দেবেন্দ্র ফডণবীস। — ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে এ বার ইস্তফা দিতে চান দেবেন্দ্র ফড়ণবীস! বুধবার বিজেপি নেতৃত্বকে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি। এই মর্মে প্রস্তাবও পাঠিয়েছেন। যদিও দলীয় নেতৃত্ব ফড়ণবীসের প্রস্তাব নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি বলেই খবর। কিন্তু কেন তিনি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চাইছেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
২০১৯ সালের তুলনায় মহারাষ্ট্রে এ বার অনেকাটাই খারাপ ফল করেছে বিজেপি। এই রাজ্যে বিজেপির ২৩ জন সাংসদ ছিলেন। সেটাই নেমে দাঁড়াল নয়ে। মরাঠাভূমে বিজেপি বিপর্যয়ের দায় নিয়েই উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চান, এমন কথাই জানালেন ফড়ণবীস। ভোটের ফলপ্রকাশের পর সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের সিদ্ধান্তের কথা বলেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
ফড়ণবীস বলেন, ‘‘সামনেই বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। সেই নির্বাচনের কথা মাথা রেখে এখন থেকেই আমি দলের সাংগঠনিক কাজে মন দিতে চাই। যাতে বিধানসভায় দলের পারফরম্যান্স আশানুরূপ হয়। সেই কারণেই রাজ্য সরকারের পদ থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছি।’’
মঙ্গলবারই ঠিক হয়েছিল বুধবার পর্যালোচনা বৈঠকে বসবেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতৃত্ব। সেই বৈঠকে ফ়ড়ণবীস ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের শীর্ষ বিজেপি নেতারা। এই বৈঠকের মূল বিষয় ছিল, দলের কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা।
এ বারের নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের মহাযুদ্ধে বড় জয় পেল বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’। অনেকটা পিছিয়ে গেল বিজেপি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৪৮ আসনের মহারাষ্ট্রে বিজেপি জিতেছে ন’টি আসনে, একনাথ শিন্ডের শিবসেনা সাতটি আসন এবং এনসিপির অজিত পওয়ার গোষ্ঠী একটি আসনে জয়লাভ করেছে। অন্য দিকে, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস পেয়েছে ১৩টি আসন, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ন’টি, শরদ পওয়ারের এনসিপি সাতটি আসনে জয়লাভ করেছে। নির্দল প্রার্থী জিতেছেন একটি আসনে।
মোট ৪৮ আসনের এই রাজ্য লোকসভার আসনসংখ্যার নিরিখে উত্তরপ্রদেশের ঠিক পরেই। ২০১৯ সালে এই রাজ্যে সর্বাধিক আসন জিতেছিল বিজেপি। মোট ২৩ আসনে জিতেছিলেন পদ্মপ্রার্থীরা। দ্বিতীয় স্থানে ছিল অবিভক্ত শিবসেনা। তারা পেয়েছিল ১৮টি আসন। তৃতীয় স্থানে এনসিপি। তারা পেয়েছিল চারটি আসন। এ ছাড়া কংগ্রেস, এআইএমআইএম এবং নির্দল পেয়েছিল একটি করে আসন। এ বার সেই ২৩ সংখ্যাই নেমে এল নয়ে।
মহারাষ্ট্রে দল ভেঙেছে, আমূল বদলে গিয়েছে জোটের কাঠামোও। ২০১৯ সালে যে শিবসেনার হাত ধরে মহারাষ্ট্রে লড়াই করেছিল বিজেপি, এখন তা আড়াআড়ি দু’টুকরো। বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়েছিলেন উদ্ধব। কিন্তু ফল বেরোতেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিজেপির মতভেদ চূড়ান্ত আকার নেয়। উদ্ধব এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে এসে হাত মেলান কংগ্রেস এবং এনসিপির সঙ্গে। তৈরি হয় ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’। উদ্ধবকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপিকে কোণঠাসা করে দেয় মহারাষ্ট্রের সেই বেনজির জোট। কিন্তু মহা-আকাশে দ্রুত পটপরিবর্তন হয়। আচমকা মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য তথা একদা বালাসাহেবের ‘ডান হাত’ একনাথ শিন্ডে শিবির পাল্টান। সরকার পড়ে যায়। নতুন করে শিন্ডের নেতৃত্বে সরকার গড়ে বিজেপি। সেই সরকারে ফড়ণবীস ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী।