(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের প্রচার পর্বের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে সাক্ষাতের সময় চাইলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে! বিতর্কে আহ্বান জানাতে নয়, কংগ্রেসের ইস্তাহারের (দলের তরফে যাকে ‘ন্যায়পত্র’ বলা হচ্ছে) প্রতিশ্রুতিগুলি ব্যাখ্যা করতে!
মোদীকে পাঠানো দু’পাতার চিঠিতে খড়্গে লিখেছেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ইস্তাহারে লেখা নেই এমন বিষয়গুলি সম্পর্কে আপনার উপদেষ্টারা আপনাকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। তাই ‘ন্যায়পত্র’ ব্যাখ্যা করার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে আপনার কাছে সময় চাইছি।’’ কংগ্রেস সভাপতির দাবি, তাঁদের ইস্তাহার পাঁচটি ন্যায়ের উপরে দাঁড়িয়ে— মহিলা, যুবসমাজ, কৃষক, শ্রমিক এবং ভাগিদারি (জাতভিত্তিক জনসংখ্যা) অনুযায়ী ক্ষমতায় অংশগ্রহণের ন্যায়ের দাবি।
গত নভেম্বরে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের সময় জাতগণনার দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে চারটি বড় জাত হল, মহিলা, তরুণ, কৃষক ও গরিব। এর পরেই রাহুল তাঁর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় ‘পাঁচ ন্যায়ে’র কথা বলেছিলেন। রাহুলের সেই ন্যায়ের অঙ্গীকারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তৈরি হয়েছে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহার।
কিন্তু তার পর থেকেই মোদী-সহ প্রথম সারির বিজেপি নেতারা ধারাবাহিক ভাবে ইস্তাহারের প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসকে নিশানা করছেন। গত রবিবার মোদী রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ায় বিজেপির সভায় বলেন, ‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অতীতে বলেছিলেন, দেশের সম্পদে সর্বাগ্রে অধিকার মুসলিমদের। সেই কারণেই সমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। যাতে দেশবাসীর কষ্টার্জিত অর্থ মুসলিম ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায়।’’ এর পরে সোমবার উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির উপরে রয়েছে। ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে। কাদের বিলিয়ে দেবে, তা আপনারা জানেন।’’
বুধবার, দ্বিতীয় দফার প্রচারের শেষ দিনে ছত্তীসগঢ়ের সরগুজায় বিজেপির সভায় ভারতীয় জীবনবিমা নিগম (এলআইসি)-এর বিজ্ঞাপনী বার্তা হাতিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কংগ্রেসের লুটের মন্ত্র হল ‘জিন্দেগি কে সাথ ভি, জিন্দেগি কে বাদ ভি’ (জীবনের সঙ্গে, জীবনের পরেও)। কংগ্রেসের লক্ষ্য হল, আপনি যত দিন বেঁচে থাকবেন, আপনার থেকে কর আদায় করবে। আপনার মৃত্যুর পর আপনার পুত্র-কন্যাদের থেকে আপনারই রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর উত্তরাধিকার করের বোঝা চাপিয়ে দেবে।’’
বিরোধী নেতাদের মতে, প্রথম দফায় প্রত্যাশিত ফল হয়নি বুঝেই দ্বিতীয় দফার ভোটপর্বের আগে থেকেই সরাসরি সাম্প্রদায়িকতার প্রচারে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী। হিন্দু মহিলাদের মধ্যে মুসলিম তথা কংগ্রেস সম্পর্কে আতঙ্ক তৈরি করার কৌশল নিয়েছেন। মোদীকে লেখা চিঠিতে সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছেন খড়্গেও। লিখেছেন, ‘‘প্রথম পর্বে বিজেপির ফলাফল হতাশাজনক হয়েছে বুঝতে পেরেই আপনি এবং আপনার সহকর্মীরা এমন ভাষা প্রয়োগ করছেন। আমরা এতে বিস্মিত নই। গরিবদের যখন খাবার এবং লবণের উপর জিএসটি দিতে হয়, আপনার সরকার ধনী কর্পোরেটদের কর মকুব করে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে। তাই, যখন আমরা কথা বলি ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য, আপনি ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষয়টিকে হিন্দু এবং মুসলিমের মধ্যে বিভাজিত করতে চান।’’