ভগবানগোলায় প্রচারে সিপিএম নেতা শতরুপ ঘোষ। — নিজস্ব চিত্র।
কোনও বুথে জুটেছিল দশ ভোট, কোথাও চার বা দুই। সিপিএমের অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র জুড়ে এমন কম-বেশি সাড়ে তিনশো বুথ আছে, যেখানে গত পঞ্চায়েত ভোটে নির্বিচারে ‘ভোট লুট’ হয়েছিল। লোকসভা ভোট প্রচারের শেষলগ্নে সেই বুথগুলিতে বিশেষ নজর দিয়েছে সিপিএম। শতরূপ ঘোষ, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, ধ্রুবজ্যোতি সাহার মতো দলের তরুণ প্রজন্মের নেতাদের ওই সব বুথে পাঠিয়ে কর্মীদের সাহস জোগাচ্ছে সিপিএম। ভোট লুটের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খানের দাবি, ওই আসনে তিন লক্ষের বেশি ভোটে জিতবেন তিনি।
মুর্শিদাবাদ আসনে বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। শুধু সম্মানের যুদ্ধই নয়, ত্রিমুখী সেই আসনে সেলিমের জয়ের সম্ভাবনা আছে বলেও মনে করছে বামেরা। তবে ভোট লুট হলে জয় অধরা থেকে যেতে পারে— এমন আশঙ্কা আছে তাদের। তাই বুথরক্ষায় জোর দিচ্ছে সিপিএম।
দলের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লার অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেক জায়গাতেই সন্ত্রাস, ভোট লুট হয়েছে। হরিহরপাড়ায় ২৬, ডোমকলে ৫০, রানিনগরের ওড়শি, লোচনপুর আর পাহাড়পুর পঞ্চায়েতে ৭২-৭৩, জলঙ্গিতে ২৬-২৭, মুর্শিদাবাদের কম-বেশি ৬০, ভগবানগোলায় ৬৫-৬৬, করিমপুরে কমপক্ষে ৭০টি বুথে আগাগোড়া ছাপ্পা ভোট হয়েছিল। এ বার তার পুনরাবৃত্তি হতে দেব না। বাম-কংগ্রেস এক সঙ্গে লড়াই করছে।’’ যদিও তৃণমূল প্রার্থীর দাবি, ‘‘কিছু বুথে অনভিপ্রেত কিছু ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, তবে সেই সংখ্যা কখনই ৩৫০ হতে পারে না। ওরা যা ইচ্ছা বলে যাক।’’
প্রার্থী হওয়ার পর থেকে মুর্শিদাবাদে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন সেলিম। মীনাক্ষী, শতরূপ, ধ্রুবজ্যোতির মতো নেতারাও ঘাম ঝরাচ্ছেন। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব বুথগুলিতে যাচ্ছেন বলে দলীয় কর্মীদের ভয় ভাঙছে। লালগোলা, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুর-এলাকা, মুর্শিদাবাদ, ভগবানগোলা বিধানসভার বিস্তীর্ণ জায়গায় ঘুরেছেন শতরূপ।’’ লোকসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় নিজেদের উদ্যোগে সব বুথে কমিটি গড়ে রেখেছিল সিপিএম। জামির জানান, এখন বাম-কংগ্রেসের যৌথ বুথ কমিটি গড়া হয়েছে। তাহেরের দাবি, ‘‘এই জেলায় কংগ্রেসের ভোট কখনওই সিপিএমে যাবে না। সিপিএম জমানায় কংগ্রেস কর্মীরা অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন।’’
পঞ্চায়েত ভোটে নিচুতলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে জোট হলেও জেলা পরিষদে বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা হয়নি। ফলপ্রকাশের পরে অবশ্য দেখা যায়, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত লালগোলায় জেলা পরিষদের তিনটি আসনের মধ্যে দু’টিতে, ভগবানগোলায় ছ’টির মধ্যে পাঁচটিতে, রানিনগরে ছ’টির মধ্যে তিনটিতে, ডোমকলে তিনটির মধ্যে দু’টিতে এবং জলঙ্গিতে তিনটি জেলা পরিষদ আসনের সব ক’টিতেই বাম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট তৃণমূলের থেকে বেশি। অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদ বিধানসভা, হরিহরপাড়া এবং করিমপুরে জোটের থেকে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল। কিছু আসনে অনেক পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিপিএম।