কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়া নিয়ে মুখ পুড়েছে কলকাতা পুরসভার। কিন্তু সেই গার্ডেনরিচ থেকেই শেষ অর্থবর্ষে সর্বোচ্চ রাজস্ব দিয়েছে!
সদ্যসমাপ্ত অর্থবর্ষে প্রায় ১২১০ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় করেছে পুরসভা। সেই আয়ের বড় অংশ এসেছে কলকাতা পুরসভার বরো নম্বর ১৫ গার্ডেনরিচ থেকে। সেই বরোর অন্তর্গত কলকাতা পুরসভার ১৩৩, ১৩৪, ১৩৫, ১৩৬, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯ ১৪০ এবং ১৪১ নম্বর ওয়ার্ড। এই ন’টি ওয়ার্ড থেকে ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে পুরসভার আয় হয়েছে ১১ কোটি ৭০ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকারও বেশি। ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে গার্ডেনরিচ এলাকা থেকে পুরসভার আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ কোটি ২ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা। শতাংশের বিচারে এই বৃদ্ধির হার প্রায় ১৬.৭৭ শতাংশ।
কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত এক বছরে ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি বছরভর শিবির করা হয়েছে। জোকা, গার্ডেনরিচের মতো সংযুক্ত এলাকাগুলিতে বহু বাড়ি-জমি সম্পত্তিকর মূল্যায়নের আওতায় আনা হয়েছে। অনেক নতুন সম্পত্তির মিউটেশনও হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সম্পত্তির পুনর্মূল্যায়ন করে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী কর ধার্য হয়েছে। সব মিলিয়ে একাধিক পদক্ষেপের জেরেই এই আয়বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। যে এলাকায় সবচেয়ে বেশি নির্মাণের অভিযোগ, সেখান থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়ে আশ্বস্ত কলকাতা পুরসভা। কারণ, বরো ১৫-র বেশির ভাগ ওয়ার্ডই কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা এলাকা কলকাতা বন্দরের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু গার্ডেনরিচকাণ্ডে যে ভাবে কলকাতা পুরসভার মুখ পুড়েছে, তাতে এমন ‘নজির’ ছোঁয়ার কথা প্রকাশ্যে বলতেও পারছেন না পুর আধিকারিকেরা। এমনকি, বহুতল ভেঙে পড়ার অস্বস্তির কারণেই মেয়র স্বয়ং গার্ডেনরিচ এলাকা থেকে রেকর্ড রাজস্ব আদায়ের কথা জানলেও তা তিনিও প্রকাশ্যে বলতে পারছেন না। তেমনই জানাচ্ছেন পুরসভার আধিকারিকদের একাংশ। তবে অন্য একাংশের আধিকারিকদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের আদর্শ আচরণবিধির কারণেই মেয়র এই প্রসঙ্গে কিছু বলেননি।
সম্প্রতি গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় তিন ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করেছে কলকাতা পুরসভা। গত ২২ মার্চ ঘটনার তদন্ত করতে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল পুরসভা। মোট আটটি বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার কমিটি ছ’টি বিষয়ের তদন্ত রিপোর্ট কলকাতা পুরসভার কমিশনার ধবল জৈনের কাছে জমা দেয়। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই ইঞ্জিনিয়ারদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, গার্ডেনরিচের ঘটনার পর এ বার বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়েই কড়াকড়ি করতে চাইছে রাজ্য সরকার। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের ১২৮টি পুর এলাকাতেই অবৈধ নির্মাণ রুখতে কিছু নির্দেশিকা পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কলকাতায় নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রেও একাধিক শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্ত না মানলে জরিমানার বন্দোবস্তও করা হয়েছে। সেগুলি সব পুরসভার ক্ষেত্রেই আরও কঠোর ভাবে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে পুর দফতরের। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে রাজ্যের অন্য যে কোনও জায়গায় বেআইনি নির্মাণের সমস্যাগুলি দূর হবে বলেই মনে করছে সরকার।