রাজনীতিতেও আনকোরা থেকে প্রথম চেষ্টাতেই পৌঁছেছেন বিধানসভার অন্দরে। জুন মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক, অগ্নিমিত্রা আসানসোল (দক্ষিণ)-এর বিজেপি বিধায়ক। এখন মেদিনীপুরে দুই বন্ধুর লোকসভার লড়াইও যেন সৌজন্যের। ব্যক্তি আক্রমণ নেই, নেই কুকথা। অগ্নিমিত্রা বলছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি থেকে সৌজন্যবোধ চলে গিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এটা তো নীতি-আদর্শের লড়াই। শুধু নিজের স্বার্থে রাজনীতি করে গেলে আগামী প্রজন্মকে কী শেখাব? এই ভাষা-সন্ত্রাস, নোংরামো দেখলে তারা কি রাজনীতিতে আসবে? সুতরাং কিছুটা দায়িত্ব কিন্তু আমাদের উপরেও বর্তায়।’’
অগ্নিমিত্রা জুড়ছেন, ‘‘জুন মালিয়ার সঙ্গে আমার কোনও লড়াই নেই। আমার লড়াই তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে, ওদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে।’’ আর জুন বলছেন, ‘‘যুদ্ধক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ও আমার বিরোধী। আমি ভালই লড়াই দেব ওকে। আমি নিশ্চিত, ও-ও ওর সেরাটা দেবে। লড়াই হবে লড়াইয়ের মতোই।’’
দু’জনেরই অফুরন্ত প্রাণশক্তি। রোজ সকাল থেকে রাত, প্রচারে চরকিপাক খাচ্ছেন। জুন এখানকার বিধায়ক, মেদিনীপুরের মাটি তো তাঁর চেনা? রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা শোনাচ্ছেন, ‘‘আমার কাছে সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ চেনা। আর মেদিনীপুর তো পরিবার।’’
সে পরিবারে বন্ধুও আছে।