গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কন্টাইয়ে কী হবে? ‘কন্টাই’ অর্থাৎ ‘কাঁথি’। স্থানীয় স্তরে কাঁথিতে ইংরেজপ্রদত্ত ওই নামেই এখনও ডাকেন অনেকে। সাকিন জানতে চাইলেও বলেন, ‘‘কন্টাই!’’ সেই কন্টাইয়ের ‘কণ্টক’ (কাঁটা) নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্যের সাবেক শাসকদল সিপিএম।
বিজেপি তাদের প্রথম দফার প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছিল ২ মার্চ। ওই দিন বাংলার ২০টি আসনে পদ্মপ্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছিল তারা। সেই তালিকাতেই কাঁথিতে প্রার্থী করা হয়েছিল সৌমেন্দু অধিকারীকে। যিনি পারিবারিক সম্পর্কে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই। তার পরে ১০ মার্চ ব্রিগেডের ‘জনগর্জন সভা’ থেকে একসঙ্গে ৪২টি কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে তৃণমূল। কাঁথিতে তারা প্রার্থী করেছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিককে।
সৌমেন্দু এবং উত্তম যখন প্রায় দেড় মাস প্রচার সেরে ফেলেছেন, তখনও বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণা হল না কাঁথিতে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দিন কয়েক আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, বামেদের প্রার্থী দেওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। কাঁথির প্রশ্নে সেলিমের ইঙ্গিত ছিল, ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস লড়বে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করেনি ওই লোকসভা কেন্দ্রে। কংগ্রেসের ‘কাঁটায়’ বিদ্ধ হয়ে ঘরেই অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে বামকর্মীদের। যা নিয়ে বিরক্তি গোপন করছেন না সিপিএম নেতারাও।
জেলা সিপিএমের সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি গোটা পরিস্থিতিকে ‘অস্বস্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন। নিরঞ্জন বলেন, ‘‘কাঁথি লোকসভার প্রতিটি বিধানসভায় আমাদের তিন বার করে বৈঠক হয়েছে। লোকসভা কমিটিরও তিন বার বৈঠক হয়েছে। দেওয়াল চুন করা হয়ে গেলেও নাম লেখা যাচ্ছে না। কর্মীরাও কাজে নামতে পারছেন না।’’ তিনি জানিয়েছেন, ভোটঘোষণার পর কর্মীরা গণসংযোগ শুরু করলেও প্রার্থীঘোষণা না হওয়ার কারণে তা থমকে গিয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে না? নিরঞ্জন জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত আমরা রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তাঁরা জানিয়েছেন, দু’তিন দিনের মধ্যে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে যাবে। এক জন মহিলা উকিলকে প্রার্থী করা হবে বলে খবর পেয়েছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। যদিও তিনি জেলার কেউ নন বলেই প্রাথমিক ভাবে জানেন তাঁরা। নিরঞ্জন এ-ও মেনে নিয়েছেন, এর ফলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা তৈরি করতে নতুন করে পরিশ্রম করতে হবে।
পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে ফ্রন্টশরিক সিপিআই প্রার্থী দিয়েছে। সেখানে প্রার্থী দিয়েও স্থগিত করার কথা মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন দিল্লির তরফে প্রদেশ কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক জিএ মির। যদিও রবিবার রাতে কংগ্রেসের তরফে সারা দেশের যে প্রার্থিতালিকা একত্রে প্রকাশ করা হয়েছিল, তাতে ঘাটালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে পাপিয়া চক্রবর্তীর নাম রয়েছে। যা নিয়ে ধন্দে বাম নেতৃত্বের একটি অংশ। তবে কাঁথি এবং ঘাটালে ভোট ২৫ মে। ফলে এখনও প্রার্থী দেওয়ার ঢের সময় রয়েছে বলে দাবি বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের অনেকের।
রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের ভাবগতিক দেখে স্পষ্ট মালুম হচ্ছে যে, তাঁরা দুই মেদিনীপুরকে হিসেবের মধ্যেই রাখতে চান না। প্রার্থী দেওয়া-না দেওয়ার বিষয়ে ‘গয়ংগচ্ছ’ মনোভাব তারই প্রতিফলন। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ নিচুতলার বামকর্মীরা।